সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। ভারতের বায়ুসেনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে বোমা বর্ষণ করেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধু চিনের ভূমিকায় অবাক হচ্ছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। ‘বন্ধু’ পাকিস্তানের পাশে সরাসরি দাঁড়াচ্ছে না চিন! যদিও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিচারে বেজিংয়ের কাছে এটাই প্রত্যাশিত বলে দাবি করছেন বেশ কিছু কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
শুরু থেকেই বেজিংয়ের বক্তব্য ছিল, যুদ্ধ এড়াতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সংযত থাকা উচিত। তাদের সেই বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মহল বেশ অবাকই হয়েছিল। কারণ, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর ভারত যখন ওই সন্ত্রাসের জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলে, সেই সময় চিন বলেছিল, কোনও একটি সন্ত্রাসের জন্য একটি গোটা দেশকে এভাবে দায়ী করা ঠিক নয়। অথচ, দিন পনেরোর মধ্যে নিজেই ‘সংযত’ বেজিং। শুধু বিতর্কিত কাশ্মীরের সীমানার অংশ নয়, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত যোগ রয়েছে চিনের। সে কারণে দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয় চিনকে। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর চলতি সপ্তাহে সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে ভারত-পাক সম্পর্ক। কিন্তু এবার আর চিনের ভূমিকা আগের মতো একপেশে বা পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক নয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই প্রথম ভারত-পাক সম্পর্ক ইস্যুতে চিনকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখা গেল। চিনের বিদেশমন্ত্রী ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই সংযত থাকতে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।
কিন্তু চিনের আচমকা এই বিদেশনীতি পরিবর্তনের কারণ কী?
কূটনৈতিক মহল বলছে, বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্ব বাণিজ্যের বর্তমান পরিস্থিতেই বেজিং অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। এই মুহূর্তে আমেরিকা-চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাঁটা পড়েছে। আমেরিকার সঙ্গে চলতে থাকা ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’-এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যের জন্য বেজিংকে বিকল্প বাজার খুঁজতে হচ্ছে। ঘরের কাছে ভারতের মতো ১২৫ কোটি জনসংখ্যার ভারত-সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া সেই বিকল্প বাজার হতে পারে বলে মনে করছে চিন। তাই তারা চাইছে না যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জেরে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বিঘ্নিত হোক। লন্ডনের এসওএএস ইউনিভার্সিটির চায়না ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর স্টিভ সাং বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনায় চিনের কোনও লাভই নেই। পাকিস্তানের পরাজয় চিন দেখতে পারবে না, আবার আমার মনে হয়, একই সঙ্গে চিন ভারতের সঙ্গে লড়াইয়েও যাবে না।” অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অস্থিরতারও পক্ষপাতী নয় চিন। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রকল্পে চিন বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে বসে আছে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে বাধাপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই প্রকল্প। ফলে চিনকে বিপুল আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ইসলামাবাদের উপর বিরক্ত বেজিং। তাই এই পর্বে আর পাকিস্তানের পাশে আর চোখ বুজে থাকবে না তারা।
তবে চিনের এই নীতি পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশনীতিকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন কোনও কোনও কূটনীতিবিদ। ২০১৭ সালে ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তে ডোকলাম উত্তেজনার পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্কে বদল আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। ২০১৮ সালে মোদির পর পর দু’বার চিন সফরের পর সেই সম্পর্কে উন্নতি হয়। ভারতের তরফে দক্ষ হাতে বিষয়টি সামলাচ্ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। সেই বিরামহীন চেষ্টারই ফসল ভারতের সঙ্গে চিনের অবস্থানের সাম্প্রতিক পরিবর্তন, মত বিশেষজ্ঞদের।
[দেশে ফিরেই অগ্নিপরীক্ষার মুখে অভিনন্দন]
The post যুদ্ধের আবহে কেন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়নি চিন? appeared first on Sangbad Pratidin.