চারুবাক: সত্যান্বেষীর কাহিনি নিয়ে ছবি করতে করতে এবার পরিচালক অরিন্দম শীল দারুণ একটা রহস্য, জেহাদি, দেশপ্রেম, মানসিক রোগ ও অ্যাকশনময় ছবি উপহার দিলেন বাঙালি দর্শককে! আমাদের টলিউডও যে আন্তর্জাতিক জেহাদিদের কাজকর্ম নিয়ে ভাবে এবং বেশ জমাটি চিত্রনাট্য লিখতে পারে তার প্রমাণ তাঁর নতুন ছবি ‘খেলা যখন’ (Khela Jawkhon)। যে ছবিতে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ থাকে, আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সঙ্গে জেহাদিদের যোগাযোগ থাকে। কিন্তু তাদের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের খুব একটা দৃশ্য থাকে না।
ছবিতে যেটুকু জেহাদি কাজকর্ম আছে সেটা শুধু একটা পরিবারকে ঘিরে। সাগ্নিক (অর্জুন) ও উর্মির (মিমি) সুখের দাম্পত্য। এক কিশোর সন্তানও আছে। হঠাৎ এক গাড়ি দুর্ঘটনায় সাগ্নিক-উর্মির একমাত্র ছেলের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায় উর্মি। তার শ্বশুরবাড়ি ওড়িশায়। বেশ সুন্দর ময়ূরভঞ্জের রাজবাড়ির লোকেশন বেছেছেন অরিন্দম। ওখানেই দৃষ্টিনন্দন পাহাড় আধা শহর জায়গাটি দর্শককে চোখের আরাম দেয়।
কিঞ্চিৎ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে উর্মি শুনতে পায় বান্টি মারা যায়নি। সন্তানকে কাছে পেতে চায় সে। কিন্তু স্বামী, বাবা(হর্ষ ছায়া), শ্বশুর (বরুণ চন্দ), শাশুড়ি(অলকানন্দা) সকলেই বলে উর্মির সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। অযথা কল্পনাকে সত্যি বলে ভেবে নিচ্ছে সে। এর মধ্যেই আবার বাড়িতে ঢুকে পড়ে হারিসাধন (অর্ণ) নামের এক রহস্যময় তরুণ। সেই-ই উর্মিকে জানায় তার সন্তান বেঁচে রয়েছে। সুতরাং রহস্যের জাল বড় হতে থাকে। বাবার সঙ্গে মেয়ের ফোনালাপেও তৈরি হয় রহস্যের আবহ।
[আরও পড়ুন: জাহ্নবী হয়ে ছোটপর্দায় ফিরছেন ঐন্দ্রিলা, আবারও শুরু হচ্ছে ধারাবাহিক ‘জিয়নকাঠি’]
সুতরাং অরিন্দম শীল (Arindam Sil) জম্পেশ এক থ্রিলারের জমি তৈরি করে দেন ছবির ‘ইন্টারভ্যাল’ পর্যন্ত। সাগ্নিকের প্রকৃত পরিচয় কী? উর্মি কি সত্যিই মানসিক রোগী? দোকানে সই করতে গিয়ে উর্মি কেনো নিজের নাম অপর্ণা লিখল? মেহজাবিন নামটাই বা আসছে কেন? ব্যাংকের হত্তাকর্তা মহিউদ্দিন কামাল আসলে কে? এসবের সমাধান জানতে হলে একবার ‘খেলা যখন’ দেখতেই হবে। অরিন্দম শীল চিত্রনাট্যের বুননে খেলা জমিয়ে দিয়েছেন থ্রিলারের দর্শকের জন্য। তাঁর চিত্রনাট্যে খেলার সাথীরা কিন্তু সবাই রহস্যের মুখোশটি সারাক্ষণ বেশ সুচারুভাবেই মুখে পরেছিলেন।
এক্ষেত্রে প্রথম নাম অবশ্যই মিমি চক্রবর্তীর (Mimi Chakraborty) নিতে হবে। তাঁর মন ও শরীরের উপর ঝক্কি কম যায়নি। কিন্তু বেশ শক্ত ও সাবলীল হাতে তিনি সামলে নিয়েছেন সবটাই, এমনকী অ্যাকশন দৃশ্যও। সাগ্নিক হয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তী (Arjun Chakraborty)। চরিত্রের দ্বিচারিতা ভাব প্রকাশে তিনি খুব কৌশলী। বেশ ভালো। বরুণ চন্দ, এমনকী অলকনন্দাও দুর্দান্ত অ্যাকশন শট দিয়েছেন। হর্ষ ছায়া ভদ্র এবং নম্র ভিলেন। অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ে কিঞ্চিৎ কমেডির ছোঁয়া মন্দ লাগবে না। তবে একেবারে শেষ দৃশ্যে অরিন্দম নিজে হাজির হয়ে চূড়ান্ত চমক দিয়েছে। তাতে প্রশ্ন জাগল, এবার কি তাহলে সিক্যুয়েলের পালা?
ছবি – খেলা যখন
অভিনয়ে – মিমি চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, বরুণ চন্দ, অলকানন্দা রায়, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
পরিচালনায় – অরিন্দম শীল