অর্ণব আইচ: শুধু সোনার ব্যবসা নয়, কাপড়ের ব্যবসার মাধ্যমেও রেশন দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। ইডির হাতে ধৃত ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসের মাধ্যমেই বাংলাদেশে এই টাকা পাচার হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্তে ইডি। ইডির দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আলাদাভাবে এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী, যাঁদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিদেশে ফোরেক্স-সহ অন্যান্য সংস্থা রয়েছে, তাঁদের রেশন বন্টন দুর্নীতির টাকা পাচারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। এরকম আরও অন্তত চারজন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে। তাঁদেরই সন্ধান চালাচ্ছেন ইডির গোয়েন্দারা।
রেশন বন্টন দুর্নীতিতে ধৃত বিশ্বজিৎ দাসকে শুক্রবার ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালতে তোলা হয়। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে ইডি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ইডির দাবি, বাংলাদেশে কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে বিশ্বজিতের। ঢাকায় একটি নামী কাপড় বিপণির মালিক এই ব্যবসায়ী। সেই সূত্র ধরে কাপড় কেনাবেচার মাধ্যমেও রেশন বন্টন দুর্নীতির টাকা পাচারের সম্ভাবনা। পাচারের টাকা বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় এসে পৌঁছয়। দুবাইয়ে বিশ্বজিতের তিনটি সংস্থার মধ্যে সোনা লেনদেনের কারবারের সংস্থাও রয়েছে। রেশনের চাল ও গম থেকে হাতিয়ে নেওয়া বিপুল টাকা সোনার মাধ্যমেও পাচার হয়েছে বিদেশে। বিশ্বজিতের ফোরেক্স সংস্থার মাধ্যমেও দুর্নীতির প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। এই টাকা পাচার হয়েছে হাওলায়। এই ব্যাপারে কয়েকজন হাওলা কারবারীরও সন্ধান চালাচ্ছেন ইডির গোয়েন্দারা।
[আরও পড়ুন: জন্মদিনের পরই হাসপাতালে অঙ্কুশ, হল অস্ত্রোপচার, কেমন আছেন তারকা?]
এদিন আদালতে বিশ্বজিতের আইনজীবী জানান, এই গ্রেপ্তারি বেআইনি। গ্রেপ্তারির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী, আমদানি রপ্তানির ব্যবসায় বাংলাদেশের টাকা মধ্য প্রাচ্য হয়েই কলকাতায় আসে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বজিৎ শংকর আঢ্যর কর্মচারী থাকার পর ছেড়ে দেন। শঙ্করের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। দুর্নীতির কিছুই তিনি জানেন না। আদালতে দেওয়া নথিতে শংকর আঢ্য ছাড়াও অন্য সাক্ষীর নাম ‘পি টু’ হিসাবে নির্ধারিত করা হয়েছে। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে বিশ্বজিৎ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ সে বললেই তা কি বিশ্বাস করতে হবে? পিএমএলএ আইনে ‘প্রোটেক্টেড সাক্ষী’র কথা বলা নেই।
বিশ্বজিৎ ফোরেক্সের ব্যবসা করেন। তিনি কেন দুর্নীতি করবেন? ইডির আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁরা যে সাক্ষীর নামই খোলসা করেছেন, তাঁকে অন্য ব্যক্তিরা প্রভাবিত করেছেন। তিনি সাক্ষ্য দিতে চান না বলে আবেদন জানিয়েছেন। তাই এখন সাক্ষীদের ছদ্মনাম দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন হচ্ছে এদের জন্য। এমন যেন, ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান।’ ইডি এই ব্যবসায়ীর বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে অনেক কিছু পেয়েছে। তল্লাশিতে পাঁচ লাখ টাকা ও বেশ কিছু চিরকুট উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি।