রমেন দাস: আর জি করে অসাধ্য সাধন। এবার কাটা হাত জোড়া লাগিয়ে নজির গড়লেন চিকিৎসকরা। প্রায় ৭ ঘণ্টার চেষ্টায় বিরল অস্ত্রোপচার করে তাক লাগালেন প্ল্যাস্টিক সার্জনরা। কব্জি থেকে কেটে যাওয়া হাতকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়েছেন চিকিৎসকদের দল। কাজ করতে করতে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও ফের বেঁচেছেন হাওড়ার এক শ্রমিক।

কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল আসলে? আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্ল্যাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য জানান, ''আমার বিভাগের চিকিৎসক-ছাত্ররা মিলেই এই নজির গড়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আর জি করের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আসেন হাওড়ার এক ব্যক্তি। ততক্ষণে গোল্ডেন আওয়ার পেরিয়ে গিয়েছে। তারপর প্ল্যাস্টিক সার্জারি এবং অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসরা মিলে ওই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। যা সত্যিই নজির!''
ওই অস্ত্রোপচারের কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্ল্য়াস্টিক সার্জেন দীপ্রসত্ত্ব মহাপাত্র। তিনি বলেন, ''অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। কব্জি থেকে হাত কেটে যাওয়ায় বিভিন্ন শিরা-উপশিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগীর প্রবল রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অন্যদিকে আমাদের কাছে আসতেও ওঁদের বেশ কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু ট্রমা কেয়ারে রোগী দেখার পরেই যাবতীয় পদ্ধতি শুরু হয়। চিকিৎসা শুরু হয়। সেদিন ভোর পর্যন্ত অস্ত্রোপচার চলে। অবশেষে সফল হয়েছি আমরা।''
আর জি কর হাসপাতালে ওই অস্ত্রোপচারের কাজে যুক্ত ছিলেন প্ল্যাস্টিক সার্জন অপূর্বকুমার নায়েক, বিকাশচন্দ্র দে। ওই বিভাগের চিকিৎসক ফারিয়া সাহাবুদ্দিনের তত্ত্বাবধানে এই কাজ হয়। ওটিতে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক অর্পিতা চৌধুরী, অনিকেত মাহাতো, যে অনিকেতকে আন্দোলন আবহে বারবার দেখা গিয়েছে পথে। এখনও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ৫৮ বছর বয়সের ওই রোগী। যিনি হাওড়ার শ্যামপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। যদিও ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার ডোমজুড় এলাকায়।
কিন্তু কেন এই ঘটনাটি বিরল? চিকিৎসকরা বলছেন, আঙুল জোড়া লাগানো অথবা ছোট কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রে কাজে খানিকটা সুবিধা থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কব্জির নিচের অংশ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় হাত। অন্যদিকে মেশিনে বাম হাতটি কাটার ফলে আনুষাঙ্গিক সমস্যা ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে, অসাধ্য সাধনে সন্তুষ্ট চিকিৎসরাও! অনেকেই বলছেন, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং আর জি কর আবহে এমন নজির রেকর্ডই বটে!