২০১১ সালে শুট করা প্রথম বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে এই আগস্টে। ঋতাভরী চক্রবর্তী এখন ছোট থেকে বড় পর্দা এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও হিট। কথায় কথায় নায়িকা জানালেন, আমি মায়ের মতো ইন্ডিপেনডেন্ট হতে চাই। শুনলেন প্রীতিকা দত্ত।
প্রথমেই জানতে ইচ্ছে করছে, এই ভারী বর্ষায় বসন্তের সুর কেন?
হ্যাঁ (হাসি), কথাটা ভুল বলেননি। আসলে আমার নেক্সট রিলিজ ‘তবুও বসন্ত’। যেটা আমি শুট করেছিলাম ২০১১ সালে। বলা যায়, আমার জীবনের প্রথম ছবি। কিন্তু পাকে চক্রে মুক্তি পেতে এতদিন লেগে গেল। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমার জীবনে এই অসময়ে বসন্ত আসার কারণটা।
আপনি বলছেন, অনেকদিন আগের শুটিং। ছবিটা যখন সাইন করেছিলেন তখন আপনি অনেকটাই ছোট। এখন অনেক পরিণত ঋতাভরী। কী ভেবেছিলেন সে সময়?
ছবিতে আমি ছাড়াও, রাহুল আর রুদ্রনীল আছে। ২০১১ সালে যখন শুটিং হচ্ছিল, তখন আমার কাছে এটা শুধুই মা (শতরূপা সান্যাল) এবং দেবজিৎ মামার ছবি। সেই সময় টেলিভিশনে কাজ করছিলাম। রবি ওঝার ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। সেই সময় দেবজিৎ মামা ‘তবুও বসন্ত’র গল্পটা শোনায়। ভাল লেগেছিল। তবে হ্যাঁ, এখন আমি অনেক পরিণত। আমার চিন্তা-ভাবনা সবটাই বদলেছে। আজকাল তো স্মার্ট ফোনের যুগ। এক-একটা দিন মানে দশ বছরের সমান। আর এটা সেই ২০১১ সালের কথা। তখন আমি, মা, দেবজিৎ মামা একটা টিম হিসাবে কাজ শুরু করি। এর থেকে বেশি কিছু মনে পড়ছে না।
আচ্ছা, ছবিটার রিলিজে এত দেরি হল কেন? কিছু জানেন?
এটা প্রোডিউসার ভাল বলতে পারবেন। আই পার্সোনালি হ্যাভ নো আইডিয়া।
এবার বলুন, বর্ষা কেমন এনজয় করছেন?
বৃষ্টি আমার খুব ভাল লাগে। গেটিং রেনড টাইম টু টাইম, সেটাও খুব ভাল লাগে। ভিজতে ভীষণ ভালবাসি। তাই বলতে পারেন, মনসুন আমি ভালই এনজয় করি।
বর্ষা ছাড়া ঋতাভরীর আর কী ভাল লাগে?
ট্রাভেলিং। আমার কী মনে হয় জানেন, ঘুরতে গিয়ে সবথেকে ভাল শেখা যায়। ট্রাভেলিং আসলে একটা লার্নিং প্রসেস। দেশের ভিতরে কাজ করতে এদিক-ওদিক যাওয়া লেগেই থাকে। তবে এখন তো আমি আমেরিকার একটা এজেন্সির হয়েও কাজ করি। তাই বিদেশভ্রমণটাও ভাল হয়। তার পর আমেরিকায় আবার আমার এক আঙ্কল থাকেন। তাই যখন ওদেশে যাই আঙ্কলের কাছে উঠি। প্রপার ওয়ার্ক-প্ল্যানটা করে রাখি বলেই কাজের বাইরে ঘোরাঘুরিটাও হয়ে যায় (হাসি)।
‘ওগো বধূ সুন্দরী’র ললিতা যখন করছেন, তখন আপনি ১৫। এখন তো প্রায় দশ বছর ইন্ডাস্ট্রিটা দেখা হল। কেমন লাগছে?
