সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বুচা গণহত্যার খবর প্রকাশ্যে আসতে কোণঠাসা রাশিয়া (Russia)। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বন্ধু দেশগুলির কাছেও মুখ পুড়েছে মস্কোর। এহেন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধ করতে একগুচ্ছ শর্ত আরোপ করল ক্রেমলিন। রুশ সংবাদমাধ্যম ‘আরটি’ জানিয়েছে, পুতিন প্রশাসনের আরোপ করা শর্তগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইউক্রেন যেন কোনওভাবেই ন্যাটো গোষ্ঠীতে যোগ না দেয়।
[আরও পড়ুন: চাপ বাড়াল আমেরিকা, পুতিনের দুই মেয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাল হোয়াইট হাউস]
সম্প্রতি রুশ সংবাদমাধ্যম ‘আরটি’-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেন যদি মস্কোর বেঁধে দেওয়া শর্তাবলি মেনে নেয় তাহলে সেদেশে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বন্ধ করবে রাশিয়া। জেলেনস্কি সরকারের কাছে কী দাবি পেশ করেছে পুতিন প্রশাসন? সংবাদমাধ্যমটির দাবি, যুদ্ধ বন্ধ করার প্রধান শর্ত হচ্ছে ইউক্রেন যেন কোনওভাবেই ন্যাটো গোষ্ঠীতে যোগ না দেয়। তাছাড়া, অধিকৃত ক্রাইমিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে কিয়েভকে। পাশাপাশি, রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করতে হবে জেলেনস্কি সরকারকে। রাশিয়ার তরফে দাবি, শান্তি আলোচনায় সদিচ্ছার দরুনই তারা কিয়েভ অঞ্চলে সামরিক অভিযান বন্ধ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে যুদ্ধে ইউক্রেনের কাছে নাকানিচোবান খাচ্ছে রুশ ফৌজ। ফলে মুখ বাঁচিয়ে দ্রুত আলোচনার টেবিলে আসতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু আপাতত যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে ক্রাইমিয়া ও দোনবাস অঞ্চলকে কোনওভাবেই রাশিয়ার হাতে তুলে দেবেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে ন্যাটো গোষ্ঠীর সদস্যপদের দাবি থেকে আগেই সরে এসেছিলেন তিনি।
এদিকে, বুধবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেছিল ন্যাটোর সদস্য দেশগুলি। রাশিয়ার উপরে আরও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই বৈঠকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ঘোষণা করেছ, রাশিয়া থেকে ৪৩০ কোটি ডলার মূল্যের কয়লা আমদানি স্থগিত রাখছে তারা। আমেরিকাও জানিয়েছে, রাশিয়া ও তাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপরে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে। রুশ ব্যাংকিং সেক্টরের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ব্লক করছে তারা। পাশাপাশি, নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে পুতিন ঘনিষ্ঠদের উপরে। এক আমেরিকান কর্তা জানিয়েছেন, জি৭ এবং ইইউ-এর সঙ্গে একত্রিত ভাবে পুতিনের স্ত্রী ও তাঁদের দুই প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা মারিয়া পুতিনা এবং ক্যাটরিনা তিকোনোভার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও তাঁর স্ত্রী-কন্যাও নিষোধাজ্ঞা তালিকা থেকে বাদ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রায় একপক্ষ কালের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। এহেন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জব্দ করতে রাশিয়ার উপর একগুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান-সহ একাধিক দেশ। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করাও বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে ওই ব্যাংকগুলি গোটা বিশ্বে আর কাজ করতে পারছে না। ধাক্কা খাচ্ছে রাশিয়ার আমদানি-রপ্তানি। ফলে জোর ধাক্কা খেয়েছে রুশ অর্থনীতি। এহেন পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব খর্ব করতে মরিয়া মস্কো।