বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: যাঁরা ‘দো দুনি চার’-এর মধ্যবিত্ত, গৃহস্থ সন্তোষ দুগ্গালকে চেনেন তাঁদের ‘শর্মাজি’-কে চিনতে বা বুঝতে অসুবিধা হবে না। অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে হীতেশ ভাটিয়া পরিচালিত, ঋষি কাপুর অভিনীত ছবি ‘শর্মাজি নমকিন’ (Sharmaji Namkeen Review)। এটিই প্রয়াত অভিনেতা ঋষি কাপুরের (Rishi Kapoor) শেষ ছবি। এই ছবির শুটিং বাকি থাকতে-থাকতেই তিনি দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে ২৯ এপ্রিল ২০২০ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিনেতা পরেশ রাওয়াল সেই বাকি অংশের শুটিং করেছিলেন। ফলে এই ছবিতে একই চরিত্রে দুই অভিনেতা।
কেন মনে হল ‘সন্তোষ দুগ্গাল’-এর কথা?
দুটো ছবির মধ্যে একটা মিল আছে। মিল আছে আবেগের জায়গা থেকে, পরিবেশের জায়গা থেকে। দুটো ছবিতেই আমরা দেখি দিল্লির মধ্যবিত্ত একটা পরিবার। এবং নিজেদের মধ্যবিত্ত, অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রান্ড, মধ্যবিত্ত মানসিকতার মধ্যে একটা মানুষের নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প। ‘দো দুনি চার’-এর ‘সন্তোষ’-এর স্কুটার থেকে চার চাকা কেনার স্বপ্ন কিংবা ‘শর্মাজি নমকিন’-এ ভলেন্টারি রিটায়ারমেন্ট-এর পর শর্মাজির ‘শেফ’ হওয়ার স্বপ্ন দেখার গল্প আসলে রূপক। আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের চাওয়াগুলো খুব বিশাল কিছু নয়। কিন্তু তবু সেগুলো মেটাতে গিয়ে আমরা কেমন জেরবার হয়ে পড়ি। মানুষকে ভুল বুঝি, দূরে ঠেলে দিই। কখনও ছোট-ছোট সমঝোতা করি। সেই সমঝোতার ভারে নিজেরাই মন ভারী করি অযথা। অবসরপ্রাপ্ত শর্মাজি রান্না করতে ভালবাসেন। স্ত্রী মারা যাওয়ায় দুই ছেলেকে হাতে করে রেঁধে খাইয়েছেন তিনি। ভাল রাঁধিয়ে বলে বন্ধুমহলে সুনাম আছে।
[আরও পড়ুন: দুর্দান্ত গ্রাফিক্স, দারুণ অ্যাকশন! ‘বাহুবলী’র ম্যাজিক কি ফেরাতে পারল ‘আর আর আর’? ]
একদিন এক বন্ধুর সুপারিশে এক কিটি পার্টিতে রান্না করার ডাক পান। মধ্যবিত্ত পুরুষের আঁতে ঘা লাগে। কিন্তু তাঁর রান্না খেয়ে সুখ্যাতি করলে যে তৃপ্তি, সেটাও উপেক্ষা করতে পারেন না শর্মাজি। এ দিকে ছেলে এবং ‘নাকগলানো’ বন্ধুমহলে পুরো ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে হবে। কারণ কাজটা ভাললাগার হলেও গৌরবের নয়। এটা সমাজই শিখিয়েছে। দুই ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সব কিছু পেরিয়ে নিজের কাজের গৌরব বোধের উপলব্ধিতে পৌঁছে যাওয়া– এটাই ছবির মূলে। গোলগাল, নাদুসনুদুস ঋষি কাপুর কী সুন্দর মানিয়ে গিয়েছেন শর্মাজির চরিত্রে। তাঁর চেহারা, এক্সপ্রেশনে একটা অদ্ভুত মজা আছে যেটা একটা কমফোর্ট জোন তৈরি করে। পরেশ রাওয়ালের চেহারায় সেই মজাটা কিংবা সেই ‘নরম’ ভাবটা মিসিং হলে তিনিও খুব সুন্দর ‘শর্মাজি’র চরিত্রে মানিয়ে গিয়েছেন।
যদিও আমার কাছে একই ‘জনার’-এর ছবি ‘দো দুনি চার’ এগিয়ে থাকবে। কারণ ছবির স্ক্রিপ্ট। ‘শর্মাজি নমকিন’-এর চিত্রনাট্য আরও একটু জমাটি হতে পারত, তৈরি করা যেতে পারত সুন্দর মুহূর্ত। যা দেখলে একই সঙ্গে মজা পাওয়া যায় আবার মায়াও হয়। কারণ হিউমার যতই মুখরোচক হোক, আসলে তো সেটা আমাদের নিয়েই। এই ছবির চরিত্র তো আমরাই। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় ‘খোসলা কা ঘোষলা’ যেমন। সেই উচ্চতায় ‘শর্মাজি নমকিন’ পৌঁছতে না পারলেও ঋষি কাপুরের শেষ ছবি হিসাবে দেখতে মন্দ লাগে না।