সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নক আউট অভিশাপ কাটল না ভারতের। মরণবাঁচন ম্যাচে গিয়ে হারের ট্র্যাডিশনই ধরে রাখল রোহিত শর্মার দল। বিশ্বকাপ (T20 World Cup) সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে লজ্জাজনক ভাবে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল ভারত। প্রশ্ন উঠেছে, বড় ম্যাচে কেন জয় পেল না ভারত (India vs Engalnd) ? বিশ্বকাপের সুপার ১২ পর্যায়ে দুরন্ত খেলার পরেও কেন নক আউট থেকেই বিদায় নিতে হল রোহিতদের? টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে দৃশ্যতই ভেঙে পড়তে দেখাৃ গেল ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। মাথা নীচু করে বসেছিলেন তিনি। প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে দেখা গেল কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে। সব মিলিয়ে দিলটা খুবই খারাপ গেল ভারতের।
ভারতের এই লজ্জাজনক পরিণতির জন্য দায়ী কারা? এই তালিকায় প্রথমেই উঠে আসছে রোহিত শর্মার নাম। গোটা বিশ্বকাপে জঘন্য ব্যাটিং করে গিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। দুর্বল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে একটা হাফ সেঞ্চুরি ছাড়া কোনও ম্যাচেই রান পাননি তিনি। বরং ওপেন করতে নেমে অতিরিক্ত বল খেলেছেন রোহিত। ফলে অন্যান্য ব্যাটারদের উপরে রান তোলার চাপ পড়ছিল। সেমিফাইনালেও ২৮ বল খেলে মাত্র ২৭ রান করেন তিনি।
শুধু ব্যাটিং নয়, রোহিতের অধিনায়কত্ব নিয়েও একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। সেমিফাইনালে অ্যাডিলেডের মাঠে স্পিন সহায়ক উইকেটে যুজবেন্দ্র চাহালকে কেন খেলানো হল না? গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করা অর্শদীপ সিংকে পাওয়ার প্লে-তে মাত্র একটি ওভার দেওয়া হল। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া-রোহিতের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
রোহিতের ওপেনিং পার্টনারকে নিয়ে যত সমালোচনাই করা হোক না কেন, তা যথেষ্ট নয়। এশিয়া কাপ থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাট করে চলেছেন কে এল রাহুল। ওপেন করতে নেমে মন্থর গতিতে রান করেছেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাংলাদেশ ও জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন রাহুল। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ছন্দে ফিরছেন রাহুল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যখন দল তাঁর কাছ থেকে বড় রান আশা করছে, সেই মোক্ষম সময়ে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল। এর পরেও তাঁকে দলে রাখা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনার জায়গা থেকেই যায়। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ওপেনিং জুটি ডাহা ফেল। উলটে বাকিদের উপরে চাপ ফেলে দিয়েছে। শুরু থেকে উইকেট হারালে রান তোলার গতি কমে যায়। চাপ পড়ে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের উপরে। এই ছবি আগাগোড়া দেখা গেল এবারের টুর্নামেন্টে। সেমিফাইনালও তার ব্যতিক্রম নয়।
[আরও পড়ুন: নক আউটের অভিশাপ কাটাতে পারলেন না রোহিতও, সেমিফাইনালে ভারতকে পিষে দিল ইংল্যান্ড]
কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দল নির্বাচনে একাধিকবার ভুল করেছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। খারাপ ফর্ম সত্বেও দীনেশ কার্তিককে খেলিয়ে যাওয়া, ঋষভ পন্থকে সঠিক সময়ে না খেলানো-সমস্ত বিষয়ে রোহিতের পাশাপাশি দায়ী কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টও।
টুর্নামেন্টের গোড়া থেকে চলে আসা এই সমস্যার সঙ্গে যোগ হয় সেমিফাইনালে ভারতের জঘন্য পারফরম্যান্স। ব্যাটিং বা বোলিং-কোনও বিভাগেই দাগ কাটতে পারেননি রোহিতরা। ওপেন করতে নেমে একশোরও কম স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাট করে গেলেন অধিনায়ক। হার্দিক পাণ্ডিয়া-বিরাট কোহলিরা থাকলেও একেবারেই দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারেনি ভারত। অ্যাডিলেডের মতো মাঠে ইংল্যান্ডের পাওয়ারহিটারদের মোকাবিলা করতে অন্তত ১৮০ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে হত ভারতকে। কিন্তু সামগ্রিক ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ১৬৮ রানে আটকে গেল ভারত।
মরণ-বাঁচন ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় টস। কিন্তু সেমিফাইনালে টসের সময়ে রোহিত জানিয়ে দেন, প্রথমে ব্যাটিং করার পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। তাই টস হেরেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ইংল্যান্ডের ব্যাটিং শুরু হতেই দেখা গেল, একেবারে ছন্নছাড়া ভাবে বল করছেন ভুবনেশ্বররা। বোলিংয়ে কামড় নেই, শরীরী ভাষাতে নেই তীব্রতা। অল্প রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে যেরকম আক্রমণাত্মক ভাবে ফিল্ডিং সাজানো দরকার ছিল, একেবারেই সেরকমটা করেননি রোহিত। বোলাররাও অধিনায়ককে নির্ভরতা দিতে পারেননি।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দুরন্ত শুরু করেছিল ভারত। একসময়ে পাকিস্তানের ছিটকে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সেই জায়গায় বাবর আজমরা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল। আর বৃহস্পতিবার লজ্জাজনক ভাবে হেরে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় নিল ভারত।