সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একজনের ব়্যাঙ্কিং এক। অন্যজনের ২৯।
একজনের বয়স ৩২। আরেকজনের ১৮। প্রথমজন ম্যাগনাস কার্লসেন। দ্বিতীয়জন ভারতের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ।
অভিজ্ঞতা-বয়স ও ব়্যাঙ্কিংয়ের এই বিস্তর পার্থক্য, ব্যবধানকে প্রায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ফেলেছিলেন ভারতের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। চা পানের সময়ে ঠোঁট ও পেয়ালার মধ্যে যে দূরত্ব থেকে যায়, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন খেতাব ও প্রজ্ঞার মাঝেও সেই একই ব্যবধান রয়ে গেল। প্রজ্ঞা হেরে গেলেও তাঁর লড়াই মন জিতে নিল সবার। শাহরুখ খান অভিনীত ‘বাজিগর’ ছবির সেই জনপ্রিয় সংলাপই হয়তো মনে করিয়ে দিলেন প্রজ্ঞা, ”হার কর জিতনে ওয়ালে কো বাজিগর কহতে হে।” দিনান্তে প্রজ্ঞানন্দই বাজিগর। তিনি হেরে গেলেও যেন জিতলেন।
৬৪ খোপের পৃথিবীতে বহু যুদ্ধের সৈনিক ম্যাগনাস কার্লসেন জিতলেন প্রজ্ঞারই ছোট্ট একটা ভুলের সুযোগ নিয়ে। টাইব্রেকারে প্রথম র্যাপিড রাউন্ডের একটি চাল দিতে অনেকটাই সময় নিয়ে ফেলেন প্রজ্ঞানন্দ। একটা চালে সাড়ে ৬ মিনিটের কাছাকাছি সময় নেওয়ার ফলে প্রজ্ঞানন্দ চলে যান ব্যাকফুটে। তারই সুযোগ নেন কার্লসেন। দ্বিতীয় টাইব্রেক ড্র হওয়ায় বিশ্বচ্যাম্পয়ন হয়ে যান কার্লসেন। প্রজ্ঞা হার মানলেও এই লড়াই যথেষ্ট গৌরবের। এই লড়াই দেখার পরে অনেকেই প্রজ্ঞাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বলেছেন, ফাইনালে হার মানলেও তিনিই ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন। যুজবেন্দ্র চাহালের মতো আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার লিখেছেন, উচ্চ যেথা শির। তোমার জন্য গোটা দেশ গর্বিত।
[আরও পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে স্বপ্নভঙ্গ প্রজ্ঞানন্দর, টাইব্রেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কার্লসেন]
অতীতে প্রজ্ঞা হারিয়েছিলেন ম্যাগনাস কার্লসেনকে। বিশ্বকাপ দাবার ফাইনালের আগে প্রজ্ঞানন্দের কাছে পাঁচবার হারও মানেন কার্লসেন। ফলে এদিনের ফাইনালে প্রজ্ঞানন্দ জিতলেও তা মোটেও অঘটন হত না।
দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লসেন ও প্রজ্ঞানন্দ মুখোমুখি হওয়ার আগে দু’ জনের সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯ বার। ক্লাসিক্যাল দাবায় মুখোমুখি হয়েছিল কার্লসেন ও প্রজ্ঞা। সেই ম্যাচে অবশ্য হয়নি জয়-পরাজয়। ম্যাচ ঢলে পড়েছিল ড্রয়ের কোলে। ১৮ বারের লড়াইয়ে নরওয়ের তারকা জেতেন ৭ বার। প্রজ্ঞানন্দ জেতেন ৫ বার। বাকি ৬টি ম্যাচ ড্র।
বয়স এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকে প্রজ্ঞানন্দের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন কার্লসেন। কিন্তু অতীতে কার্লসেনকে হারানোর ফলে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রজ্ঞাকে বোধহয় আরও বেশি করে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন প্রজ্ঞা। সেই কারণে ক্লাসিক্যাল দুটো গেমে ড্রয়ের পরে ফাইনাল যখন গড়ায় টাইব্রেকারে, তখনও নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারাননি প্রজ্ঞানন্দ। এমনকী প্রথম টাইব্রেকারে হারের পরেও প্রজ্ঞানন্দর হয়ে আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রথম টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় চাপ বাড়ছিল প্রজ্ঞানন্দর উপরে। এই পাহাড়প্রমাণ চাপ মাথায় নিয়ে আর জেতা হল না তাঁর।
[আরও পড়ুন: চাঁদে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ দেখে কীভাবে সেলিব্রেশন করলেন ধোনি? দেখুন ভাইরাল ভিডিও]