চারুবাক: ন’বছর আগে তৈরি ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর রেশ টেনে সিক্যুয়েল ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ বানিয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। যার একদিকে রয়েছে দুঁদে ও সফল পুলিশ অফিসার অভিজিৎ (পরমব্রত) ও অন্যপ্রান্তে সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়া পঁচিশ বছর আগের খুনের আসামি খোকা। আবারও খুন, একই ভাবে একই জায়গায়। কেন? এবারও পরপর দু’টো খুন। পরের টার্গেট কে? পুলিশ অফিসার নাকি পুলিশের কোনও ‘খোঁচড়’। নাকি এই দু’জনের মধ্যে রয়েছে কোনও বিনি সুতোর সম্পর্ক? সেটা প্রায় শেষ দৃশ্য পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে পেরেছেন সৃজিৎ। আর রহস্য ফাঁস হতেই দর্শকদের মুখ হাঁ। ব্যাস এটুকুই বলা গেল। বাকিটা উহ্যই থাক। সব রহস্য ফাঁস করতে নেই। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় আর্থার কোনান ডয়েল ও অগাথা ক্রিস্টিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুরু করেছেন ‘দ্বিতীয় পুরুষ’। তাঁর এই কৃতজ্ঞতাবোধ ছবির পরতে পরতে বাঁধুনির মতো জড়িয়ে। বাংলা থ্রিলারে এক নতুন জ্যঁর শুরু করেছেন তিনি।
মানতেই হচ্ছে সিনেমা নামক ব্যবসায়িক শিল্পটির ঘাঁতঘোঁত, আনাচ-কানাচ, শস্ট টেকিংয়ের সফল প্রক্রিয়া ও বিন্যাস, সম্পাদনার লুকোচুরি খেলা, আবহকে দর্শকের স্নায়ু কঠিন করে তোলার ব্যবহারে সৃজিত সত্যিই বেশ দড়। সেই ‘চতুষ্কোণ’ ছবি থেকেই দেখছি, তিনি চিত্রনাট্যের খাঁজে খাঁজে বেশ চাতুর্যের সঙ্গেই বুনে দেন সমসময়ের ধুলো, রং। মাটি জড়িয়ে থাকে চরিত্র মাফিক চলতি ভাষার মোক্ষম প্রয়োগ। এই ছবিতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
[ আরও পড়ুন: কঙ্গনাই স্টার, মহিলাদের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দেয় ‘পাঙ্গা’ ]
পুরনো ছবিটির জের টেনে এই ছবিতে একাধিকবার এসেছে মৃত প্রবীর রায়চৌধুরির মুখ ও ভাষ্য। এমনকী বর্তমান সময়ে অভিজিৎ দুঁদে ও অভিজাত পুলিশ অফিসার হয়েও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চামড়ার নিচে চাপা থাকা অতীতের অভিজিৎকে বার করে এনেছেন তথাকথিত অশালীন কিছু শব্দের ব্যবহারে। স্ত্রী অমৃতার সঙ্গেও ঝগড়ায় উত্তেজনার বশে একই ধরনের বাক্যবন্ধ তাঁর মুখ থেকে বেরিয়েছে। আর ‘খুনে খোকা’র মুখে শাহরুখের ছবির গান-সহ চ-কারন্তক শব্দের ফুলঝুরি তো আছেই। দর্শকের হাততালিও তাই বরাদ্দ।
পঁচিশ বছর আগের খুনের জায়গাতেই একই ভাবে আবার খুন এবং কপালে খোকা শব্দ দু’টো দেগে দেওয়ার মধ্যে যে পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা লুকোন সেটা তো জেনে বুঝেই করে খুনি। তবুও স্মৃতি হাতড়ে অভিজিৎ কোন কোনও ক্লু পায় না। সেটা কিন্তু রহস্যই থেকে যায় চিত্রনাট্যে। তবুও দ্বিতীয় পুরুষ দর্শককে টানবে পরিচালকের পরিবেশন মুন্সিয়ানার পাশাপাশি পরমব্রত ও অনির্বাণের নজরকাড়া অভিনয়ের জন্য। বিশেষ করে অনির্বাণ এক ধরনের টিপিকাল ‘ক্যাওড়া’ ইমেজ গড়তে পেরেছেন। সহজ হাততালি তিনিই বেশি পাবেন। তাঁর কিছু ক্লোজ আপ ধরেছেন ভাল সৌমিক হালদার, রাইমা, গৌরব চক্রবর্তী, ঋদ্ধিমা সহশিল্পী হয়ে নিশ্চয়ই সহযোগিতা করেছেন। চিনা হোটেলের ম্যানেজার হয়ে শুভ্র সৌরভ বসু নজরে থাকেন। তবে ছোট্ট পরিসরে আবারও নজর কাড়েন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। অনুপম রায়ের সুরে যেক’টা দিন তুমি ছিলে পাশে একমাত্র সঠিকভাবে ব্যবহৃত। বাকিগুলো অবশ্যই শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু প্রয়োজনাতিরিক্ত। এই ছবির ফ্রেম থেকে ফ্রেমে পরিচালক সৃজিত থ্রিলার ধর্মকেই ঢুকিয়ে রেখেছেন। এমন একটি পরিণত ও শক্ত হাতের পরিচালক আজকের কোনও রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার দিকে নজর দেন না কেন?
[ আরও পড়ুন: চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় গলদ, মুখ থুবড়ে পড়ল সাহেব-শ্রাবন্তীর ‘উড়ান’ ]
The post প্রতি পরতে নতুন রহস্যন্মোচন, ভিন্ন দৃষ্টিতে সমকাল দর্শন ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এ appeared first on Sangbad Pratidin.