সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বীরেন্দ্র শেহওয়াগ-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা তাঁর কঠোর সমালোচনা করেছেন, চব্বিশ ঘণ্টা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় হেড কোচ রবি শাস্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন যে যাই বলুক, তিনি তাঁর স্টান্স বদলাবেন না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ হেরে যাওয়ায় প্লেয়ারদের যুক্তিসঙ্গ সমালোচনা করবেন। পরিষ্কার বলবেন, টিমের কারা পেরেছে আর কারা পারেনি। কিন্তু সৌরভ-শেহওয়াগদের ঘুরিয়ে পালটাও দেবেন। বলে দেবেন যে, গত পনেরো-কুড়ি বছরে বিদেশে বিভিন্ন ভারতীয় টিম যা খেলে গিয়েছে, তার চেয়ে বিরাট কোহলির টিম অনেক ভাল খেলছে।
গতকাল শেহওয়াগ তীব্রভাবে শাস্ত্রীকে শুনিয়েছিলেন যে, ড্রেসিংরুমে বসে ‘আমরা বেস্ট ট্র্যাভেলিং টিম’ বললে চলে না। মাঠে করে দেখাতে হয়। ট্রেন্টব্রিজ টেস্ট জয়ের পর যে কথাটা বলেছিলেন শাস্ত্রী। আর সৌরভ বলেন, শাস্ত্রীদের কাছে বিদেশে এ রকম পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা চাইতে হবে বোর্ডের। নইলে টিম উন্নতি করতে পারবে না। যার উত্তরে বুধবার শাস্ত্রী বলে দিয়েছেন, “আমার ছেলেরা প্রচুর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার পরেও ইংল্যান্ড আমাদের টপকে গিয়েছে। ওদের থেকে কৃতিত্ব কেড়ে নিচ্ছি না। কিন্তু এটা অবশ্যই বলব যে, এই ভারতীয় টিমের লক্ষ্য বিদেশে ভাল খেলা। লড়া। লড়ে জেতা। গত তিন বছরে বিদেশে আমরা ন’টা ম্যাচ জিতেছি। তিনটে সিরিজ জিতেছি (একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দু’বার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে)।” বলে ভারতীয় কোচের দ্রুত সংযোজন, “এত কম সময়ে এ জিনিস গত পনেরো-কুড়ি বছরে কোনও ভারতীয় টিম করে দেখাতে পেরেছে বলে তো মনে হয় না। মনে রাখতে হবে, অনেক বড় বড় প্লেয়ার সে সময় কিন্তু খেলেছে। অতএব, কোহলির এই ভারতীয় টিম আশা দেখাচ্ছে। এবার মানসিক ভাবে আমাদের আরও পোক্ত হতে হবে। আরও বেশি শক্ত মনোভাব দেখাতে হবে।”
[সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাটকে আনফলো করলেন রোহিত! ব্যাপারটা কী?]
