সুব্রত বিশ্বাস: সাঁতরাগাছি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পর চালের বস্তায় চাপা পড়ার আতঙ্কে ভুগছেন যাত্রীরা৷ যে কোনও দিন চালের বস্তায় যাত্রী চাপা পড়ার মতো অঘটন ঘটতে পারে। চলন্ত ট্রেন থেকে স্টেশনে ছুড়ে ফেলা হয় চালের ভারী বস্তা। এক-আধটা নয়। ডজন ডজন বস্তা ফেলার হিড়িক। যাতে চাপা পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রেলের কোনও আইন এমনকী ‘কর্ডনিং’ আইনও বন্ধ করতে পারেনি ট্রেনে বেআইনিভাবে চাল আনা-নেওয়াকে৷
[অভিনব আন্দোলন, শহরে শুধুমাত্র অফিস টাইমেই চলবে বেসরকারি বাস]
দৈনিক হাজার হাজার যাত্রীদের চরম অসুবিধা করে বর্ধমান মেন ও কর্ড শাখার বিভিন্ন স্টেশন থেকে শয়ে শয়ে বস্তা চাল তোলা হয় ট্রেনে। কামরা বোঝাই করে সেই চাল এসে নামে বালি, বেলুড় ও হাওড়া স্টেশনে। ঢোকার আগে আউটার সিগন্যালে ও হাওড়া স্টেশনে এসে নামে এই বস্তা। প্রায় দিনই ভোরের বর্ধমান লোকালে এই চাল তোলা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালের কালোবাজারিদের তুমুল ঝামেলা বাঁধে। যাত্রীদের অভিযোগ, মেন শাখার মেমারি, বাগিলা, পাণ্ডুয়া, সিমলাগড়, শক্তিগড়, বৈঁচি, বৈঁচিগ্রাম, কর্ড শাখার হাজিগড়, চন্দনপুর প্রভৃতি স্টেশন থেকে অসংখ্য চালের বস্তা তোলা হয়। অসংখ্য বস্তা তোলা হয় কামরায়৷ বোঝাই বস্তার জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীরা স্টেশনে নামতে-উঠতে পারেন না বেশিরভাগ সময়। প্রতিবাদ করলে হেনস্তার শিকার হন তাঁরা। তাঁদের কথায়, মূলত খুব ভোরের ট্রেনে ও দুপুরে ডাউন ট্রেনে চাল আসে। মেন শাখায় বালি, বেলুড় ও হাওড়া ঢোকার আগে ও স্টেশনে এই চাল নামিয়ে নেওয়া হয়। দুপুরে কর্ড শাখার ট্রেনে (নম্বর ৩৬৮৪০) ডানকুনি ও বেলুড়ে চাল নামানো হয়। স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময় এই চাল
চলন্ত ট্রেন থেকেই ফেলা হয়। ফলে বহু সময় চালের বস্তা আচমকা শরীরের উপর পড়ে আহত হয়েছেন অনেক যাত্রী। হাওড়ার ডিআরএম মনু গোয়েল বলেন, যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য বিরোধী এই চাল আনার পদ্ধতি বন্ধ করতে কমার্শিয়াল ও আরপিএফকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
[মেয়ের বিয়েতে ভাংচি, পুরুলিয়ায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা]
দৈনিক শয়ে শয়ে বস্তা চাল ট্রেনে এলেও এজন্য কোনওরকম পণ্য পরিবহণ চার্জ রেলকে দেয় না কালোবাজারিরা বলে অভিযোগ। ফলে রেলের কোটি কোটি টাকা আয় ব্যাহত হচ্ছে। বিনা বুকিংয়ে শয়ে শয়ে বস্তা চাল নির্দ্বিধায় কালোবাজারিরা আনতে পারছে শুধুমাত্র গোপান যোগসাজশের মাধ্যমে বলে অভিযোগ। মূলত ৫০ কিলোর এই বস্তা রেলে বুকিং করে আনলে চার্জ পড়ে প্রায় ৬০ টাকা। বিনা বুকিং-এ ধরা পড়লে ছ’গুণ ভাড়া দিতে হয়। অর্থাৎ সাড়ে তিনশো টাকার মতো। কিন্তু এই চালের বস্তা একেবারে বিনা বুকিংয়ে ট্রেনে তোলা হয় এক শ্রেণির টিকিট পরীক্ষক, বিভিন্ন স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার, আরপিএফ ও ট্রেনের গার্ড ও চালকদের সহযোগিতায়। এজন্য বস্তাপিছু নির্ধারিত মূল্য দিতে হয়। আরপিএফ ও টিকিট পরীক্ষকদের বস্তাপিছু কুড়ি টাকা করে দিতে হয়। স্টেশন মাস্টাররা মাসোহারা হিসাবে টাকা নেন বলে জানা গিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশি সময় ট্রেন স্টেশনগুলিতে দাঁড় করিয়ে রাখেন গার্ড ও চালকরা। এজন্য দক্ষিণাও পান তাঁরা। এদিন গার্ডরা জানিয়েছেন, ট্রেন বেশিক্ষণ না দাঁড়ালে জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে। ট্রেন না দাঁড় করিয়ে চাল কারবারিদের হাতে ছুরিকাহত হয়েছিলেন শিয়ালদহের গার্ড বলে তাঁরা জানান।
The post পদপিষ্টের পর এবার চালের বস্তায় চাপা পড়ার আশঙ্কা, আতঙ্কে যাত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.