সুপর্ণা মজুমদার: ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’- শহর কলকাতার বুকে একটাই ধ্বনি। তিন সপ্তাহ পেরলেও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এখনও জারি। ক্রমশই এই আন্দোলন যে বড় আকার নিচ্ছে, তা বোধহয় আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। ১ সেপ্টেম্বর, রবিবার শহরজুড়ে নাগরিক মিছিল। শামিল টলিউড তারকারাও। তিলোত্তমার ন্যায়বিচার চেয়ে সুর চড়িয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, চৈতি ঘোষাল, উষসী চক্রবর্তী, অপরাজিতা আঢ্য, বিরসা দাশগুপ্ত, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বিদিপ্তা চক্রবর্তী, লোকনাথ দে, লগ্নজিতা, সত্যম ভট্টাচার্য, উষসী রায়-সহ আরও অনেকেই।
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সরব স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। এদিন নাগরিক মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার বিহিত করার আর্জি জানালেন স্বস্তিকা। অভিনেত্রীর মন্তব্য, "আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে মেয়েটিকে মারা যেতে হয়েছে, মেয়ে হিসেবে ভাবলেই আমার গা শিউড়ে উঠছে। আমি চাইব, আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্রকৃত অর্থেই একটা বিহিত করুন। যাতে ওঁর প্রতি আমাদের ভরসা থাকে। কারণ এখন ভরসা টলমল হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।"
কাজের সূত্রে এখন বেশিরভাগ সময়েই মুম্বইতে থাকতে হয় স্বস্তিকাকে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই তিনি বললেন, "কলকাতা শহরটাকে আমরা সকলেই সবসময়ে বলে এসেছি যে, আমাদের রাজ্যে আমাদের বাংলায় নারীরা সুরক্ষিত। সেখানে এরকম নির্মম একটা ঘটনা ঘটেছে এবং ২৩ দিন হয়ে গেল তদন্তের কোনও গতি দেখছি না। একজন গ্রেপ্তার হয়েছে শুধু। আমরা সহ-নাগরিকরা মানতে নারাজ যে এই নৃংশস কর্মকাণ্ড কারও একার পক্ষে ঘটানো সম্ভব। যদি সব তথ্যপ্রমাণই থেকে থাকে, তাহলে বাবা-মাকে প্রথমে আত্মহত্যার ঘটনার কথা বলা হল কেন? যেভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে, সেটা আমরা সকলেই জানি। সেটাই বা কেন হল? জনসাধারণ বোকা নয়। বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করে আমার যদি ভোট দিতে পারি, তাহলে এখন আমরা হঠাৎ বোকা হয়ে যাব কেন?"
অভয়ার সহ-নাহরিক হিসেবেই স্বস্তিকা প্রশ্ন তুলেছেন, "আমাদের কেন এত অন্ধকারে রাখা হয়েছে? আর কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন? দোষীদের সামনে আনা হোক, তাদের বিচার হোক। মেয়েটির বাবা-মার প্রতি সরকারের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই সরকারকে অভিভাবক বলে মনে করি বলেই ক্ষমতায় রেখেছি। পুলিশ-সরকার, কারও কাছ থেকেই সুরাহা না পেলে আমরা নাগরিকরা যাব কোথায়?" অভিনেত্রীর সংযোজন, "মেয়েরা সবসময়ই খাঁড়ার সামনে ঝুলছে। এইসময়ে প্রতিবার পুজোর ভাইব পাই, তবে এবার মনটা একেবারেই ভালো নেই।"
[আরও পড়ুন: ‘আঁতাঁত ভাঙতেই সন্দীপ ঘোষকে জেরা’, CBI তদন্তে ‘খুশি’ অপর্ণা সেন]
এই আন্দোলন রাজনৈতিক না অরাজনৈতিক, সেই বিষয়ে শোরগোলের অন্ত নেই। তবে এদিন মিছিল থেকেই চৈতি ঘোষাল জানালেন, "অরাজনৈতিক-রাজনৈতিক বলে আর কিছু নেই। আমরা ন্যায়বিচার চাই। সিবিআই দোষীকে খুঁজে বের করে কড়া শাস্তি দিক। সমস্ত অথরিটি, সিবিআইয়ের কাছে আমার প্রশ্ন, কেন আর কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না? এতদিন ধরে আমরা সকলে নাগরিক হিসেবে রাস্তায় নেমে বিচার চাইছি। এগুলো কি আমাদের কাজ? আমাদের তো নিজেদের কাজ করার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।"
দৃঢ়কণ্ঠে সুদীপ্তার দাবি, "তদন্তে সময় লাগুক। কিন্তু ফাঁকফোকড় দিয়ে অনেক কিছু গলে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে, কিন্তু সেটা আমরা হতে দেব না। তার জন্য এই চাপটা আমরা বজায় রাখব। লোকের ঠাট্টা-টিটিকিরিতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা থামব না। এই ব্যভিচারী, অত্যাচারী, যারা শুধু ক্ষমতা-টাকার জন্য মানুষকে মানুষ জ্ঞান করে না। কোনও নীতিবোধ নেই। তাদের সবার মাথা ধরে ধরে বিচার চাই।"