নির্মল ধর: ‘X= প্রেম’, ছবির নামটা শিলাজিতের একটি গানের অ্যালবাম থেকে ধার করেছেন সৃজিত। সেখানে ছিল “ঝিন্টি তুই বৃষ্টি হতে পারতিস…”, এখানেও বৃষ্টির অনুসঙ্গ এসেছে ময়দানে প্রেমের পরিমণ্ডলে, সে এক দারুণ দৃশ্য! এমন রোমান্টিক প্রেমের দৃশ্য এর আগে বাংলা ছবিতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না। নায়ক খিলাত ময়দানের জলকাদার মধ্যে একেবারে দু’পা ছড়িয়ে পড়ে যায়। নায়িকা জয়ী তখন বৃষ্টির ধারায় তো বটেই প্রেমের ধারাতেও স্নাত। পুরো ছবি জুড়েই তাদের প্রেমের রামধনু রং। সেই রঙের স্মৃতি দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলার ফলে মস্তিষ্কের সাদা ক্যানভাসের প্রেক্ষাপটে এগোয় ছবির কাহিনি।
খিলাত নামের তরুণ কাজের সময়ের আংশিক স্মৃতি ফিরে পায় একজন বিদেশি চিকিৎসকের সাহায্যে। কিন্তু পায় না কলেজ জীবনের প্রেমের স্মৃতি। ডাক্তারের পরামর্শ- যদি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় যার স্মৃতিতে জয়ীকে লুকিয়ে ভালবাসার স্বপ্ন সে নীরবে বুনেছে। তাহলে লাভ হতে পারে। পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার সৃজিত (Srijit Mukherji) সুকৌশলে বিরতির ঠিক আগের মুহূর্তে সেই নীরব প্রেমের ইঙ্গিত রাখেন অর্ণব নামের এক উজ্জ্বল ছাত্রের ক্ষণিক উপস্থিতিতে।
[আরও পড়ুন: Chaitali Lahiri: ‘বরটা বড়ই বোকা…’, কেকে বিতর্ক নিয়ে এবার কবিতা লিখলেন রূপঙ্করের স্ত্রী]
পরের পর্ব শুরু হয় অর্ণবকে খুঁজে পাওয়ার কাহিনি দিয়ে। এদিকে অর্ণবও জয়ীর প্রতি নীরব প্রেমকে বুকে চেপে রেখেই বিয়ে করে অদিতিকে। আপাতদৃষ্টিতে সুখের সংসার। কিন্তু অর্ণবের বুকে যে জয়ী ভালবাসা নীরবে জীবন্ত রয়ে গিয়েছে, সেকথা তার স্ত্রী অদিতিও জানে। এবার অন্তত ১৫ বছর আগেকার কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, খোঁজাখুঁজি চলতেই থাকে। পাওয়া যায় অর্ণবকে। স্মৃতি ট্রান্সপ্লান্টেশন! অর্ণবের মাথায় থাকা জয়ীর স্মৃতি ঢুকিয়ে দেওয়া হবে খিলাতের মস্তিষ্কে। গবেষক ডাক্তার সাফল্যের সঙ্গেই কাজটা করলেন। এক বছর পর জানা গেল, অর্ণবের স্মৃতি খিলাতের মস্তিষ্ক নিতে পারেনি, বাতিল করেছে। এর পরেরটুকু দেখার জন্য অবশ্যই একবার অন্তত হলে ঢুকতেই হবে।
কলেজের পরিবেশে গাঁজা, মদ, LSD-র মৌতাতে মেশানো উঠতি বয়সের প্রেম নিয়ে এমন আধুনিক মনস্ক ও এখনকার চলতি ভাষার ব্যবহারে এমন সাবলীল সিনেমা খুব একটা দেখেছি কি? না, দেখিনি। এবং প্রায় পুরো ছবির শরীরে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গানের এক কাশ্মীরি কারুকাজের শাল। গান এই ছবির প্রাণবিন্দু! সপ্তক-সানাই সত্যিই এক আবিষ্কার, যেমনটা পেয়েছিলাম অনুপম রায়কে ওঁর প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’-এ। গান বাদ দিয়ে ‘X=প্রেম’ মিষ্টি ছাড়া পায়েস!
নতুন তিন শিল্পীর (খিলাত – অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, জয়ী – শ্রুতি দাস ও অদিতি – মধুরিমা বসাক) অভিনয়ও চোখ ভরিয়ে রাখে। শ্রুতি এবং অনিন্দ্যর জুটি যেন ‘মেড ফর ইচ আদার’। মধুরিমা দু’টি নাটকীয় মুহূর্তে খুবই প্রভাবশালী। আর নীরব প্রেমিক অর্ণববেশী অর্জুন চক্রবর্তী (Arjun Chakraborty) কেমন সাবলীল ভঙ্গিতেই দর্শকের সমবেদনা আদায় করে নেন।
এই ছবি আজকের Z প্রজন্মের কাছে ‘আই ওপেনার’ হয়ে উঠতে পারে। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ক’বছর আগে ‘নির্বাক’ নামে আরও একটি প্রেমের ছবি করেছিলেন, তখন মনে হয়েছিল ছবিটি সময় থেকে একটু এগিয়ে! এই ‘X=প্রেম’ও বাংলা প্রেমের সিনেমায় বেশ পরীক্ষাধর্মী এবং সময়কে ডিঙিয়ে যাওয়া একটি ছবি। কারণ এই গল্পের পরিমণ্ডলটাই ভবিষ্যতের।
ছবি – X= প্রেম়
অভিনয়ে – অর্জুন চক্রবর্তী, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, শ্রুতি দাস, মধুরিমা বসাক
পরিচালনায় – সৃজিত মুখোপাধ্যায়