বিশাখা পাল: বায়োপিক ঘিরে দর্শকের প্রত্যাশা বরাবরই তুঙ্গে থাকে। এক্ষেত্রেও কম ছিল না। তার উপর ‘গুল মকাই’ মালালা ইউসফজাইয়ের বায়োপিক। তাই প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। ছবির বিষয়বস্তু ভালই বেছেছিলেন পরিচালক আমজাদ খান। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। অভিনয় আর পরিচালনার খামতিতে চিত্রসমালোচক থেকে হল ফেরত দর্শক, কারওরই তৃপ্তি হল না।
ছবির পটভূমি পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকা। মালালার বাড়ি এখানেই। ২০০৯ সালে এই উপত্যকায় দাপিয়ে বেড়াত তালিবানিরা। মেয়েদের আপাদমস্তক ঢেকে বেরোত হত। দাড়ি না থাকলেই ছেলেদের উপর চলত গুলি। পড়াশোনা ছিল অপরাধ। এমনই একটা সময়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন মালালা ইউসফজাই ও তাঁর বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসফজাই। ‘গুল মকাই’ তারই প্রতিচ্ছ্ববি। ছবির নাম রাখার ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা করেছেন পরিচালক। ‘গুল মকাই’ নামে মালালা একসময় কলাম লিখতেন। সেই নামই পরিচালক রেখেছেন তাঁর ছবিতে। কিন্তু নামকরণে পরিচালক যে ভাবনার পরিচয় দিয়েছেন, ছবির ক্ষেত্রে তার বিন্দুমাত্র দেননি। বায়োপিক মানেই মানুষের আশা থাকে অতিরিক্ত কিছু দেখা যাবে ছবিতে। কিন্তু সেসবের বালাই নেই। এখানে যা তথ্য আপনি দেখতে পাবেন, গুগল করলে তার থেকে কম কিছু পাবেন না। তার উপর ফিচার স্টোরি বানাতে গিয়ে গল্পটাই ঘেঁটে ফেলেছেন পরিচালক। নাটকীয়তা কোথাও কোথাও যেন বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায়। পরিচালনায় একেবারই পরিণতিক ছাপ নেই। তার চেয়ে তিনি ডক্যুফিচার বানতে পারতেন।
[ আরও পড়ুন: প্রতি পরতে নতুন রহস্যন্মোচন, ভিন্ন দৃষ্টিতে সমকাল দর্শন ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এ ]
ছবির আরও একটি দুর্বলতার জায়গা অভিনয়। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছেন রিমা শেখ। টেলিভিশনের অভিনেত্রী তিনি। তাই হয়তো ধারাবাহিকের সেই গতে বাঁধা অভিনয়ের ছক থেকে বেরোতে পারলেন না তিনি। অবশ্য এর আগে ‘ওজির’ ছবিতে অবশ্য দেখা দিয়েছিলেন রিমা। কিন্তু তা ছিল ক্যামিও চরিত্র। কিন্তু এখানে তিনিই মুখ্য। তাঁর অভিনয়ে আরও ধার দরকার ছিল। সেটাই নেই। মালালার বাবা ও মায়ের ভূমিকায় অতুল কুলকর্ণি আর দিব্যা দত্তা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন। কার্যত অতুলের অভিনয়ের জোরেই উতরে গিয়েছে অনেক দৃশ্য। মুখ্য চরিত্র রিমা হলেও অতুলের পাশে তাঁকে নিতান্তই ম্রিয়মান লেগেছে। ছবির বাকি চরিত্রদের অভিনয়ও দুর্বল। সুফি মহম্মদের ভূমিকায় মনে দাগ কাটতে পারেননি আরিফ জাকারিয়া। ওম পুরি ও পঙ্কজ ত্রিপাঠি ছবিতে খুল অল্প সময়ের জন্য রয়েছেন। তাই তাঁদের অভিনয় দেখানোর মতো জায়গাই নেই। পাকিস্তানি আর্মিকে দেখে মাঝেমধ্যে এদেশের পুলিশের কথা মনে হতেই পারে। উর্দু উচ্চারণেও তাল কেটেছে কোথাও কোথাও। চিত্রনাট্যও অত্যন্ত দুর্বল। পরিচালকের বোঝা উচিত ছিল শুধু গুলি চালিয়ে আর মানুষের মৃত্যু দেখিয়ে ভাল ছবি তৈরি হয় না। দুর্বল চিত্রনাট্য, অপরিণত অভিনয় আর দিশাহীন পরিচলনার জন্যই ‘গুল মকাই’ শুধু একটা ছবি হিসেবেই রয়ে গেল। ভাল গল্প নির্বাচন করেও পরিচালক আমজাদ খান কতটা সাফল্যের মুখ দেখবেন, সন্দেহ থেকে যায়।
[ আরও পড়ুন: কঙ্গনাই স্টার, মহিলাদের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দেয় ‘পাঙ্গা’ ]
The post অভিনয় আর পরিচালনার দুর্বলতাই ডোবাল ‘গুল মকাই’কে appeared first on Sangbad Pratidin.