রাজকুমার কর্মকার, আলিপুরদুয়ার: মৃত্যু হল দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ‘রাজা’র। রাজার মৃত্যুতে গভীর শোক নেমেছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীদের মধ্যে।
সোমবার ভোর তিনটে নাগাদ নিজের কুঠুরিতেই মারা যায় রাজা। বয়স হয়েছিল ২৫ বছর ১০ মাস। গোটা বিশ্বে আর কোনও পালিত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এত বেশি বছর বাঁচেনি। এই রেকর্ড একমাত্র রাজারই রয়েছে। জানা গিয়েছে, বয়সজনিত কারণে কয়েকদিন থেকেই দুর্বল হচ্ছিল রাজা। অবশেষে মাল্টি অরগ্যান ফেইলিওর হয়ে সোমবার ভোর তিনটেয় মারা যায় সে। এদিনই রাজার শেষকৃত্য রাজকীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কতৃপক্ষ। পুড়িয়ে ফেলা হয় রাজাকে। সমগ্র প্রক্রিয়াটি ভিডিও রেকর্ডিং করেছে বনদপ্তর।
রাজাকে শেষ বিদায় জানাতে আলিপুরদুয়ার জেলা সদর থেকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ছুটে গিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা। তিনি ফুল দিয়ে রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। দক্ষিণ খয়েরবাড়ি বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রে থাকা রাজা মারা গিয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর প্রক্রিয়া মেনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজার মৃতদেহ।”
[আরও পড়ুন: অগ্নিপথ নিয়ে দিল্লিতে সরব তৃণমূল, প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রকল্প বাতিলের দাবি]
প্রায় ১৪০ কেজি ওজনের দেহ পুড়তে সময় নিয়েছে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়। রাজার শেষকৃত্যে চোখের জল ফেলেছেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের অনেক বনকর্মীই। রাজার দেহে আগুন দেওয়ার আগে সকলেই শ্রদ্ধাভরে স্যালুট করেছেন। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও দীপক এম বলেন, “গান স্যালুট দেওয়া যায়নি। কিন্তু আমরা স্যালুট দিয়েছি রাজাকে। রাজার স্মৃতিতে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে স্মৃতি সৌধ তৈরি করব আমরা। রাজা ছাড়া দক্ষিণ খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টার ভাবাই যায় না। আমরা ভরাক্রান্ত হৃদয়ে রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছি।”
আগামী ২৩ আগস্ট রাজার জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা করছিল বনদপ্তর। কিন্তু ২৬ বছর পূর্ণ করা আর সম্ভব হল না রাজার। তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল সে। বিভিন্ন সার্কাসের বাঘকে পুনর্বাসনের জন্য দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ঠাঁই হয় রাজার। তারপর অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র লেপার্ড রেসকিউ সেন্টারে পরিণত হয়। বর্তমানে মিনি জু হওয়ার দোড়গোড়াও দক্ষিণ খয়েরবাড়ি। কিন্তু এখানে দীর্ঘ ১৪ বছরের জীবনে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে রাজা। আশ্চর্যজনকভাবে রাজাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা পার্থসারথী সিনহা বর্তমানে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে নেই। বনদপ্তরের প্রশিক্ষণের জন্য তিনি দক্ষিণবঙ্গে রয়েছেন। পার্থবাবু প্রথম থেকেই রাজার দেখভাল করতেন। রাজার মৃত্যুতে আশপাশের বিভিন্ন বনাঞ্চলের বন কর্তারাও শোকজ্ঞাপন করেছেন।