‘ওগো বধূ সুন্দরী’ মানে আমার স্কুলবেলা। তার পর যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা। তবে হ্যাঁ, সত্যি বললে, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সেটের সবাই আর পরিচালক রবি ওঝা আমার অ্যাক্টিংয়ের শিক্ষক। সেটে অনেকে বলতেন, আমাকে দিয়ে চাইল্ড লেবার করানো হচ্ছে। কেন জানেন? আমার প্যান কার্ডে ‘মাইনর’ লেখা ছিল। আমি মাইনর লেখা প্যান কার্ড কোনওদিন দেখিনি। ওই টিভি সিরিয়ালে কাজ করতে করতে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বলতে পারেন, ওটাই আমার ফিল্ম স্কুল। কাজ করতে করতেই বড় হয়েছি। তাই এটা আগে বুঝেছিলাম, বাংলায় টেলিভিশন ইজ দ্য স্ট্রংগেস্ট মিডিয়া।
[জীবনের আনন্দ ভোলাতে পারেনি মারণরোগ, বন্ধুতা দিবসে বিশেষ বার্তা সোনালির]
কিন্তু ঋতাভরী হয়ে ওঠার পিছনে স্ট্রংগেস্ট মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া। ‘ওগো বধূ সুন্দরীর’ পর আপনাকে আপনার ফ্যানেরা খুঁজতেন।
হ্যাঁ। তার পর পড়াশোনা করতে ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া, ডিজিট্যাল মিডিয়া নিয়েও জানতে হত।
তার পর ‘ওরে মন’। আয়ুষ্মান আর আপনি- এখন কিন্তু রীতিমতো হিট কাপল।
আসলে, ছোট স্ক্রিন বা বড় স্ক্রিন বা সোশ্যাল মিডিয়া বলে নয়। আমার কাছে ভাল কাজ খুব ম্যাটার করে। আর তার পর অডিয়েন্স। আমি কিন্তু ফেস্টিভ্যাল অডিয়েন্সের জন্যও শর্ট ফিল্ম বানাতে পারি। ভাল কাজ হলেই হবে। যে ক’জন লোক দেখবেন, কাজটা যেন এনজয় করেন। আমার কাছে সেটাই আসল।
বাংলা ছবি করছেন না কেন?
ওই যে বললাম, ‘ভাল কাজ’ ম্যাটার করে খুব। প্রতি বছর অনেক বাংলা ছবি রিলিজ করে। কিন্তু ক’টা ভাল ছবি হয়, বলতে পারেন? ‘ওগো বধূ সন্দুরী’র পর আমি তিন-তিনটে ছবি সাইন করেছিলাম। তার মধ্যে একটা ‘তবুও বসন্ত’। সেটা রিলিজ করতে এতগুলো বছর লেগে গেল। বাকি দু’টোর কী হল, কে জানে। দশটা মধ্যমমানের ছবি করার থেকে একটা হিন্দি ছবি বা নিজের শর্ট ফিল্মের কাজ করা অনেক ভাল। হিন্দি ছবির অডিয়েন্স তো অনেক ভাস্ট। এর স্বাদ যে একবার পাবে, সে কিন্তু ওটাকেই বেশি করে ধরতে ছুটবে।
অনুষ্কা শর্মা, রজত কাপুর, কালকি কোয়েচলিনের সঙ্গে কাজ করেছেন। কখনও ক্যামেরার সামনে। কখনও ক্যামেরার পিছনে। এতজন গুণী মানুষ! কেমন লাগে?
ইট ফিলস আমেজিং। বলতে পারেন, ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে আমার।
এখনই বলিউডের এতজনের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন। এটাও কি প্ল্যানে ছিল?
