নির্মল ধর: বয়সে প্রবীণ পরিচালক শ্যামল বসু সিনেমা ভালবাসেন। আরও বেশি ভালবাসেন সিনেমা বানাতে। খুবই উৎসাহ তাঁর সিনেমার প্রতি! এই আক্রার বাজারেও তিনি বহুকষ্টে প্রযোজক জোগাড় করে অন্তত একডজন ছবি করে ফেলেছেন শুনতে পাই। সুতরাং সিনেমার প্রতি তাঁর অনুরাগ নিয়ে কোনও বিরুদ্ধ কথা বলা যাবে না। তিনি আদ্যন্ত সিনেমাপ্রেমী!
কিন্তু সিনেমার প্রেমিক হওয়া আর সিনেমা বানানো বা সিনেমার পরিচালক হওয়া তো এক জিনিস নয়। সিনেমা তৈরি করতে গেলে সেটা যত্ন সহকারে শেখাটা জরুরি। সিনেমা একটা যন্ত্রনির্ভর শিল্প মাধ্যম। তার অনেক অলিগলি ঘোর-প্যাঁচ আছে। ক্যামেরার সামনে অভনয়েছু কিছু পয়সাওয়ালা ছেলেমেয়ে দাঁড় করিয়ে ছবি তুললেই সেটা সিনেমা হয় না। একটা গোদা গল্প বলতে গেলেও সেই ছবি তোলার মধ্যেও একটু শৃঙ্খলার প্রয়োজন। বলতে কষ্ট হলেও, সত্যিটা তো একবার না একবার কাউকে বলতেই হয়। আয়নার সামনে না দাঁড়ালে তিনি নিজের মুখ দেখবেন কী করে? শ্যামল বসুর এই নতুন “সময়” নামের ছবিটিকে যে কী সংজ্ঞায় ডাকব বুঝে উঠতে পারছি না। কারণগুলো একে একে বলি।
[আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কা-রাজকুমারকে ছাপিয়ে ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’ হয়ে উঠলেন আদর্শ! পড়ুন রিভিউ]
১. গল্পের মুড়ো, ল্যাজা, পেটি যে কোনওটা কী দুর্বোধ্য।
২. সময় নিয়ে যে আগুপিছু খেলা তিনি করেছেন, সেখানে কন্টিনিউটি রাখার ব্যাপারে ফরাসি পরিচালক গোদারকেও ভিরমি খাইয়ে দিয়েছেন।
৩. চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এতটাই জট পাকানো যে সুতোর শুরু শেষ খুঁজতে দর্শক ভ্যাবলা বনে যাবেন।
৪. ছবির নায়ক নাকি একটা নাটকে নামতে চায়, পয়সা জোগাড় করতে পারছে না। কিন্তু তারা দিব্যি “মোক্ষ”র(Moksha) মতো অভিজাত রিসর্টে মিটিং করতে পারে!
৫. নায়ক এবং নায়িকা টুয়া দুজনেই মাদকাসক্ত হয়ে একই রিহ্যাবে ভরতি হয়, কিন্তু তাদের বিলাসী জীবনের শুধু নয়, শুশ্রূষার ব্যয় বহন কোন ‘গৌরী সেন’ করে?
৬. মাঝেমাঝেই গান এসেছে – কেন, সেটা শ্যামল বসুও বোধহয় বলতে পারবেন না। কারণ ছবি তৈরির গৌরী সেনের দল যে তেমনটাই চেয়েছে! নয় কি?
৭. প্রসঙ্গহীন ভাবে হঠাৎ সিনেমার বার্গম্যান, নাটকের উৎপল দত্ত এবং ছবির অভিনেতা সুপ্রিয় দত্তকে নিয়ে হাস্যকর, একেবারেই খেলো চেঁচামেচি কেন? ওই নামগুলো চিত্রনাট্যকারের জানা আছে এটা বোঝানোর জন্য?
৮. মানসিক ভারসাম্যহীন দু’টি ছেলে মেয়ে গান গাইবার সময় কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও বেচাল করেনি। এমনকী প্রেমের অস্ফুট ভঙ্গিও সঠিক ছিল।
৯. নায়ক চরিত্রের অভিনেতা দীপ বিশ্বাস সারা ছবিতে কোনও কথাই বলল না, শুধু ঘাড় নেড়ে গেল। এমন কাঠের পুতুল যে কোন যোগ্যতায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় শ্যামল বসুই বলতে পারেন। নায়িকা সেজেছেন তুয়া বিশ্বাস, সুন্দরী সবসময় তিনি। ক্যামেরার সামনে সুন্দরী তিনি সাজবেনই, নইলে আর প্রযোজক হওয়া কেন?
১০. বলা হয়েছে, নায়িকার বাবার স্টিল প্লান্টের ব্যবসা। এদেশে যতদূর জানি স্টীলের ব্যবসা পুরোটাই সরকারি পর্যায়ে? নয় কি?
১১. খাতায়-কলমে এটিই নাকি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ ছবি। অথচ টুকরো টুকরো কিছু দৃশ্যে তাঁকে দেখিয়ে তাঁর চরিত্রটিই স্পষ্ট করতে পারেননি পরিচালক। তাঁর নামটি ব্যবহার করে ছবি প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
[আরও পড়ুন: ফের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ অক্ষয়, চমকে দিলেন ‘বচ্চন পাণ্ডে’র নতুন লুকে]
আদতে পরিচালক শ্যামল বসু অর্থের জোগাড় করতে গিয়ে সিনেমা তৈরির কাজটির “অ আ ক খ” শেখার “সময়”টাই পাননি! অর্থই যত অনর্থের মূল হয়েছে এই ছবির আগা থেকে গোড়া! সুতরাং আর আলোচনা এগোনো ভস্মে ঘি ঢালা হয়ে যাবে।