সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে রবিবার আন্দোলনকারী ডাক্তারদের উদ্দেশে কাঞ্চন মল্লিক প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, "সরকারি বেতন, বোনাস নেবেন তো নাকি?" উত্তরপাড়ার তারকা বিধায়কের এই মন্তব্য ভাইরাল হতেই সোশাল মিডিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন অনেকে। প্রিয় অভিনেতার 'বিবেকবোধ'কেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন একাংশ। সেই আবহেই বন্ধু-সহকর্মী কাঞ্চন মল্লিককে আরও কড়া ভাষায় পালটা জবাব দিলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
রবিবার নাগরিকদের মহামিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সুদীপ্তা। সেখান থেকেই ঘুণ ধরা সিস্টেমের উদ্দেশে প্রশ্ন ছোঁড়েন অভিনেত্রী। একজন নারী হিসেবে, মা হিসেবে প্রথম থেকেই আর জি করের নারকীয় ঘটনায় সরব তিনি। তিলোত্তমার ন্যায়বিচায় চেয়ে দফায় দফায় রাস্তায় নেমেছেন সুদীপ্তা। এবার কাঞ্চন যখন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিবাদী কর্মবিরতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, তখন আর বন্ধুর উদ্দেশে চাঁচাছোলা পোস্ট করে তাঁকে 'ত্যাজ্য' করলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। বন্ধু কাঞ্চন মল্লিককে 'মাননীয় বিধায়ক' সম্বোধন করে অভিনেত্রীর মন্তব্য, "কর্মবিরতি তে থাকা ডাক্তাররা সরকারী চাকরি করেন বলে তাঁদের কর্মস্থলে দিনের পর দিন ধরে ঘটে যাওয়া সরকারের অন্যায় কাজ নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলতে পারবেন না? সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে হতাশা বা উষ্মা প্রকাশ করতে গেলে একজন সরকারি চাকুরিজীবীর মাইনে নেওয়া যাবে না? বিচারের দাবিতে মিছিলে গিয়েছেন বলে তাঁদের পুজোর আগে প্রাপ্য বোনাস নিয়ে খিল্লি করে বলবেন- বোনাস যে হয়, সেটা নেবেন তো, না নেবেন না?" 'চাকরি' শব্দ টা তো আপনি আক্ষরিক অর্থেই নিয়ে নিয়েছেন মশাই! সরকারি হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী নৃশংসভাবে ধর্ষিত ও খুন হয়ে যাওয়া তিলোত্তমার মা বাবা কে 'মেয়ে আত্মহত্যা করেছে' বলল কেন- এই প্রশ্ন করার আগে সরকারের দেওয়া পুরস্কার ফেরত দিয়ে দিতে হবে? না, মানে, বিবেকের তাড়নায় কেউ ফেরত দিতেই পারেন। কিন্তু সেটাই আগাম শর্তাবলী নাকি? দেওয়ালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ঝুলিয়ে রেখে এই নির্লজ্জ কমেডি করার আগে একবারও ভাবলেন না? আপনার কমেডি অভিনয়ই কিন্তু মানুষের মনে একদিন আপনার পাকাপাকি স্থান দিয়েছিল। আমিও তার ফ্যান। কিন্তু আজ যেটা করলেন, ওটা কমেডিও হয়নি, অভিনয়ও হয়নি। আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক শিগগিরই, এই কামনা করি।"
ছবি : এক্স হ্যান্ডেল
ওই পোস্টেই সুদীপ্তা চক্রবর্তী প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, "সরকারি পুরস্কার দেওয়ার আগে কি বলে দেওয়া হয় পরবর্তীতে কী করা যাবে আর কী যাবে না?" আরেকটি পোস্টে বন্ধু কাঞ্চন মল্লিককে ত্যাগ করার কথা বলেছেন অভিনেত্রী। সেই পরিসরে সুদীপ্তা জানিয়েছেন, "কাঞ্চন তোকে ত্যাগ দিলাম। অনুপ্রেরণার লকারে চোখ, কান, মাথা, মনুষ্যত্ব, বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, শিক্ষা সব ঢুকিয়ে রেখে চাবিটা হারিয়ে ফেলেছিস মনে হয়। চাবিটা খুঁজে পেলে খবর দিস বন্ধু। তখন আবার কথা হবে, আড্ডা হবে।"
[আরও পড়ুন: ‘সরকারি বেতন, বোনাস নেবেন তো?’, ধর্ষকদের ফাঁসি চেয়ে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের প্রশ্ন কাঞ্চনের]
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঘটনার পরদিন থেকেই লাগাতার আন্দোলন, কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এখনও হাসপাতালের আউটডোরে কাজে যোগ দেননি তাঁরা। কাধিকবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের কাজে ফেরার আর্জি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের কাজে ফেরার কথা বলেছেন। তবে সমস্ত দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে টেলি মেডিসিন পরিষেবা চালু করেছেন তাঁরা। এছাড়াও ‘অভয়া ক্লিনিক’ নামে অস্থায়ী ক্যাম্প চালু হয়েছে। বলাই বাহুল্য, এই আন্দোলন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই এদিন কাঞ্চন মল্লিক বলেন, “অনেক সরকারি কর্মচারি কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তারা সরকারের থেকে বেতন নিচ্ছেন তো নাকি? বোনাস নেবেন তো, না সেটা প্রত্যাহার করবেন?”, এটা আমার প্রশ্ন। পাশাপাশি আর জি কর কাণ্ডের তীব্র নিন্দাও করেন তিনি। তবে যাঁরা এই ইস্যুটিতে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাইছেন, তাঁদের উদ্দেশে কাঞ্চনের প্রশ্ন, “আসল উদ্দেশ্য কোনটি- দোষীর শাস্তি নাকি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ?” ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ধর্ষকের ফাঁসিও চেয়েছেন তারকা বিধায়ক।