নির্মল ধর: ‘সমরেশ বসুর প্রজাপতি’ এখন সুব্রত সেনের হাতের মুঠোয়। হাতটি না ডুবিয়েই পরিচালক ‘প্রজাপতি’কে তাঁর নিজের ভাবনায় শুদ্ধ করে আজকের পরিস্থিতির সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন। সত্যি বলতে কি, মূল লেখার নায়ক অর্থাৎ মস্তান সুখেন এখনও আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের আশপাশে। তারা প্রহরী হিসেবে পেয়েছে একদল দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাকে। সময় যত এগিয়েছে, নেতা-মস্তানের যোগসাজশ তত বেশি নিবিড় হচ্ছে।
কলকাতা শহরকে সরিয়ে সুব্রত সেন গল্প সাজিয়েছেন ছোট্ট এক শহরতলিকে কেন্দ্র করে। কারখানায় যেমন শ্রমিক আছে, আছে শ্রমিকের আন্দোলন এবং কুকীর্তির মুকুট মাথায় নিয়ে ভগবানের মুখোশ এঁটে রাজনৈতিক নেতারা পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে যান। মদত পেয়ে মস্তানরা আরো হিংস্র হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই আবার রয়েছে বার নাচিয়ে তরুণী শিখার আসনাই পর্ব।
ছবিতে সুখেন যে শুধু মস্তানি করে তা নয়, অফিসের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে সে কিন্তু পুরনো মাষ্টারমশাইকে তাঁর পেনশনও পাইয়ে দেয়। উঠতি মস্তানের (ঋতব্রত) বেপরোয়া মানসিকতাও দেখা গিয়েছে ছবিতে। ভাল আর মন্দের দ্বন্দ্ব রয়েছে সুব্রতর ছবিতে।
[আরও পড়ুন: ‘গেরুয়া চাপিয়ে যেটুকু করে খাচ্ছেন, একবিন্দুও জুটত না’, স্বামীজি-রামকৃষ্ণর নিন্দুককে তোপ শ্রীজাতর]
ষাটের দশকের সামাজিক পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতিতে তফাত বিস্তর। প্রায় চল্লিশ বছরের ব্যবধান সত্ত্বেও সুব্রতর পরিবেশনের মুন্সিআনা ছবিটিকে ‘সমরেশ বসুর প্রজাপতি’কে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। তিনি কোনও চরিত্রকেই পুরো কালো বা সাদা করে দেখানি, ভাল ও মন্দের দ্বন্দ্ব নিয়েই তারা বাঁচে। সমরেশ বসু যেখানে সামাজিক চেহারার কোন উত্তরণের ইঙ্গিত রাখেন না, সুব্রত গুরুতর আহত সুখেনের চোখের পাতার নরম চড়ন দেখিয়ে এক আশার অধ্যায় শুরু করেন।
যাঁরা সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমায় সময়ের প্রতিফলন দেখতে পান না বলে দাবি করেন, তাঁদের জন্যই এই ছবি। গোয়েন্দা কাহিনি আর প্রেমের প্যানপ্যানানি একটু সরিয়ে রেখে দর্শককে বাস্তবের মুখোমুখি করিয়ে দেয় ‘সমরেশ বসুর প্রজাপতি’। শিল্পীদের সম্মিলিত অভিনয় ভালষ। সুখেন ও উঠতি মস্তানের চরিত্রে সুব্রত দত্ত ও ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় চামড়ার নিচে পৌঁছে অভিনয় করেছেন।
বাংলা সিনেমায় সুব্রত এখনও যে কেন ‘অতিথি’ শিল্পী হয়ে আছেন বুঝতে পারি না। তিনি সুখেনকে জীবন দিয়েছেন। ঋতব্রত সম্ভাবনাময় শিল্পী, তাঁকে অভিনন্দন। মমতাজও অসাধারণ। অভিনেত্রীকে এখনও তেমন করে এক্সপ্লোর করলেনই না কলকাতার ছবিওয়ালারা। সবশেষে বলা যায়, ‘সমরেশ বসুর প্রজাপতি’ তাই সুন্দর চেহারায় ‘সুব্রত সেনের প্রজাপতি’ হয়ে উঠেছে।
ছবি – সমরেশ বসুর প্রজাপতি
অভিনয়ে – সুব্রত দত্ত, মুমতাজ সরকার, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, শ্রীতমা দে প্রমুখ
পরিচালনায় – সুব্রত সেন