নির্মল ধর: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’ যেমন খুন বা রহস্যের কিনারা শুধু করে না, সত্যের সন্ধানও করে, কখনও কখনও খুনিকেও শাস্তির হাত থেকে মুক্তি দেয়। আবার রহস্য সন্ধানে ফেলুদার হাতিয়ার মগজাস্ত্র। লালবাজারের গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত (Shabor Dasgupta) কিন্তু বলতে গেলে এই দু’জনের এক ককটেল। শবর মগজ যেমন ব্যবহার করে, তেমনি দুষ্টের দমনে হাত ও রিভলবার চালাতেও এতটুকু সময় নেয় না।
বলা হয়, পরিচালক অরিন্দম শীলের অনুরোধেই নাকি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এই ‘শবর’ চরিত্র এবং তাকে নিয়ে গল্প তৈরি করছেন। অর্থাৎ এটা বলা ভাল শবরের কাহিনি অনেকটাই পরিচালকের ইচ্ছে অনুযায়ী। শবরের গোয়েন্দা গল্প পরপর কয়েকটি হিট হওয়ায়, এবার চতুর্থ কাহিনি এল ‘তীরন্দাজ শবর’ (Tirandaj Shabor) নামে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক গল্পের ছায়া যে এই গল্পে পড়েছে, এটা দর্শকও বুঝতে পারবেন। প্রেম, পরকীয়া, শরীরের চাহিদা তো আছেই, রয়েছে একজন তরুণ ট্যাক্সি ড্রাইভার। এক বর্ষণ মুখর রাতে সিঁথি থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে বালিগঞ্জের পথে যাত্রা শুরু করে। পথে দু’জন যাত্রী নেমে গেলে শেষে অচৈতন্য যাত্রীকে নিয়ে সে সোজা গাড়ি নিয়ে যায় থানায়। পুলিশ আবিষ্কার করে যাত্রী মৃত।
[আরও পড়ুন: অবহেলিত উত্তর পূর্ব ভারতের কাহিনি ‘অনেক’, কেমন অভিনয় করলেন আয়ুষ্মান খুরানা?]
এই মৃত্যুর তদন্তের স্বার্থেই শবর দাশগুপ্তের আগমন। থানার অফিসারের ডাকের
তোয়াক্কা না করেই। অবশ্যই তিনি একা নন, সঙ্গে দোসর ভ্যালারাম ‘নন্দ’। শবর একাই গাড়িতে খুন হওয়া ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর ব্যবসায়িক ঝামেলা, স্ত্রীর প্রেমিকার সঙ্গে সমঝোতা করা, আবার প্রয়োজনে সুপারি কিলারের সাহায্য নিয়ে খুন করানো, সমস্ত কিছু বেশ তড়িৎ গতিতে করে ফেলেন। দর্শকের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো করে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পদ্মনাভ ও অরিন্দম নিজে।। আর তাতে শবর ও নন্দর (শুভ্রজিৎ দত্ত) জুটি জমজমাট। দু’জনের অভিনয় ও সমঝোতার সমীকরণ সুন্দর। পরিচালক অরিন্দম শীল ব্যবসায়িক দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন।
সুরকার বিক্রম ঘোষ আবহ রচনায় যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, গান দু’টিতে সেই জোশ নেই। অয়ন শীলের ক্যামেরার কাজ চোখে পড়ে বটে, কিন্তু অহেতুক ড্রোন ব্যবহারের ব্যাপারটা কি এখন ‘স্টাইলে’র পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে? অভিনয়ে মুখ্য চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee) আগের মতোই কর্তব্যে অবিচল। শুভ্রজিৎও একইরকম। দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার তেমন সুযোগ পাননি চিত্রনাট্য থেকে। অরিন্দম শীল খলনায়ক সেজে মন্দ করেননি। খুব অল্প সুযোগে রম্যানি মণ্ডল নজর কেড়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি প্রবীণ অভিনেতা চন্দন সেনও অনবদ্য। ড্রাইভারের চরিত্রে নাইজেল আক্কারা বেশ স্বাভাবিক।
ছবি – তীরন্দাজ শবর
অভিনয়ে – শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, নাইজেল আক্কারা, শুভ্রজিৎ দত্ত, দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার, চন্দন সেন, দীগন্ত বাগচি, রম্যানি মণ্ডল
পরিচালনায় – অরিন্দম শীল