শাস্ত্রী শুনিয়ে রেখেছেন যে, কোহলির ভারত আজ পারছে না মানে ভবিষ্যতে পারবে না, এমন নয়। “ম্যাচ হারের পর ভেতরে রক্তক্ষরণ হওয়াটা দরকার। একমাত্র তা হলেই ভবিষ্যতে একই রকম পরিস্থিতির পাল্লায় পড়লে কী করতে হবে, জানা থাকবে। ফিনিশিং লাইন তখন টপকে যাওয়া যাবে। আর এটা করা অসম্ভব নয়। নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে, এটা করা সম্ভব,” বলে দিয়েছেন শাস্ত্রী। কিন্তু ফিনিশিং লাইন পেরোতে কী করা দরকার টিমের? শাস্ত্রীয় প্রেসক্রিপশন হল- মানসিক কাঠিন্য বাড়ানো। “মানসিক ভাবে আরও কঠিন হওয়া দরকার। আমরা বিদেশ সফরে এসে লড়েছি। কিন্তু লড়াতেই ব্যাপারটা শেষ হয় না। এবার থেকে আমাদের ম্যাচগুলো জিততেও হবে। বুঝতে হবে, ভুল আমি করতেই পারি। কিন্তু চিন্তাভাবনা পরিষ্কার রেখে সেগুলোকে শুধরে এগোনো প্রয়োজন,” বলে দিয়েছেন ভারতীয় কোচ। “সিরিজের স্কোরলাইন দেখাচ্ছে ১-৩। যার মানে ভারত সিরিজ হেরে গিয়েছে। কিন্তু স্কোরলাইন এটা বলছে না ভারত সিরিজ ৩-১ করে জিতেও যেতে পারত। অন্তত ২-২ হতে পারত। আমার টিম সেটা জানে। সাউদাম্পটন ম্যাচের পর ওরা ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে রয়েছে। কিন্তু এটা এমন একটা টিম যারা কি না হতাশ হয়ে পড়ে থাকবে না। বরং উঠে দাঁড়াবে।”
এ দিনের লন্ডন সাংবাদিক সম্মেলনে শাস্ত্রীকে সাউদাম্পটন টেস্টে হারের প্রসঙ্গ ধরে জিজ্ঞাসা করা হয়। আর ভারতীয় কোচের উত্তর এ রকম:
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা: “আমার মতে, শট নির্বাচন আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল। টেস্টের দ্বিতীয় দিন আমরা একটা সময় ১৮০-৪ ছিলাম। সেখান থেকে ৭৫-৮০ রানের লিড নেওয়ার যাবতীয় সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আমরা সেটা উড়িয়ে দিয়েছি।”
রবিচন্দ্রন অশ্বিন বনাম মইন আলি: “অশ্বিন ফিট ছিল। সব কৃতিত্ব মইনকে দিতে হবে। ওদের তফাতটা কোথায় হল? খুব সহজ। পিচের রাফে অশ্বিনের চেয়ে অনেক বেশি হিট করেছে মইন।”
হার্দিক পাণ্ডিয়াকে খেলিয়ে যাওয়া: “তরুণ বয়সে তোমাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে হবে। দেখতে হবে, তোমাকে দিয়ে চলবে নাকি চলবে না? যদি না চলে, বিকল্প দেখতে হবে। কিন্তু কারও প্রতিভা আছে মনে করলে, তাকে সুযোগ দিতে হবে।”
সিরিজের যা অবস্থা, তাতে ওভাল টেস্ট এখন ভারতের কাছে সম্মানরক্ষার লড়াই। অবশ্য ওভাল টেস্টের আরও এক বিশেষত্ব আছে। ওভাল টেস্ট খেলেই ক্রিকেটকিট চিরতরে তুলে রাখবেন অ্যালিস্টার কুক। বারো বছর আগে ভারতেরই বিরুদ্ধে নাগপুরে ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু হয়েছিল কুকের। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়কের শেষটাও হচ্ছে ভারতেরই বিরুদ্ধে। “আমি ওর প্রথম টেস্টটা দেখেছিলাম। দেখেছিলাম, নাগপুরে অভিষেকে ওর সেঞ্চুরি। কুক নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ও এমন এক চরিত্র যে মানসিক ভাবে প্রচণ্ড টাফ,” বলে দিয়েছেন শাস্ত্রী। আর সব শেষে বলেছেন, “কুকের ব্যাটিং দেখতে সুন্দর না হতে পারে, কিন্তু অসম্ভব কার্যকরী। ইংল্যান্ডের পরিবেশে, যেখানে বল মুভ করে, সেখানে বছরের পর বছর ওপেন করতে নেমে রান করা সহজ নয়। ভবিষ্যতের জন্য আমার তরফ থেকে ওর জন্য সব রকম শুভেচ্ছা থাকল।”
The post ‘২০ বছরে বিদেশে খেলা ভারতীয় টিমগুলোর চেয়ে ভাল করেছে বিরাটরা’ appeared first on Sangbad Pratidin.