ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৫০ (আথানাজে ৪৭, কর্নওয়েল ১৯, অশ্বিন ৫/৬০, জাদেজা ৩/২৬)
ভারত: ৮০-০ (যশস্বী ৪০, রোহিত ৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭০ রানে এগিয়ে
স্টাফ রিপোর্টার: রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravindra Jadeja) একটা করে উইকেট নিচ্ছেন, আর বেশ কয়েকটা পোস্ট আসছিল। ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অশ্বিনকে না খেলানো নিয়ে ভালরকম বিতর্ক হয়েছিল। ক্রিকেট জনতা থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে তুলোধনা করেছিল। বলা হচ্ছিল, যেকোনও কন্ডিশনেই খেলা হোক না কেন, টিমের এক নম্বর স্পিনারকে ছাড়া খেলাটা রীতিমতো বোকামো। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া টিমে যেখানে চার-পাঁচজন বাঁ-হাতি ব্যাটার রয়েছে। এতটাই বিতর্ক-দগ্ধ হতে হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটকে যে তার রেশ ফাইনাল শেষে দিন কুড়ি পর্যন্ত ছিল।
যাই হোক, ওভাল ফাইনাল (WTC Final) এখন অতীত। তবে এদিন অশ্বিন যেরকম বোলিং করে গেলেন, তাতে বিতর্কটা না আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে! আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ডমিনিকায় প্রথম টেস্টে নেমে অশ্বিন আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার। এটা ঠিক যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আগের মতো সেই আগুনে বাইজ গজ নেই। বরং স্পিনাররা এখন অনেক বেশি সাহায্য পান। অনেকটা উপমহাদেশীয় পিচের মতো। আগেরবার ভারতীয় দলের সিরিজ জেতার ক্ষেত্রে স্পিনারদের ভূমিকা ভালরকম ছিল। সেই কথা মাথা রেখেই ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ম্যাচের আগের দিনই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন দুই স্পিনার অর্থাৎ অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজাকে রেখেই তাঁরা নামবেন। দুই স্পিনারই কাঁদিয়ে ছাড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের। বিশেষ করে অশ্বিন। শুধু পাঁচ উইকেট নেওয়া নয়, একইসঙ্গে বিরল নজিরও গড়লেন। ক্যারিবিয়ান শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দিলেন তিনি। আউট করলেন ত্যাগনারায়ণ চন্দ্রপলকে। যিনি আবার কিংবদন্তি শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের পুত্র। কেরিয়ারের শুরুর দিকে অশ্বিন আউট করেছিলেন সিনিয়র চন্দ্রপলকে। এবার আউট করলেন তাঁর ছেলেকে। বিশ্ব ক্রিকেটে পিতা-পুত্রকে আউট করছেন, এরকম নজির হাতে গোনা কয়েকজনের রয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম বোলার হিসাবে এহেন কীর্তি স্থাপন করলেন।
[আরও পড়ুন: শপিং মলের চলন্ত সিঁড়িতে আটকে গেল শিশুর হাত! হাওড়ায় তীব্র চাঞ্চল্য]
নজিরের এখানেই শেষ নয়। বরং আসলগুলোই বাকি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravi Ashwin) এদিন তৃতীয় ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেটের গণ্ডি পেরিয়েছেন। চন্দ্রপলকে আউট করার পরই অধিনায়ক ব্রেথওয়েটকেও ফেরান তিনি। সেটাই তাঁর কেরিয়ারের ৭০০ তম উইকেট। আপাতত অশ্বিন দাঁড়িয়ে ৭০২ উইকেটে। এর আগে এই কীর্তি আছে আর দু’জনের। অনিল কুম্বলে এবং হরভজন সিং। এর বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে বোল্ড আউট করার নিরিখেও ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম অশ্বিন। টেস্টে মোট ৯৫ জনকে বোল্ড করেছেন অশ্বিন। এর আগে এই রেকর্ড ছিল কুম্বলের। তিনি বোল্ড করেছিলেন ৯৪ জনকে। এক ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার নিরিখেও রেকর্ড গড়েছেন অশ্বিন। মোট ৩৩ বার এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন অশ্বিন। যা গোটা বিশ্বের নিরিখে ষষ্ঠ। আর ভারতীয়দের হিসাবে দ্বিতীয়।
সিরিজ শুরুর আগে চমকের কথা শুনিয়ে রাখা হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরর থেকেও। সেদেশের ক্রিকেট পারফরম্যান্স ম্যানেজার তথা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘টেস্টের জন্য ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সিরিজে ছেলেরা লড়াই করবে।’’ কিন্তু কোথায় লড়াই! বরং অসহায় আত্মসমর্পণের নুমনা পেশ করে গেলেন জেসন হোল্ডাররা। যেভাবে তারা উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন, তাতে ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। একমাত্র যা লড়াই করার সেটা করলেন ওই আথানাজে (৪৭)। বাকিদের নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। শুরু থেকে উইকেট হারিয়ে সেই যে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেখান থেকে আর বেরোতে পারেনি তারা। প্রথম ইনিংসে তাঁরা অলআউট ১৫০ রানে। পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। ৩টে জাদেজা।
[আরও পড়ুন: সাগরদিঘিতে ফের বায়রন মডেল, বায়রনের হাত ধরেই তৃণমূলে বাম-কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীরা]
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রত্যাশিতভাবেই দুর্দান্ত শুরু করেছে ভারত। অধিনায়ক রোহিত এবং অভিষেক ম্যাচে নামা যশস্বী ৮০ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে ফেলেছেন। দুজনেই অপরাজিত। প্রথম ইনিংসে ভারত পিছিয়ে মাত্র ৭০ রানে। হাতে সবকটি উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিনের শেষে চালকের আসনে রোহিত শর্মার ভারত। এদিন ডমিনিকায় যশস্বী জয়সওয়াল ছাড়াও আরেকজনের অভিষেক হয়েছে। তিনি ঈশান কিষান। যশস্বীর যে টেস্ট অভিষেক ঘটবে, সেটা জানাই ছিল। তবে শ্রীকর ভরতের জায়গায় ঈশানকে খেলিয়ে দেওয়াটা নিঃসন্দেহে চমক ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের।