সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সব পথ এসে রোমে মিশতে পারে, কিন্তু সব প্রেম আর রোমে পরিণতির পথ পাচ্ছে না। যে হলুদ আলোয় মায়াবী হতো ভালবাসার শহর, যে মায়াময় পরিবেশ মন দেওয়া-নেওয়া হত সহজেই, তাই-ই এবার উধাও হতে চলেছে। কেননা এই মায়াবী খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। আর তাই বদলে বসছে উজ্জল এলইডি। সে আলোয় শহর উজ্জ্বল হলেও প্রেমিক-প্রেমিকাদের সর্বনাশ। প্রেমের শান্ত পরিবেশের দফারফা হতে চলেছে এর ফলে। এর বিরুদ্ধে প্রেমিক-প্রেমিকাদের পাশাপাশি গর্জে উঠেছে নাগরিক সমাজও।
[ইসলাম বিরুদ্ধ, তাই এই অঞ্চলে নিষিদ্ধ স্টাইলিশ দাড়ি]
রোম মানেই রোমান্স। তিন হাজার বছরের জনপদকে এভাবেই ডাকতে পছন্দ করেন স্থানীয়রা। তাঁদের ভাললাগা, ভালবাসা, অনেক বলা না-বলা কথার সাক্ষী এই শহর। পিয়াজ্জা নাভোনা থেকে ভিভের ত্রাস্তেভের বা মন্তি- প্রেমের অপার স্বাধীনতার যেন এক একটা স্টপেজ। সূর্যাস্তের পর এই সব রাস্তাতেই একে অন্যকে চিনে নেয়, বুঝে নেয় প্রেমিক-প্রেমিকারা। উপচে পড়ে বাঁধনহীন ঘনিষ্ঠতা। স্ট্রিট লাইটের মৃদু হলদে আলোর নিচে তাদের প্রেম পর্ব রোমের অহঙ্কার হিসাবেই দেখা হয়। একশো, হাজার বছরের এই তামামিতে এবার ইতি পড়তে চলেছে। রোম সিটি কাউন্সিল মনে করেছে স্ট্রিট লাইটের জন্য বিদ্যুতের বিল লাফিয়ে বাড়ছে। অতএব, ঐতিহ্য ভুলে বাস্তবে তাকাও। প্রশাসনের ইচ্ছেয় তাই রোম জুড়ে হলুদ আলোর জায়গায় বসছে প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার এলইডি। এর জন্য বাজনা নেহাত কম নয়, অঙ্কটা প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো। রোম প্রশাসনের দাবি, এতে বিলের বহর নাকি অনেকটাই কমবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের যুক্তিতে সিটি কাউন্সিলের এই দাওয়াইয়ে অবাক স্থানীয়রা। তাঁরা এক বাক্যে বলছেন বিশ্বকে বাঁধনছাড়া ভালবাসার পথ দেখিয়েছে রোমের রাস্তাঘাট। আলো পাল্টে সেই ঐতিহ্যকে এভাবে বদলে দেওয়া যায় না। ক্ষোভ দেখিয়ে থামা নয়, রোমের সব প্রজন্ম এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এলইডি রুখতে রোমের মেয়র এবং ইতালির সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে পিটিশনও জমা পড়েছে। বিখ্যাত পিয়াজ্জা নাভোনার একটি ক্যাফেতে কাজ করেন সালভাতোরে নিকাস্ত্রো। ছাপোষা মানুষটিকেও যেন বিদ্ধ করেছে আলো বদলের সিদ্ধান্ত। নিকাস্ত্রো বলছেন, ‘এটা হলে মারাত্মক ভুল হবে। পুরনো হলদে আলো রোমকে আলাদা করে চিনিয়েছে। যে আলোর মাদকতায় ভালবাসার মানেটাই বদলেছে।’ নিকাস্ত্রোর মতো অনেকেই মনে করেন, যদি অর্থ একান্ত বাঁচাতেই হয় তবে প্রশাসন বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে মাথা ঘামাক। আলোয় কোনওভাবে হাত দেওয়া যাবে না।
[লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত বেড়ে ৭, পুলিশের গুলিতে নিকেশ ৩ জঙ্গি]
ছয়ের দশকে ‘লা দোলচে ভিতা’র সুবাদে বিশ্ব দেখেছিল রোমের প্রেমের সরণিগুলিকে। এই সিনেমার পর ইতালির রাজধানীর প্রেমের পথ ঘিরে দুনিয়ার প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে তুমুল সাড়া পড়ে। সে আবেদন আজও একইরকম। সিটি কাউন্সিলের হাবভাব বুঝতে পেরে এখন থেকেই রাস্তায় নেমেছেন স্থানীয় রাজনীতিক নাথালি ন্যাম। পাশে পেয়েছেন অনেককেই। ন্যাম মনে করেন এভাবে রোম থেকে কোনওভাবেই বসন্ত চুরি করা যাবে না। কারণ তাদের প্রিয় শহর মর্গ নয়, যেখানে হাজার ওয়াটের আলোর প্রয়োজন হয়। নিভু নিভু আলোয় প্রেমের পথের পথিকরা বুঝিয়ে দিয়েছেন ভালবাসার নিশানকে সহজে পাল্টানো যাবে না।
The post উজ্জ্বল আলোয় ভালবাসার শহরে ‘প্রেমের সর্বনাশ’ appeared first on Sangbad Pratidin.