shono
Advertisement

শুধু আইসিসি টুর্নামেন্টে ব্যর্থতাই নয়, বিরাট-রোহিতের উত্তরসূরিও তুলে আনতে পারল না শাস্ত্রীয় যুগ

শাস্ত্রী জমানার শেষে উঠে আসছে কোন কোন প্রশ্ন?
Posted: 06:26 PM Nov 09, 2021Updated: 07:37 PM Nov 09, 2021

কৃশানু মজুমদার: শেষ হল ভারতীয় ক্রিকেটের শাস্ত্রীয় যুগ। টি-২০ ফরম্যাটে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও খুলে রাখলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে অনিল কুম্বলের নিষ্ক্রমণের পরে সাড়া জাগিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয়েছিল, কোহলি-শাস্ত্রী যুগ। শেষটাও মধুর হতেই পারত। 

Advertisement

ফেভারিট হিসেবে মিশন ‘টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ’-এ (T20 World Cup) গিয়েছিল কোহলির ভারত। কিন্তু দু’ ম্যাচ গড়াতে না গড়াতেই স্পষ্ট হয়ে যায় দেওয়াললিখন। রবিবার সরকারি ভাবে বিদায়গাথা লেখা হয়ে যায় ভারতীয় দলের। শাস্ত্রীয় (Ravi Shastri) যুগের অবসানে উঠছে কয়েকটা প্রশ্ন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে মরুশহর ছাড়লে হয়তো এই প্রশ্নগুলো উঠত না। সাফল্যের আলোয় ঢাকা পড়ে যেত অন্ধকার দিকগুলো। ব্যর্থ বলেই উঠছে প্রশ্ন। 

[আরও পড়ুন: শাস্ত্রী-কোহলি বিদায়ী আবেগে যেন ঢেকে না যায় রুক্ষ ময়নাতদন্ত]

শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) তখন পড়ন্ত সূর্য। তিনি অস্তমিত হলে ব্যাটিংয়ের হাল ধরবেন কে, এমন প্রশ্ন সেই সময়ে প্রায়ই উঠত ভারতীয় ক্রিকেটে। বিরাট কোহলিকে তৈরি করা হচ্ছিল শূন্যস্থান পূরণের জন্য। রোহিত শর্মাও সিনিয়রদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছিলেন। বিরাট কোহলি নিজে এখনও বিশ্বের সেরা ব্যাট। তাঁর ‘গাণ্ডীব’কে ভয় পান না এমন কেউ নেই। কিন্তু উইকি বলছে, কোহলির এখন ৩৩। তাঁর ডেপুটি রোহিত শর্মা ৩৪। খুব বেশিদিন আর রাজ করবেন না তাঁরা। তাঁদের ফেলে রাখা বিরাট সাম্রাজ্যেরই বা অধীশ্বর হবেন কারা? 

যেভাবে শুরু থেকে বেজেছিলেন শাস্ত্রী-কোহলি, শেষ হল না সেভাবে। কাজ শুরু করার পর থেকেই বলছিলেন, তাঁদের এই দলই দেশের সর্বকালের সেরা। শুধু মুখে প্রচার করলেই তো আর সেরা বলা যায় না। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় উঠলে তবেই তো বলা যাবে, তুমি সেরা। কোহলি-শাস্ত্রী জুটি একাধিক বার আইসিসি টুর্নামেন্টে সেরা হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু একবারও খেতাব জিততে পারেননি। পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়েছে বারংবার। 

রোহিত শর্মার ব্যাট যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল।

এবারের টুর্নামেন্টও তার ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য দল তৈরির ক্ষেত্রে কোহলি-শাস্ত্রীর পরিকল্পনাহীনতা বারবার চোখে পড়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে আম্বাতি রায়ডুকে চার নম্বরের জন্য বাছা হয়েছিল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সীমিত ওভারের ম্যাচগুলোয় রায়ডুকে খেলিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল বড় মঞ্চের জন্য। কিন্তু দল নির্বাচনে ছুঁড়ে ফেলা হয় রায়ডুকে। দলে রাখা হয় বিজয় শংকরকে। সেই বিজয় শংকর বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যর্থ। চোট পেয়ে ছিটকে যেতে হয় তাঁকে। 

টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রায় বিস্মৃতই হয়ে গিয়েছিলেন রবি অশ্বিন।

একটা সময় রিস্ট বা কবজি স্পিনারদের উপরে জোর দিচ্ছিলেন শাস্ত্রী-কোহলি। বলা হচ্ছিল কুল-চা জুটি তাঁদের ম্যাচ উইনার। কিন্তু দুই স্পিনারই এখন জাতীয় দলের কক্ষপথ থেকে বহু দূরে। যুজবেন্দ্র চাহাল এবারের আইপিএলে ১৮ উইকেট নিয়েছেন। বিসিসিআইয়ের মেগা টুর্নামেন্টে ভাল খেলাই যদি দলে সুযোগ পাওয়ার চাবিকাঠি হয়, তাহলে চাহাল জায়গা পেতেই পারতেন। আইপিএলের নিরিখে বিচার করলে খুব একটা হেলাফেলার পারফরম্যান্স এবার ছিল না চাহালের। তাঁকে সরিয়ে রেখে নেওয়া হল রাহুল চাহারকে।

তিনিও কবজির স্পিনার। অথচ নামিবিয়ার ম্যাচে তাঁকে খেলানো হল। বাকি ম্যাচগুলোয় ডাগ আউটে বসে খেলা দেখলেন তিনি। হরভজন সিং পর্যন্ত চাহালের হয়ে গলা ফাটিয়ে বলেছেন, তিনি বিশ্বাসই করেন না যুজবেন্দ্র চাহালের থেকে ভাল রাহুল চাহার। রাহুলের ভাই দীপক বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা স্পেল করেছিলেন। সাত রানে ৬টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এবার চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ১৫ ম্যাচে ১৪টি উইকেট নিয়েছিলেন। অথচ বিশ্বকাপের দলে রাখা হয়নি তাঁকে। একসময়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সম্পর্কে বলা হত, এত প্রতিভা সেখানে, যে নষ্ট হচ্ছে প্রতিভা। সবার মাথায় ওঠে না ব্যাগি গ্রিন টুপি।

শাস্ত্রী-কোহলি জমানাতে এই দেশেও প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে, হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো ম্যাচ উইনারকে বিস্মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় চার বছর বাদে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়েও তিনিও নির্ঘাত বিস্মিতই হয়েছিলেন। অথচ হাতে এমন ব্রহ্মাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও প্রথম ম্যাচ থেকে তাঁকে নামানো হয়নি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম খেলেন তিনি। ততক্ষণে প্যানিক বাটন টেপা হয়ে গিয়েছে ভারতীয় সাজঘরে। 

এই সিংহনাদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি মরুশহরের বিশ্বকাপে।

সূর্যকুমার যাদব আইপিএলে ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবে পরিচিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁকে ‘স্কাই’ বলে ডাকা হয়। দলের বিপদের সময়ে তাঁর ব্যাট চওড়া থেকে আরও চওড়া হয়ে ওঠে। অথচ বিশ্বকাপে সূর্যকুমার আকাশ ছুঁতে পারলেন না। আইপিএলে ফুল ফোটানো আবেশ খান, ভেঙ্কটেশ আয়ার উপেক্ষিতই রয়ে গেলেন। অথচ কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বয়ে বেড়ানো হল হার্দিক পাণ্ডিয়াকে। 

বিশ্বকাপের মহামঞ্চে প্রিয় দলের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে এক ক্রিকেট ভক্তের আর্তি, ক্যাপ্টেন, একটু ভেবে দেখবেন প্লিজ!

[আরও পড়ুন: ‘বিশ্বকাপ না জিতলেও এই দল সর্বকালের অন্যতম সেরা’, বিদায়বেলায় দাবি রবি শাস্ত্রীর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement