সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একদিনে ৪২৯ জনের সংক্রমণে নয়া রেকর্ড পুরুলিয়ায় (Purulia)। প্রথম ও দ্বিতীয় দুই পর্বের করোনা (Corona Virus) সংক্রমণ মিলিয়েই এই রেকর্ড (আগে গোটা জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল ৩১৯)। তাই বুধবার জেলা জুড়ে রামনবমী (Ram Navami 2021) উপলক্ষ্যে সমস্ত শোভাযাত্রা বাতিল করেছেন আয়োজকরাই। এদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে গোটা রাজ্যেই রামনবমীর শোভাযাত্রা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনা (COVID-19) কাঁটায় রামনবমীর শোভাযাত্রা বাতিল হয়ে যাওয়ায় হতাশ ‘গেরুয়া গড়’ বলে পরিচিত পুরুলিয়া। ফলে রামনবমীকে ঘিরে এই জেলায় উচ্ছ্বাসেও ভাটা পড়েছে। সেভাবে কেনাকাটাও হয়নি। ফলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যতেও মন্দা। তবে জেলার রাম–হনুমান মন্দিরগুলিতে পুজো হবে কোভিড বিধি মেনেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দু’হাজার ছুঁইছুঁই। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘অ্যাক্টিভ’ রোগীর সংখ্যা ১৯২৩। তার মধ্যে শহর পুরুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৪৪১। এদিন এই শহরে একদিনে সংক্রমণ হয় ৪১ জনের।
এইভাবে হু হু করে সংক্রমণ বাড়তে থাকার কারণেই রামনবমীর সমস্ত শোভাযাত্রা বন্ধ করেন উদ্যোক্তারা। এবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পুরুলিয়া জেলা কমিটি এই জেলার তিন পুর শহর পুরুলিয়া, ঝালদা, রঘুনাথপুর ও রেলশহর আদ্রা ছাড়াও কুড়িটি ব্লকেই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এই জেলায় বিধানসভা ভোট হয়ে গেলেও নির্বাচনকে মাথায় রেখেই গেরুয়া সংগঠন গুলি প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই বিপুল জমায়েত করার পরিকল্পনা নেয়। এই জমায়েতের জন্য জেলা জুড়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বিজেপিও। কিন্তু যেভাবে এই জেলায় ফি দিন সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙছে তাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের শোভাযাত্রার সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে দেয়। শোভাযাত্রা বাতিল করে দেয় পুরুলিয়া রামনবমী কমিটিও। এই কমিটির ব্যানারে মূলত তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এই শোভাযাত্রা করত।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে ভারচুয়াল প্রচারে জোর বিজেপির, চারটি জনসভা থেকেই ৬৯ আসনে বার্তা দেবেন মোদি]
তবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ শোভাযাত্রা বাতিল করলেও তাঁদের সদস্যরা জেলা জুড়ে রাম–হনুমান মন্দির গুলিতে কোভিড সচেতনতার কাজে যুক্ত রয়েছেন। মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে গোল দাগও কেটে দিয়েছেন তাঁরা। বুধবার পুজোর সময় মাস্কও বিলি করা হবে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক পিন্টু বাউরি বলেন, “যেভাবে কোভিডের সংক্রমণ এই জেলায় বাড়ছে সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা শোভাযাত্রা বাতিল করলাম। তবে মন্দিরে–মন্দিরে কোভিড সচেতনতায় আমাদের কাজ চলবে।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই এই জেলায় রামনবমীকে ঘিরে উচ্ছ্বাস, উৎসাহ বাড়ে। এই জেলায় বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের হাত ধরে বিজেপির শক্তি বাড়ার পরেই রামনবমীকে ঘিরে রীতিমত বড়সড় উৎসবের চেহারা নেয় জেলায়। এবার সেই উৎসবেই করোনা কাঁটা। পুরুলিয়া রামনবমী কমিটির সভাপতি তথা শহর পুরুলিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সিং বলেন, “রামনবমীর শোভাযাত্রায় আমাদের ব্যাপক আয়োজন ছিল। কিন্তু সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় কর্মসূচি বাতিল করেছি।”
এদিন কোভিড সচেতনতায় ঝালদায় পথে নামেন মহকুমাশাসক সুবর্ণ রায়। তিনি নিজে পথ চলতি মানুষজন সহ দোকানের ক্রেতা, বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক না থাকায় তা পরিয়ে দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঝালদা এক নম্বর ব্লকের বিডিও, ঝালদা থানার আইসি। কেন মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে তা বোঝানা হয়। সঙ্গে চলে মাইকেও প্রচার। এছাড়া টোটো, অটো, বাইক, ট্রেকারের যাত্রীদের সচেতন করা হয়। তার আগে মহকুমাশাসক বিডিও, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, থানার আধিকারিকদের নিয়ে করোনা মোকাবিলায় বৈঠক করেন। সেফ হোম ও স্যানিটাইজ প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়। এদিকে জেলায় আবার নতুন করে চারটি সেফ হোম করা হয়েছে। দেবেন মাহাতো গভার্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাস, ঝালদার কর্মতীর্থ, রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়ের যুব আবাস ও কাশীপুরের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সংক্রমণ ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় পুরুলিয়া পুরসভা, জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর পৃথক পৃথক ভাবে তিনটি কন্ট্রোলরুম খুলেছে।
- পুরুলিয়া পুরসভার কন্ট্রোলরুমের নম্বর – ৮৯৭২৮৭৭৮২২
- জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুম – ০৩২৫২–২২৩৬৭৫
[আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনার দাপট আরও বাড়ল, সর্বকালের রেকর্ড গড়ে দৈনিক সংক্রমণ ১০ হাজার ছুঁইছুঁই]