সুলয়া সিংহ: যা কিছু ভালো, যা কিছু মসৃণ, সমতল - তা নয় শিল্পীর জন্য। শিল্পী জীবনের ঝোঁক সদাসর্বদা প্রতিকূলের পথে। আনন্দ, নিশ্চিন্তির দিন তাঁর নয়। শিল্পীর সার্থকতা অন্ধকার পথে পথে আলো খুঁজে ফেরায়, যন্ত্রণার সঙ্গে যুঝে নেওয়ায়। সমাজ জীবনকে নাড়িয়ে দেওয়া ঘটনা শিল্পীকে অন্তর থেকে আমূল বদলে দেয়। নিজের সঙ্গে আলাপ করায় নতুন করে।
ঠিক এমনই এক সন্ধিক্ষণের মধ্যে দিয়ে চলেছেন বাংলার শিল্পীরা। আর জি করের ঘটনা বদলে দিয়েছে তাঁদের ভাবনা, কাজের জগৎ। বিশেষত এই দুর্গাপুজোর আগে প্রতিমা গড়ার কাজ কেমন যেন থমকে গিয়েছে। শরৎ সকাল ঢেকে গিয়েছে নিরানন্দে। স্বর্গের মেয়েকে মর্তে আহ্বানের আগে মর্তধামের মেয়েকে এভাবে হারাতে হল! স্রেফ এই বাস্তবটাই হৃদয়ে অশেষ যন্ত্রণা ঢেলে দিয়েছে। সেই যন্ত্রণা কিছুতেই অন্য বছরের মতো দুর্গা গড়তে দিচ্ছে না শিল্পী সনাতন দিন্দাকে। বদলে যাচ্ছে মৃন্ময়ীর আদল। তাঁর হাতে এবার যে দুর্গা গড়ে উঠবেন, তার মুখ বিষণ্ণ। রবিবার আর জি কর ইস্যুতে কুমোরটুলিতে মিছিল করলেন মৃৎশিল্পীরা। হাতে রং, তুলি, প্ল্যাকার্ড, মুখে বিচারের স্লোগানে মুখর হল পটুয়াপাড়া। সেখান থেকেই সনাতন দিন্দা জানালেন নিজের মনের কথা।
[আরও পড়ুন: ৯/১১-র মতোই বিরাট হামলার ছক, নিউ ইয়র্কে টার্গেট ইহুদিরা! ধৃত পাক নাগরিক]
এর আগে রোববার.ইন-এ এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে নিজের মনের কথা জানিয়েছিলেন সনাতন দিন্দা। বলেছিলেন, ''দুর্গার ড্রয়িং এবারেও করে রেখেছিলাম, আমার মেয়ের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করে। ও বলল, ‘বাবা, অনেক দিন তো হল, ২৫-২৬ বছর ধরে, এবার অন্যরকম কিছু করো না।’ আমি করছিলাম স্কেচটা। ওর পছন্দ হল খুব। আজ সেই কাজটা করতে গিয়ে আমূল পরিবর্তন করতে হবে, জানি। কারণ এখন একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমার দুর্গাও বদলে গিয়েছে।'' এ প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশের কবিতার কথা বলেছিলেন শিল্পী। উল্লেখ করেছিলেন ‘সুচেতনা’ কবিতার কয়েকটা লাইন - ‘কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে;/ তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়’। প্রশ্ন তুলেছিলেন, আজ হৃদয় কি আর আছে?
[আরও পড়ুন: ‘কুমোরটুলি দিচ্ছে হাঁক, আমার দুর্গা বিচার পাক’, এবার রাজপথ দখল মৃৎশিল্পীদের]
রবিবারও সে কথাই বললেন শিল্পীর সনাতন দিন্দা। জানালেন, এবারের উৎসবের রং ফিকে। উৎসব এবার বিষণ্ণতার। তাই তাঁর হাতে তৈরি দুর্গার মুখেও থাকবে সেই বিষণ্ণতার ছায়া। বললেন, গত ২৪, ২৫ বছর ধরে তাঁর দুর্গা সেভাবে অস্ত্র ধরেনি। কিন্তু এবার দশভুজার হাতে সরাসরি আয়ুধ তুলে দেবেন তিনি। কারণ, আজকের দিনে তা খুবই জরুরি। আর জি করের তরুণী চিকিৎসককে যে যন্ত্রণা পেয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে মৃত্যুর পথে, তার নিরসন করতে পারে দুর্গার দশ অস্ত্র, এমনই মনে করেন শিল্পী। এদিন কুমোরটুলিতে তুলি হাতে ক্যানভাসে এঁকেও দিলেন তাঁর প্রতিমা। এ বছর আত্মপ্রকাশ করবে সনাতন দিন্দার অন্য 'দুর্গা'।