পঁচিশ বছর বয়সের মধ্যেই আমার অনেকগুলো স্বপ্নপূরণ হয়েছে। আমি ব্লেসড। অনুষ্কা, রজত, পরমব্রতদা, কালকি, আয়ুষ্মান। এখানেই যেন লিস্টটা শেষ না হয়। আমি অনেকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। রণবীর-আলিয়া। সবাই। খুব জেনেরিক সেন্সে বলছি না। তবে ভাল কাজ করতে কোন অ্যাক্টর চাইবেন না? আমার মতো অন্যরাও সুযোগ পেলে এনজয় করবেন। কিছু বছর আগে আমি ঠিক করেছিলাম, যদি আমার কাছে মনের মতো কাজ না আসে, তাহলে আমার মনের মতো কাজ আমি নিজেই বানাব। যেমন ‘ওরে মন’ বানিয়েছি। ‘নেকেড’ করেছি। আমার আপকামিং শর্ট ফিল্ম ‘হাউ অ্যাবাউট আ কিস?’ও লিখেছি।
‘ওরে মন’-এ আপনি ছিলেন ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ প্রোডিসার। মানে একসঙ্গে অনেকটা দায়িত্ব। সেই সঙ্গে অভিনয়টাও করেছেন। তার পর কালকির সঙ্গে ‘নেকেড’। এখন ‘হাউ অ্যাবাউট আ কিস?-এর স্ক্রিন প্লে লেখার কাজ। ক্যামেরার সামনে না ক্যামেরার পিছনে। কোথায় বেশি এনজয় করেন?
আই লাভ ওয়ার্কিং বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা। আসলে কী জানেন, মায়ের তো একটা প্রোডাকশন হাউস আছে। সেট ডিজাইনিং, লাইটের কাজ বা অন্য খুঁটিনাটি কাজের ব্যাপারে ধারণা ছিল। এই টিভি সিরিজ, শর্ট ফিল্ম, ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করতে করতেই গ্রো করছি। তাই এই ছোট-বড় কাজগুলোই আমাকে সাহসী করেছে।
[মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কেমন হল ‘ভুবন মাঝি’র যাত্রা?]
এত কিছুর পর আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জারও। সোশ্যাল মিডিয়ার দিনদিন বাড়তে থাকা ফলোয়ার সংখ্যা অন্তত সেটাই জানান দিচ্ছে। এত সময় পান কোথা থেকে?
সময় তো ওই ২৪ ঘণ্টা। তবে আমি কাজগুলোকে আগে থেকে প্ল্যান করি। আর কখনও বসে থাকি না। এই যেমন এখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি। কথা বলতে বলতেই আমার টিমের সঙ্গে শর্ট ফিল্মের এডিটিংটাও দেখছি। আপনার সঙ্গে কথা শেষ হলে, এখানেই ইভনিং স্ন্যাক্সটা খেয়ে নেব। এডিটিংয়ের কাজ শেষ হলে বিদেশে ছুটতে হবে। ক্যালেন্ডার শুট আছে। সেই সঙ্গে আরও একটা প্রোজেক্টের উপর কাজ করছি। আমার ড্রিম প্রোজেক্ট। কিন্তু এখন কিছু জিগ্গেস করবেন না, প্লিজ। আগে কাজটা হোক। আমি তখন সব বলব।
এবার একটু শতরূপাদির (সান্যাল) কথায় আসি। ছোট থেকে কি আপনিও মায়ের মতো ইন্ডিপেনডেন্ট?
হ্যাঁ। আমি মাকে দেখেই বড় হয়েছি। ইচ্ছে মতো বাঁচতে চাওয়ায় দোষ কোথায়? আমার তাতে খারাপ কিছু মনে হয় না।
আচ্ছা, আপনি শর্ট ফিল্ম বা ডিজিটাল মিডিয়ায় থাকতে চাইছেন যখন, নেটফ্লিক্সে কোনও সিরিজ বা ছবি রিলিজের পরিকল্পনা করছেন না কেন?
হ্যাঁ, খুব চাই। ‘লাস্ট স্টোরিজ’ বা ‘লাভ পার স্কোয়ার ফুট’-এর মতো প্রোজেক্টের কথা আমার মাথায় আছে। নেটফ্লিক্সে ছবি রিলিজ করতে পারলে আমি ভীষণ খুশি হব। তবে এ সব করতে সময় লাগবে।
[নেটদুনিয়ায় প্রশংসিত ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’-এর টিজার]
The post ভরা শ্রাবণে ‘বসন্ত’-এর অপেক্ষায় ঋতাভরী চক্রবর্তী appeared first on Sangbad Pratidin.