বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: সেলিব্রেশন। করোনামুক্তির উজ্জ্বল উদযাপন। আলোকে, আমোদে উচ্ছ্বল অনুষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব শিকেয়। হবে না? একুশ দিন ঘরবন্দি থাকার পর মুক্ত বাতাসের পরশ মিলেছে যে! দিনটিকে স্মরণীয় করতে তাই চেষ্টায় কসুর করা হয়নি। একতিল খামতি রাখা হয়নি সমারোহে। গোটা বাড়ির গায়ে আলোর মালার সাজ, সামনে ফুলের গেট, ছাদেও হরেক রঙের রোশনাই। সঙ্গে ঢালাও খানাপিনা। এমনকী, পথচলতি মানুষকে লাড্ডু বিলিও বাদ নেই!
ঘটনাস্থল বরানগর। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ১১৮, বি কে মৈত্র রোড। যে ঠিকানার আবাসনটির বাসিন্দাদের এহেন কাণ্ডকারখানা দেখে এলাকাবাসীর চোখ কপালে। সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। সর্বব্যাপী করোনা আবহের মধ্যে এ ধরনের বেআক্কেলে আচরণের নিন্দা করেছে বরানগর পুর কর্তৃপক্ষও।
জানা গিয়েছে, ওই আবাসনে দিন পঁচিশ আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এক মহিলার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছিল। প্রশাসনের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে তিনি মারা যান। গোটা আবাসন জীবাণুমুক্ত করা হয়। আবাসনের প্রতিটি বাসিন্দাকে বাইরে বেরোতে কঠোরভাবে নিষেধ করে দেন প্রশাসনিক কর্তারা। আবাসিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে বাঁশ দিয়ে বাড়ির দু’টি গেট বন্ধও করে দেওয়া হয়েছিল। আনাগোনা রুখতে স্থানীয় থানা আবাসনের দোরগোড়ায় চব্বিশ ঘণ্টার পুলিশি নজরদারি বসায়। আবাসিকদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাতে লাগোয়া কয়েকটি দোকানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: লকডাউনে বাড়ি ফিরতে বাইক চুরি পরিযায়ী শ্রমিকের, পার্সেল করে ফেরত পাঠাল ‘চোর’]
প্রথম প্রথম ভালই চলছিল। গোল বাঁধে ক’দিন পর। ঠিক উল্টো দিকের আবাসনের লোকজনের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে গন্ডগোল শুরু হয়। একদিন রাতে তো জঞ্জাল ফেলাকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নেমে আসেন দু’টি আবাসনের বাসিন্দারা। সামাজিক দূরত্বের পরোয়া না করে চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে হাতাহাতিও চলে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় তখনকার মতো সামাল দেওয়া গেলেও এরপর থেকে হামেশাই খুঁটিনাটি বিষয়ে দু’পক্ষে বিবাদ, টিকাটিপ্পনি, গালিগালাজ চলছিল। আশপাশের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। গত ২ তারিখ প্রশাসনের তরফে ১১৮ বি কে মৈত্র রোডের আবাসনটি থেকে কনটেনমেন্ট জোনের সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সরিয়ে নেওয়া হয় পুলিশ প্রহরা। এরপরেই করোনামুক্তির সেলিব্রেশন করার তোড়জোড়ে নামেন আবাসিকরা। ফুল দিয়ে সাজানো হয় গেট। গোটা আবাসন সাজানো হয় আলোর মালায়। বরানগর পুরসভা ও স্থানীয় থানাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাগানো হয় বিরাট হোর্ডিং। আবাসনের ছাদে ছিল দেদার খানাপিনার আয়োজন। সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাতভর ‘করোনামুক্তি উৎসব’-এর জাঁকজমক দেখে অনেকেই হতবাক। প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি তাহলে করোনামুক্ত? আর করোনা আমাদের আক্রান্ত করবে না?
সংশ্লিষ্ট আবাসনের বাসিন্দারা কী বলছেন? তাঁরা মুখ খুলতে চাইছেন না। একান্তে কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, দীর্ঘ তিন সপ্তাহের বন্দিদশা সমাপ্তির আনন্দে কয়েক জন আবাসিক এই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে সবাই তাতে শামিল হননি। ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখছে না স্থানীয় প্রশাসনও। যেখানে প্রতিদিন দেশে হাজার হাজার মানুছ নভেল করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, প্রচুর মৃত্যু ঘটছে, সেখানে এই ধরনের আচরণকে দায়িত্বজ্ঞানবর্জিত ও অমানবিক হিসেবে অভিহিত করেছেন বরানগর পুরসভার জনস্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক দিলীপনারায়ণ বসু। তিনি জানিয়েছেন, খোঁজখবর শুরু করেছে পুরসভা।
[আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে দমবন্ধ জীবন, টাটকা হাওয়ার খোঁজে ফোনের টাওয়ারে উঠল মদ্যপ]
The post ২১ দিন পর কেটেছে বন্দিদশা, আবাসিকদের করোনা মুক্তির সেলিব্রেশনে স্বাস্থ্যবিধির দফারফা appeared first on Sangbad Pratidin.