অর্ণব দাস, বারাকপুর: বহু আশা করে মেয়ের সুবিচারের জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের দিকে চেয়েছিলেন। কিন্তু, লাইভ স্ট্রিমিং করা হবে না, এই অজুহাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক জুনিয়র ডাক্তাররা ভেস্তে দেওয়ায় যারপরনাই হতাশ আর জি করে নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। তাঁদের বক্তব্য, বৈঠকটা হলে ভালো হত। কোনও সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসত। শুক্রবার স্পষ্টতই খেদের সুরে তাঁরা জানালেন, এখন সুপ্রিম কোর্টের শুনানির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই তাঁদের কাছে।
পাশাপাশি, এসবের মাঝে মেয়ের তদন্তের আসল গতিপ্রকৃতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
মেয়ের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নির্যাতিতার মা-বাবা জানান, মেয়ের তদন্ত কোন পর্যায়ে আমরা তা বুঝতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিরও এখনও উত্তর পাইনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রদের মিটিং হওয়ার কথা ছিল, সেটাও ভেস্তে গিয়েছে। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকেই এখন চেয়ে আছি। নির্যাতিতার বাবা-মা মনে করেন, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা হয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত ছিল। কারণ, জুনিয়র ডাক্তাররা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুঘণ্টার বেশি নবান্ন সভাকক্ষে অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে প্রথমে ১৫ জন আন্দোলনকারীর আসার কথা থাকলেও এসেছিলেন ৩৪ জন। মুখ্যমন্ত্রী তা মেনেও নেন। কিন্তু শেষমুহূর্তে লাইভ স্ট্রিমিং করতে দিতে হবে বলে অনড় থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সরকারের তরফে বৈঠকের ভিডিও রেকর্ডিং করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও আন্দোলনকারীরা তা মানতে চাননি। শেষমেশ ডাক্তারি পড়ুয়াদের জেদের কারণে বৈঠক ভেস্তেই যায়। পরে, মুখ্যমন্ত্রী জানান, আর জি কর কাণ্ড বিচারাধীন বিষয় বলেই বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি মানা রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এনিয়ে নিজেদের শর্তের জেদে অনড় থেকে নবান্নে এসেও বৈঠকে যোগ দেননি জুনিয়র চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন নির্যাতিতার মা।
শুক্রবার ফোনে তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যা হল খুব খারাপ হল। ছাত্ররা আন্দোলন করছে, ওদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাও ওরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এনিয়ে যা বলার বলছেন। আমি এর বেশি আর কী বলব। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রদের বৈঠকটা হলে ভালো হত। হয়তো একটা সুষ্ঠু সমাধান আসত।’’ পাশাপাশি মেয়ের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত এখন ঠিক কোন পর্যায়ে সেটাও তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয় বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘মেয়ের তদন্ত এখন ঠিক কোন পর্যায়ে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি না। আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে চেয়ে বসে আছি।’’
তবে যাই হোক, তাঁরা যে আন্দোলনের পথ ছাড়ছেন না তাও দৃঢ়কণ্ঠে এদিন জানিয়েছেন। এনিয়ে সন্তানহারা মায়ের সংযোজন, ‘‘আমাদের মেয়েটা তো আর ফিরে আসবে না। তবুও মেয়ে ন্যায়বিচার পেলে হয়তো মনে একটু শান্তি হবে। তাই শুধু আন্দোলন কেন, যতদূর যেতে হয় আমরা যাব।’’ মৃতার মা মনের কষ্টের কথা লিখে পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ আরও অনেককে। সেই চিঠিও পৌঁছে গিয়েছে তাঁদের কাছে। কিন্তু কোনও উত্তর এখন তাঁরা পাননি। এ নিয়েও যথেষ্ট আক্ষেপ রয়েছে মায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘চিঠি দিন দুই তিনেক আগে পৌঁছেছে। সেই রিসিভ কপি আমাদের কাছে এসেছে। কিন্তু কেউ যোগাযোগ করেননি। তাঁদের থেকে উত্তর পাওয়ার আশায় আছি।’’ এদিনও তিনি আন্দোলনকারী সকলের কাছে আবেদন করেন, সমস্ত রাজ্য তথা দেশবাসী, চিকিৎসক যাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁরা সকলেই আমার পরিবার। তাঁরা যেন এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যান, এই অনুরোধ করব।