সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জিততে হলে লড়তে হবে। এই হল জীবনের মূলমন্ত্র। সিনেমার ডায়লগ মনে হয়। বাস্তবেই ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাওয়া ‘টুয়েলভথ ফেল’-এ ছিল এই সংলাপ। যদিও বিধু বিনোদ চোপড়ার ছবির ডায়লগ মিথ্যে ছিল না। যেহেতু রক্তমাংসের ডাকাবুকো আইপিএস অফিসার মনোজ কুমার শর্মার কঠিন জীবন কাহিনি নিয়েই তৈরি হয়েছিল ওই ছবি। যিনি ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে রাত কাটিয়েছেন, সাফাইকর্মীর কাজ করেছেন, বারবার ব্যর্থ হয়েছেন, তবু লড়াই থামাননি। গোটা পৃথিবী যখন বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, তখন পাশে থেকেছে কেবল অদম্য ইচ্ছাশক্তি। লক্ষ্য পূরণ করেছেন মনোজ। আইপিএস হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
এই মানুষটাই এক সময় দ্বাদশের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। যদিও ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্রের মতো টুকলি করেননি। যদিও মহাকুমা শাসকের টুকলি বন্ধ অভিযানে মনোজ ও তাঁর ভাইয়ের অটো আটক করে প্রশাসন। যা ছাড়াতে মহকুমা শাসকের অফিসে যান তিনি। সেদিনই অন্তরে জীবনের মোড় ঘুরে যায় গরিব পরিবারের ছেলেটির। মনোজ স্বপ্ন দেখেন যেভাবেই হোক একদিন আইপিএস অফিসার হবেন। আইনের পথে থেকেই টুকলির মতো সামাজিক অবক্ষয় দূর করবেন। এর জন্য জীবন বাজি রাখতেও পিছপা হবেন না।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতার রাস্তায় মদ্যপের তাণ্ডব, ভ্যানচালককে ধাক্কার পর গাড়ির উপর নাচ যুবকের!]
স্বপ্ন ছিল বেজায় কঠিন। হিন্দি মিডিয়ামের ছাত্র ছিলেন মনোজ। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়তে হবে তাঁকে। দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে পরিবারের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে গোয়ালিয়র শহরে আসেন যুবক। পেট চালাতে কার্যত জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করেন। কাজের মধ্যে ছিল টেম্পো চালানো, পিওনের কাজ, লাইব্রেরির সাফাইকর্মী ইত্যাদি। যদিও এই লাইব্রেরিতে কাজের সুযোগ পেয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন মনোজ।
গোয়ালিয়র থেকে দিল্লি গিয়েও জীবন বদলায়নি। শোনা যায়, সেখানে এক ধনীর বাড়িতে কুকুরের দেখভাল করতেন তিনি। যদিও লড়াই অব্যাহত ছিল। রোজগারের টাকা বাড়িতে পাঠানোর পাশাপাশি চলছিল আইপিএসের প্রস্তুতি। দিনে ১৫ ঘণ্টা কাজ, রাতভর পড়াশোনা, মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ঘুমে শরীর ভাঙছিল মনোজের। প্রথম প্রচেষ্টায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা উতরে গেলেও মেইন পরীক্ষায় তিনবার ব্যর্থ হওয়ার পর চতুর্থবারের চেষ্টায় সফল হন। মনোজের মাথার চারপাশে জ্বলে উঠছিল আলো! আলো না আলোর বলয়!
[আরও পড়ুন: রামমন্দিরে বসল ১২ ফুট লম্বা সোনার দরজা, ঝলমলে কারুকাজে মুগ্ধ হবেন ভক্তরা]
প্রথম থেকে মনোজ কুমার শর্মাকে প্রতি পদক্ষেপে সমর্থন করেছিলেন তাঁর প্রেমিকা, পরবর্তীকালে স্ত্রী শ্রদ্ধা যোশী। তিনি নিজেও কিছু কম না। বর্তমানে আইআরএস অফিসার। সম্প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর একটি ছবি পোস্ট করেন মনোজ। যা ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। কমেন্ট বক্সে নেটিজেনরা কুর্নিশ জানাচ্ছে অদম্য দম্পতিকে। যাদের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল- জিততে হলে লড়তে হবে।