অর্ণব আইচ: আজ থেকে শুরু হচ্ছে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলার বিচারপর্ব। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে। এদিন প্রথমেই নির্যাতিতার বাবার সাক্ষ্যদান করার কথা। সেইমতো এদিন দুপুর দুটোর আগেই নির্যাতিতার বাবাকে হাজির হতে বলা হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। দুপুর দুটোর পর থেকে রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুরু হবে মামলার বিচারপর্বের শুনানি।
আদালত সূত্রের খবর, প্রথমদিন নির্যাতিতার বাবা উপস্থিত হলে তাঁকে সিবিআইয়ের আইনজীবী ও অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের আইনজীবীরা পরপর ‘ক্রস’ করতে পারেন। সাক্ষীর বক্তব্য নথিভুক্ত করবেন বিচারক। সূত্রের খবর, শনিবারই সিবিআইয়ের দুই আধিকারিক সোদপুরে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলেন। বিচারকের নির্দেশমতো অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে সরাসরি অথবা ভারচুয়াল পদ্ধতিতে বিচারের সময় উপস্থিত থাকতে হতে পারে। এদিকে, এদিনই নির্যাতিতার ধর্ষণ ও খুনের মামলায় তথ্য এবং প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ধৃত আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধেও চার্জশিট পেশ করতে পারে সিবিআই। সেই ক্ষেত্রে এই ধর্ষণ ও খুনের মামলায় এটি দ্বিতীয় তথা অতিরিক্ত চার্জশিট হিসাবেই গণ্য করা হবে।
গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় নির্যাতিতার দেহ। ময়নাতদন্তের পর রাতেই উত্তর কলকাতার সিঁথি থানায় ধর্ষণ ও খুনের মামলা শুরু হয়। পরের দিন কলকাতা পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে। হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তভার হাতে নেয়। টানা তদন্তের পর গত ৭ অক্টোবর কলকাতা পুলিশের হাতেই ধৃত একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। গত ৪ নভেম্বর সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে শিয়ালদহের এডিজে আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। সেদিনই বিচারক জানিয়ে দেন যে, ১১ নভেম্বর, সোমবার থেকে শুরু হবে মামলার বিচারপর্ব বা ‘ট্রায়াল’। ছুটির দিনগুলি ছাড়া প্রায় প্রত্যেকদিনই বিচারপর্ব চলবে। আদালতের সূত্র জানিয়েছে, আজ ‘ট্রায়াল’-এর শুরুতেই নির্যাতিতার বাবাকে দিয়েই শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রথমদিন একজনের সাক্ষ্যই নেওয়া হবে বলে সিবিআইকে জানিয়েছে আদালত। সূত্রের খবর, এর পর নির্যাতিতার মায়ের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। তাঁর গাড়ির চালকেরও সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। এখনও পর্যন্ত সিবিআইকে জানানো হয়েছে যে, মামলার শুনানি চলাকালীন ৫১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। যদিও সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটে সাক্ষীর সংখ্যা ১২৮ জন। সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, দিনে দুই বা তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। ফলে ডিসেম্বর মাসের চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে বিচারপর্ব শেষ করতে পারেন বিচারক।
নির্যাতিতার পরিবার ও পরিজন ছাড়াও তাঁর চারজন সহকর্মী চিকিৎসক, যাঁরা গত ৮ আগস্ট তাঁর সঙ্গে ডিউটিতে ছিলেন ও একসঙ্গে ডিনার করেছিলেন, তাঁদের সাক্ষ্যর উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনজন মহিলা চিকিৎসক, চেস্ট বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসকের সাক্ষ্যর উপর গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়াও আর জি কর হাসপাতালের ফাঁড়ির যে আধিকারিক প্রথম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তাঁর সাক্ষ্যও গুরুত্বপূর্ণ। যে সিভিক ভলান্টিয়ার গত ৮ আগস্ট বিকেল থেকে ৯ আগস্ট ভোররাত পর্যন্ত সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে ছিলেন, তাঁর ও সঞ্জয়ের ‘মেন্টর’ বলে পরিচিত এক পুলিশ আধিকারিকের সাক্ষীর উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ময়নাতদন্তে উপস্থিত থাকা তিন চিকিৎসকের সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ও এইমস তথা কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সিবিআই।