বিশাখা পাল: লোকসভা ভোটের আগে ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’ নিয়ে যে উত্তেজনা ছিল, নির্বাচনের পর তা অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছে। অন্তত প্রথম দিন সিনেমা হলের চিত্র দেখে তাই মনে হল। বোধহয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর সমস্ত ভূমিকা হারিয়েছে মোদির জীবনযাত্রার গল্প। সঠিক কারণ জানা নেই, কিন্তু সেলুলয়েডের থেকে দর্শকের মন যে এখন আসল মোদিতেই মজেছে, তা বেশ বোঝা যায়।
প্রথম দফা নির্বাচরের পরদিনই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’-র। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে তা বাধা পায়। কমিশনের নির্দেশেই ভোটের ফল ঘোষণার পর মুক্তি পায় ছবি। কমিশন যে খুব ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি, তা প্রায় সোয়া দু’ঘণ্টা সিনেমা হলে বসে থাকলেই বোঝা যাবে। মোদি এখানে মানুষ নন, ঈশ্বরস্বরূপ। ছবিতে অবশ্য একবারও তা বলা হয়নি। কোনও সংলাপের প্রমাণ চাইলে, তা দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু ছবির আদ্যোপান্ত কিছু ইঙ্গিত ছিল, যা মোদিকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হিসেবে তুলে ধরে। ছবির প্রথমার্ধে দেখানো হয়েছে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির ছেলেবেলা। দেশ তার কাছে শেষ কথা। তাই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য যখন জওয়ানরা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে ট্রেনে উঠতে যাচ্ছে, তাদের বিনামূল্যে চা খাওয়ায় খুদে মোদি। মানুষের জন্য যে সে কিছু করতে চায়, তা প্রকাশ করা হয়েছে ফ্রেম-বাই-ফ্রেমে।
[ আরও পড়ুন: সিনেমার কণামাত্র উপকরণ নেই, ‘বাংলা বই’ হয়েই থাকবে ‘অতিথি’ ]
দেব আনন্দের ‘গাইড’-এ মুগ্ধ মোদি সন্ন্যাস নেন। দু’বছর পাহাড় পর্বতে সন্ন্যাসজীবন কাটানোর পর আরএসএসে ফিরে আসেন তিনি। ততদিনে মোদি সোমত্ত যুবক। তাঁর প্রশংসা পৌঁছায় দিল্লি পর্যন্ত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার কর্ণগোচর হয়। দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। গোটা ঘটনাটা এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যা দেখলে মনে হবে মোদির ‘কাজ’-কে ভয় পেয়েই এমার্জেন্সি জারি করে ইন্দিরা সরকার। সুচারু কারুকাজ। নিন্দুকরা বলতেই পারেন, চিত্রনাট্য সাজানোর সময় বা সম্পাদনার সময় খুব সুক্ষ্মভাবে মোদি-স্তুতির কথা বোধহয় মাথায় রাখা হয়েছিল।
গোটা ছবির ক্ষেত্রেই অবশ্য একই কথা খাটে। গোটা ছবিতে মোদি ব্যতীত আর কিছু নেই। আরএসএসের সদস্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জার্নিটাই মূল উপজীব্য। ছবিতে এমন কিছু সংলাপ রয়েছে যা একটু মন দিয়ে লক্ষ্য করতে মোদিস্তুতির কথা স্পষ্ট বোঝা যায়। বাস্তবিকভাবে একজন রক্তমানুষের জীবন ঠিক-ভুলের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। কিন্তু ছবিতে মোদি এমন একজন ব্যক্তি যার জীবনে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেই, সে এমন কোনও কাজ করেনি যা ঠিক নয়। কোনও সিদ্ধান্ত ভুল নেয়নি। জীবনের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত সে একাই নিয়েছে আর সঠিক নিয়েছে।
গোধরা কাণ্ডের কথা ছবিতে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে। বিস্তারিত যেটুকু বলা হয়েছে, তাতে মোদিকে আদালতের বাইরে সেলুলয়েডে নির্দোষ প্রমাণ করার প্রচেষ্টা মাত্র। তিনি দোষী কি নির্দোষ, সেটা বিতর্কিত বিষয়। এখানে অবান্তরও। এসব আদালতের ব্যাপার। কিন্তু ছবির এই পর্বটি দেখতে গিয়ে মনে হতেই পারে পরিচালক যেন উঠেপড়ে লেগেছেন মোদিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। ঠিক একইভাবে মোদিকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার কাজটাও যেন ঘাড়ে তুলে নিয়েছে ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’। গোধরা আর অক্ষরধাম কাণ্ডের পর যেভাবে গুজরাট দাঙ্গার আগুনে পুড়ছিল, তার দাগ পড়েছিল মোদির গায়ে। সে দাগ মুছতে আজও তৎপর তিনি।
[ আরও পড়ুন: দর্শক টানার মশলা থাকলেও শিবু-নন্দিতার ব্যতিক্রমী ছবি ‘কণ্ঠ’ ]
খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে এখানে মোদির পরিবর্তন ধরা পড়তে বাধ্য। যে মানুষ দেশের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ, কোনও মানুষের ক্ষতির কথা চিন্তা করলে আঁতকে ওঠে সে রাজনীতির ময়দানে নেমে নিমেষে পালটে যেতে পারে? প্রতিপক্ষকে আক্রমণ রাজনীতির অঙ্গ। কিন্তু দুটো মানুষের মধ্যে যেন মিল পাওয়া যায় না। তবে মোদির পাকবিদ্বেষের কথা সরাসরি উঠে এসেছে ছবিতে। এখানে একবিন্দুও রাখঢাক নেই।
তবে বলতেই হবে ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’ ছবিটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছেন বিবেক ওবেরয়। মোদির প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন ভালভাবে। সম্পূর্ণ নিখুঁত না হলেও অনেকাংশে তিনি সফল। তবে তাঁর অভিনয় অনেকটা চড়া দাগের। অনেকটা মঞ্চাভিনয়ের মতো। পরিচালক উমঙ্গ কুমারকে নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। তবে এই পরিচালকই যে ‘সরবজিৎ’ বা ‘মেরি কম’ পরিচালনা করেছিলেন, তা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
The post ছবিজুড়ে মোদির জয়গান, বায়োপিকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ প্রধানমন্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.