নির্মল ধর, বার্লিন: আলো ঝলমলে বার্লিনে উদ্বোধন হয়ে গেল ৭০তম বার্লিন ফিল্মোৎসবের। এই প্রথমবার কোনও জার্মান অভিনেতা-স্যামুয়েল ফিনজি গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করলেন। অবশ্যই উৎসবের দুই নতুন পরিচালক কার্লো চটরিয়ান ও ম্যারিয়েট রিসেনবিক ছিলেন পিছনে। ওঁদের সামনে খুব একটা দেখা গেল না। আন্তর্জাতিক জুরি সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় শুধু তাঁরা এলেন মঞ্চে। তবে সত্তরে পড়ে গৌরবময় এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বড় রকমের এক কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে এল এবার।
এই বছর হঠাৎই বার্লিন ফিল্মোৎসব থেকে উধাও হয়ে গেল প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড বাওয়ারের নামাঙ্কিত পুরস্কারটি। কিন্তু কেন? এত বছর পর আবিষ্কার হল যে, আলফ্রেড আদতে ছিলেন হিটলারের প্রচার বিভাগের একজন সক্রিয় দায়িত্বশীল কর্মী। তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কার কে পাননি খ্যাতানামা আন্তর্জাতিক পরিচালকদের মধ্যে? আন্দ্রে ওয়াদা থেকে আগ্নিইস্কা হল্যান্ড, অন্তত ৩০ জন পরিচালকের ঝুলিতে গিয়েছে ‘আলফ্রেড বাওয়ার’ পুরস্কার। তবে হিটলারের সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় কিছুটা হলেও সেই সম্মান কর্দমাক্ত হয়েছে। অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন, এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর। তবে কেউই অবশ্য পুরস্কার ফেরত দেওয়ার কথা বলেননি। আর সেই জন্যই আলফ্রেড বাওয়ারের নামাঙ্কিত পুরস্কার এবার বাতিল হয়েছে। যাই হোক, বার্লিন উৎসবের এক বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ফাঁস হল এই ৭০ বছরে এসে।
উদ্বোধনী ছবি দেখেও কেউই প্রায় খুশি হননি। যেমন খুশি হচ্ছেন না আলফ্রেড বাওয়ারের লুকনো পরিচয় ফাঁস হয়ে। অনেক সাংবাদিক প্রকাশ্যেই বলছেন, বার্লিন কি এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই যাবে আগামিতে? বোঝা যাচ্ছে, উৎসব ঘিরে বাকি ক’টা দিন বেশ শোরগোল তুলেই কাটবে।
[আরও পড়ুন: ফের বিতর্কে মিকা সিং, গায়কের ম্যানেজারের আত্মহত্যা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন ]
উল্লেখ্য, এই প্রথম শুধু প্রধান জুরিদের নয়, অন্য বিভাগের জুরিদেরও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। জুরি সভাপতি অভিনেতা জেরমি আয়রন তাঁর বাকি ছয় সতীর্থকে নিয়ে একসঙ্গে লাল কার্পেটে হেঁটে মঞ্চে এলেন। জেনারেশন বিভাগের জুরিতে আছেন ভারতীয় সদস্য রিমা দাস। তাঁকে দেখা গেল রেড কার্পেট রিসেপশনে। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকলেন উদ্বোধনী ছবি ‘মাই সালিঙ্গার ইয়ার’ ছবির পুরো ইউনিট। পরিচালক ফিলিপ ফালারদ্যু ছাড়াও অভিনেত্রী আইসলে ইনগ্রাম, রোজিনা বুছি, নাদিয়া রওনা, জোয়ান আরাকফ। দর্শকদের চিৎকার ও হাততালিতে তাঁরা সংবর্ধিত হলেন। তার আগে হলে ঢুকেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী অধ্যাপক মনিকা গরুত্তর, শহরের মেয়র মাইকেল মুলার।
এবার হলিউড একপ্রকার অনুপস্থিত উদ্বোধনী সন্ধ্যায়। বরং শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অভিনেতা, পরিচালকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এসেছিলেন অন্যান্য উৎসবের পরিচালকরাও। চোখে পড়লো টরেন্টোর ক্যামেরন বেইলি, ভেনিসের আলবার্তো বারবারা, কান উৎসবের থিয়ের ফামুকে। নামী মানুষদের মধ্যে দেখা মিলল ফতেহ আকিন, হান্স পিটের মোল্যান্ড, ড্যানিয়েল ব্রুহল, উইম ওয়ানডআর্সদের। উৎসবের পুরনো পরিচালক ডিএটার কোসিলিককে ধারেকাছে কোথাও দেখা যায়নি। দেখা মেলেনি ফোরাম বিভাগের প্রতিষ্ঠাতাকেও। পুরনো সকলেই উধাও।
[আরও পড়ুন: ফের ছকভাঙা জুটি টলিউডে, ‘শ্রীমতি’ স্বস্তিকার স্বামী সোহম ]
এবার প্রতিযোগিতা বিভাগে নামী তেমন পরিচালকের ছবি নেই। নতুন একটি বিভাগ ‘এনকাউন্টার’ খোলা হয়েছে। চারদিকেই কেমন উত্তেজনার পরিবেশ। দেখা যাক, মতবিরোধের জল কতদূর গড়ায়। সত্তরে পৌঁছে এ যেন বদলের জন্যই বদল! নতুন প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘এনকাউন্টার’ কেন? কোনও সদুত্তর নেই! সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ প্রদর্শনীগুলো উলটোপালটা করে কী লাভ হল কেউই বুঝছেন না। সকলকেই বারবার হল থেকে হলে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে, বেড়েছে হয়রানি। তাও যদি নামী পরিচালকদের এক গুচ্ছ ছবি থাকত! তেমন ছবি জোগাড় করতে পারলেন কই দু’দুজন উৎসব পরিচালক!
The post বিতর্কে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব, বড়সড় কেলেঙ্কারি ফাঁস appeared first on Sangbad Pratidin.