সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘুরে দাঁড়ানোর ব্রিগেডে একযোগে বিজেপি-তৃণমূলের ‘অপশাসন’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিলেন বাম নেতৃত্ব। পাঁচ বছরের জুমলাবাজির দিন শেষ। ভাওতাবাজির দিন শেষ। ব্রিগেডের ভরা সভায় একযোগে দাবি করলেন ক্ষিতি, সীতারাম, সূর্যকান্ত, সেলিমরা। রাজ্যে বামেরা এখন কার্যত তৃতীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। অন্তত সাম্প্রতিক কয়েকটি উপনির্বাচনের ফলাফল তেমনটাই ইঙ্গিত করেছে। তাছাড়া, দলের সংগঠনের অবস্থা যে খুব একটা সুখকর নয়, তাও বোঝা গিয়েছে সাম্প্রতিক বনধে সেভাবে সাড়া না মেলায়। কিন্তু এদিনের ব্রিগেডের জনসভায় লাল ঝান্ডার ভিড় বাম নেতৃত্বকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।
[ব্রিগেড শুরুর আগেই ধাক্কা বামেদের, আসছেন না কানহাইয়া]
ব্রিগেডের ভিড়কে উৎসাহ দিতে গিয়ে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বললেন, “জনসমাগম আমাকে আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে বাংলা এবং দিল্লিতে সরকার বদল হবে। কিন্তু ভয় একটাই, ওরা আমাদের ভোট দিতে দেবে না। তবে, চিন্তা করবেন না। এত মানুষকে আটকে রাখতে পারবে না। আমাদের আঘাত করলে আমরা জবাব দেব।” একই কথা বললেন সূর্যকান্তও। “লাঠি তৈরি হচ্ছে, আরও লাঠি তৈরি করুন।” সেলিম বললেন, “হিটলার পারেনি লালঝান্ডাকে শেষ করতে, হিটলারের নাতি-পুতি মোদি-মমতাও পারবে না।” অর্থাৎ বার্তা পরিষ্কার, জনসমাগম দেখে উৎসাহী বাম নেতারা বুঝিয়ে দিলেন, এরপর আক্রমণ এলে প্রতিরোধ করতে হবে। লাঠি হাতে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বাম নেতাদের ভাষা খানিকটা একইরকম। “মোদি-মমতা একে অপরের পরিপূরক, একজনের হাত ধরে আরেকজনকে হারানো যাবে না। একসঙ্গে দুজনকেই হারাতে হবে। একমাত্র লালঝান্ডায় পারে একসঙ্গে দুজনকে সরাতে। রাজ্য থেকে মমতা এবং কেন্দ্র থেকে মোদিকে সরাতে হবে।” সীতারাম ইয়েচুরির এই সুরেরই অনুরণন ঘটল সূর্যকান্তর কথায়। তিনি বললেন, “চৌকিদার, পাহারাদার, দফাদার চাই না। মমতা সূচ, তিনি চালুনি হতে চান। চালুনি হওয়ার শখ হয়েছে। তাই বামপন্থীদের সক্রিয় হতে হবে” সেলিম বললেন, “দিদি-মোদি সেটিং হয়ে গিয়েছে। শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল।” সূর্যকান্ত-সীতারামরা বললেন, খালি তৃণমূল হটাও, বিজেপি হটাও বললে হবে না। মানুষের হাতে বিকল্পের সন্ধান দিতে হবে। কি সেই বিকল্প? সূর্যকান্তের উত্তর, “আমরা সিঙ্গুরে শিল্প চাই, বাংলায় শিল্প চাই। ফসলের দাম চাই, আলুর দাম চাই। ভিক্ষা চাই না, অধিকার চাই। আলুর দাম আমাদের অধিকার, সেই অধিকার চাই।” সেলিম বললেন, “ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়েই নতুন বাংলা আমরা গড়ব।”
[ঠাকুরনগরে মোদির জনসভায় বিশৃঙ্খলা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি রাজ্য বিজেপির]
কিন্তু, কর্মীদের উৎসাহ দিতে গিয়ে কখনও কখনও সীমাও ছাড়ালেন। সীতারাম বললেন, “মোদি পকেটমার, মমতা তাঁর সহকারী।” সূর্যকান্ত মমতাকে বললেন ‘দফাদার’। তবে, দিনের শেষে ‘স্টার অব দ্য শো’ মহম্মদ সেলিম। মিইয়ে পড়া কর্মীরা চাঙ্গা হলেন তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠেই। এখন প্রশ্ন, আদৌ এই ব্রিগেডের সভা বামেদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, নাকি এই ভিড় ভোটব্যাংকে কোনও প্রভাবই ফেলবে না?
ছবি: প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়