সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডে পথে নেমে সরব হওয়ার পর থেকেই নেটপাড়ার একাংশের 'টার্গেট' টলিউড শিল্পীরা। এমনকী তাঁদের সিনেমা, শো পর্যন্ত বয়কটের ডাক দিয়েছেন অনেকে। এর আগে আর জি কর হাসপাতালে প্রতিবাদ করতে গিয়ে 'চটিচাটা বুদ্ধিজীবী' বলে কটাক্ষ করা হয়েছে অপর্ণা সেনকে। শাঁখ বাজানো নিয়ে কখনও ট্রোলড হতে হয়েছে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে, আবার চোখের জল ফেলে 'কুম্ভীরাশ্রু' কটাক্ষ শুনেছেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এই আন্দোলনে যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা 'রাজনৈতিক' না 'অরাজনৈতিক' সেই প্রশ্ন তুলেও কম কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে না! পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কেও 'তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ' শিল্পী বলে তকমা সাঁটিয়েছেন একদল নেটাগরিক। এবার সেই প্রেক্ষিতেই আর জি কর কাণ্ড নিয়ে শাসক-বিরোধীদের একযোগে বিঁধলেন পরমব্রত (Parambrata Chatterjee)।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে পরমব্রতর প্রশ্ন, "মাননীয়া দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর দলের বিরুদ্ধে অনেকক্ষেত্রে অনেক অভিযোগ অনুযোগ থাকা সত্ত্বেও, ওঁর সার্বিক কাজের জন্যে, মানুষ আস্থা রেখে বারবার ওঁর ঝুলি ভোটে ভরিয়ে দিয়েছে! কিন্তু এরকম একটি জরুরি এবং স্পর্শকাতর সময়ে প্রত্যুত্তরে কী করলেন? লক্ষ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ কেবলই বিরোধীদের চক্রান্ত বা রাম-বাম নেক্সাস? আর জি করে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা হল কেন? আর সেটিকে আবার বিরোধীদের কাজ বলে চালানোর কী অর্থ?"
রাজ্যের শাসকদলের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়লেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, "বেশির ভাগই পুরোনো প্রশ্ন। কিন্তু তাও করে যেতে হবে , বারবার। এরকম একটি ঘটনা একটি সরকারি হাসপাতালের অন্দরে ঘটে কি করে? তাও আবার মহিলাদের জন্যে সুরক্ষিত বলে পরিচিত কলকাতা শহরের বুকে? তড়িঘড়ি যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই সিভিক পুলিশকর্মী যদি সত্যিই দোষী হন, তাহলে তিনি রাতে হাসপাতালের ভিতরে কী করছিলেন? ওটা কি তার ডিউটি ক্ষেত্র? বোঝাই যাচ্ছে পুরো সিস্টেমের ভেতরে বাসা বেঁধেছে প্রচুর ঘুণপোকা। সেগুলি সময় থাকতে চিহ্নিত করার দায়িত্ব আপনাদের প্রশাসনের নয়? এই ঘটনার পর প্রশাসনের ভূমিকা কি এরকম হওয়ার কথা ছিল? আপনাদের মনে হয় এই ভয়াবহ ঘটনার পরবর্তী সময়ে আপনাদের পরিস্থিতি হ্যান্ডলিং যথাযথ হয়েছে? কখনও অস্বাভাবিক মৃত্যু কখনও আত্মহত্যা বলার চেষ্টা কেন হবে? মধ্যরাত্রেই ঘটনাস্থলে ময়নাতদন্ত? এর কী মানে? যে অধ্যক্ষ থাকাকালীন এরকম একটি ঘটনা ঘটে এবং যে দায় এড়িয়ে মেয়েটির গতিবিধি নিয়েই প্রশ্ন তোলে, তাকে শাস্তিমূলক নির্বাসনে পাঠানো হল না কেন? উলটে শহরের আরেকটি মুখ্য মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষ পদে আসীন করা তো প্রায় প্রোমোশনের সমান! এ কোথাকার ন্যায়বিচার? এই সমস্ত নিয়ে মানুষের ক্ষোভ তৈরি হওয়াটা কি অস্বাভাবিক?" অভিনেতা যে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেও প্রতিবাদ করেছেন, তা বলাই বাহুল্য।
[আরও পড়ুন: ‘আমার প্রকাশের ভাষা অসংযত, ভুল ছিল’, মধুমিতার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ‘অনুতপ্ত’ ঋদ্ধি!]
অভিনেতা-পরিচালকের প্রশ্ন, "রাজ্যের শাসকদলের আমি ঘনিষ্ঠ- এই তকমা বার বার গায়ে লাগে আমার! অতীতেও বহুবার! না আমি শাসকদলের সদস্য বা কর্মী, না আমি তাদের নেতা-মন্ত্রী, না আমি তাদের একনিষ্ঠ সমর্থক, না আমাকে তারা খাওয়ান-পরান, না আমি থাকি তাদের কোনও মিটিং-মিছিলে! তাহলে বার বার এই কথা শুনতে হয় কেন?" এরপরই 'রাজনৈতিক'-'অরাজনৈতিক' দ্বন্দ্ব নিয়ে পরমব্রতর মন্তব্য, "রাজ্যের বিরোধী দলগুলির সমর্থকরা যদি প্রত্যাশা করেন সবাই তাদের ন্যারেটিভে গলা মেলাবেন, তাহলে তো ভুল হয়ে যাচ্ছে! প্রত্যেকের ন্যারেটিভ তো ভিন্ন! আমার তো বটেই! কারণ আদর্শের জায়গা থেকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর লোক আমি! তবুও বলি, এই পরিস্থিতিতে আপনাদের সব বিরোধী পক্ষের কিছু কিছু দাবি আমারও দাবি, কিন্তু সব নয়! এবং সেটা আমার নিজের জায়গা থেকে, নিজের মতো করে! সব পক্ষকে এও বলছি প্রশ্নের পালটা প্রশ্ন তুলতে যাবেন না। অনুরোধ আপনাদের! গেলে কিন্তু আপনাদেরও শুনতে হতে পারে, উন্নাও এর সময়ে, হাথরাসের পরে, মনিপুরের ঘৃণ্য ঘটনায়, আসিফার মৃত্যুর পরে, এমনকী তিন-চার দিন আগে মুজাফ্ফরনগরের ঘটনায় এভাবে এতটা ফেটে পড়েননি কেন? ওইগুলোও নারকীয়, আর জি করের ঘটনাও তাই। ওগুলিকে জাস্টিফাই করার বা ধামাচাপা দেওয়ার কোনও অবকাশ নেই, ঠিক যেমন আর জি করের ঘটনাতেও নেই! নিরপেক্ষ এবং দ্রুত বিচার ওই ঘটনাগুলোতেও দরকার ছিল আর এখানেও!"