কিশোর ঘোষ: আজব সাইকোলজি! ভয় ভাল লাগে। রক্ত, ছুরি, খণ্ড-বিখণ্ড দেহাংশের মধ্যে এক ধরনের ঘোর লাগা অ্যাডভেঞ্চার আছে। ঘটিগরম যেমন স্বাদের একঘেয়েমি কাটায়, তেমনই ভয়ের গন্ধ পেলে লকলক করে ওঠে মস্তিষ্কের জিভ। তাই ভূতের গল্প হিট, থ্রিলার সুপারহিট। অবশ্য শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়ার মতো থ্রিলার। যেমন, দিল্লি হত্যাকাণ্ড। শ্রদ্ধা-আফতাব। করাত। পিস পিস পিস। ফ্রিজ। রক্তস্রোত। লাভ জেহাদ? সেই আতঙ্কের আবহে ডিজনি হটস্টারে মুক্তি পেয়েছে শশাঙ্ক ঘোষ (Shashanka Ghosh) পরিচালিত হাড়হিম করা হলদে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ফ্রেডি (Freddy)। যাঁরা ভয় ভালবাসেন তাঁদের জন্য সুখবর। ভূতের মতো ঢপ না। বরং ‘আমি’। শান্ত, সুভদ্র সামাজিক আমি। এমনকী প্রেমিক। এক অভিঘাতে যার সভ্যতার পর্দা ভেঙে চুরমার। সামনে চলে এল নির্মম ঘিলুর সত্যি! সে প্রতিপক্ষকে এমন অন্ধকারে নিয়ে যায় টানতে টানতে, এমন কালো যন্ত্রণার টানেলে নিয়ে ফেলে, সেই শাস্তির কথা দুঃস্বপ্নে ভাবাও কঠিন!
শশাঙ্কর ছবি মুক্তির আগে নাকি কার্তিক আরিয়ানকে (Kartik Aaryan) নিয়ে কথা হচ্ছিল। রোম্যান্টিক হিরো তিনি, হাবাগোবা পারসি দাঁতের চিকিৎসক ফ্রেডি জিনওয়ালার চরিত্রে কেমন লাগবে! তাছাড়া নাচাগানা নেই, নায়িকার গাল টিপে আদর নেই, ঢিসুম-ঢিসুম তো বহুত দূর। জিনওয়ালা ভিতুর ডিম একটা। সে মেয়ে দেখলে দুটো জিনিস করে। প্রথমত, তোতলায়, দ্বিতীয়ত, ভয়ে ভয়ে কেন যেন মেয়েটির বুকের দিকে তাকায়। ফলস্বরূপ মেয়েরা ‘রিজেক্ট’ করে ক্যাবলাকান্তকে। এই জন্যেই পাঁচ বছর ঘটকালির ওয়েবসাইট ঘুরেও বিয়ে হয় না বেচারার। এক আন্টি, হার্ডি (হার্ডি এক চমক) আর জিনওয়ালার গা-ঘিনেঘিনে একঘেয়ে জীবন।
[আরও পড়ুন: মিমি-অর্জুনের রসায়নে জমে উঠল ‘খেলা যখন’, রহস্যেই বাজিমাত পরিচালক অরিন্দমের]
তবে এসবও স্বাভাবিক। কিন্তু ভয় পেতে, থ্রিল পেতে ভাল লাগে আমাদের, যখন প্রেমে পড়ে আঠাশ বছরের ফ্রেডি। পড়বি পড় এক্কেবারে অবৈধ! তাই বলে পাতি পরকীয়ার গপ্প বোনেননি পরিচালক। ‘দুপুর ঠাকুরপো’ চরিত্রে অভিনয় করতে হয়নি কার্তিক আরিয়ানকে। বরং প্রেম ভাঙে। প্রেমিকের বুকে ভারী হাতুড়ির বাড়ি মারেন খোদ প্রেমিকা। এবং মৃত্যু! মস্তিষ্কের মৃত্যু। আসলে আমাদের একেকটি সম্পর্ক মস্তিষ্কের ভিতরে একেকটি গল্প তৈরি করে। কোনও কোনও গল্প বড্ড বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে। সেই গল্প ভাঙলে বদলা চায় মস্তিষ্ক। কীভাবে সেই বদলা?
তা জানার জন্য মাত্র ২ ঘণ্টা ৪ মিনিট ভয়ের সঙ্গে ঘর করতে হবে আপনাকে। (যদিও উপভোগ্য দু’ঘণ্টাকে মনে হয় কয়েক মুহূর্ত মোটে)। গতখালির ভয় না, সত্যজিতের সেপ্টোপাসের খিদে নয়, নরখাদক ড্রাকুলা না, ভিনগ্রহের অতিমানব নয়, বরং বর্তমান এপৃথিবীর ভয় ধরানো মানসিক স্বাস্থ্য! যে কেবল পেতে চায়- আরও আরও আরও বাড়ি, টাকা, সম্পত্তি। এবং গোপনে বাড়ে বিলাসের বিষ! ভোগী দুনিয়ায় প্রেম হয়ে ওঠে মস্তিষ্কের বোড়েমাত্র। অন্য মূল্য নেই!
[আরও পড়ুন: গতে বাঁধা ছক ভেঙে দর্শকদের মন জয়ের চেষ্টা আয়ুষ্মানের, কেমন হল ‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’?]
এমন চরিত্রে কার্তিক যেটুকু করেছেন তাকে দুর্দান্ত অভিনয় বলেই মনে হয়। ফ্রেডির ‘প্রেমিকা’ কায়নাজের আতঙ্কিত সাইকো চরিত্রে মানানসই আলেয়া এফ। কাহিনির অন্য দুই চরিত্রে বেশ ভাল করণ পণ্ডিত ও সাজ্জাদ ডেলফ্রুজ। এই চার চরিত্র নিয়েই তো গল্প। যে গল্পই আসলে এই ছবির নায়ক-নায়িকা, মায় সবকিছু। ফলে সম্পাদনা, আবহসঙ্গীত ও পরিচালনার গুণে আশ্চর্য আতঙ্কের সুড়ঙ্গে পিছলে যায় দর্শকের মস্তিষ্ক। ছবি শেষে ভয় পাওয়ার আনন্দ তৃপ্ত হয়। আর ভয় জাগে আমার ‘আমি’কে নিয়ে!
ছবি – ফ্রেডি
অভিনয়ে – কার্তিক আরিয়ান, আলেয়া এফ, করণ পণ্ডিত ও সাজ্জাদ ডেলফ্রুজ
পরিচালনায় – শশাঙ্ক ঘোষ