সুকুমার সরকার, ঢাকা: ইউক্রেন (Ukraine) ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ডাকা জরুরি বৈঠকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিল বাংলাদেশ (Bangladesh)। মঙ্গলবারের এই বৈঠকে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর জোর দেয়। রাষ্ট্রসংঘে (UN) বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপ-প্রধান মহম্মদ মনোয়ার হোসেন এই বিতর্কে যোগ দেন। এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবকে আহ্বান জানান।
এর আগে ইউক্রেন প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে নিন্দাসূচক প্রস্তাবে রাশিয়ার (Russia) ভেটোর কারণে তা বাতিল হলে বিষয়টি আলোচনার জন্য সাধারণ পরিষদে স্থানান্তরিত হয়। গত সোমবার বিতর্কের সূত্রপাত করে রাষ্ট্রসংঘ (UN) মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বলেন, ”যথেষ্ট হয়েছে, ইউক্রেনে হামলা এখনই বন্ধ করতে হবে।” অসামরিক এলাকায় রুশ বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের নিন্দা করে রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের উপর তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি রক্ষার ওপর জোর দেন।
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনে পণবন্দি ভারতীয় পড়ুয়ারা? মুখ খুলল বিদেশমন্ত্রক]
ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘের এই বিতর্কে যেসব দেশ অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের অনেকেই ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করে। পশ্চিমী দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই হামলাকে আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থার উপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন নিউইয়র্কে রয়েছেন এই মুহূর্তে। তবে তিনি রাষ্ট্রসংঘের বিতর্কে অংশ নেননি। এক টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ”আমরা সবরকম যুদ্ধের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক, আমরা সেটাই চাই।” আলোচনায় অংশ নিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি বলেন, ”বিনা উসকানিতে রাশিয়ার হামলা সব ক্ষুদ্র দেশের অস্তিত্বের উপর হুমকিস্বরূপ।” ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, ”রাশিয়ার গৃহীত ব্যবস্থা আঞ্চলিক ও বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।” রাশিয়ার নিন্দা করে তুরস্কের প্রতিনিধির বক্তব্য, নিজের দেশের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের একমাত্র অধিকার ইউক্রেনের জনগণের, অন্য কারও নয়।
অবশ্য এই ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতও (India)। রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন মৈত্রীর সূত্রে আবদ্ধ – এমন অনেক দেশ রুশ অভিযানের জন্য কোনো পক্ষকে দায়ী করার বদলে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধানের ওপর জোর দেয়। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকে ভারত তার এই নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করে। সাধারণ পরিষদের বিতর্কে অংশগ্রহণ করে ভারতীয় প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কূটনৈতিক উপায় ছাড়া এ সংকটের অন্য কোনো সমাধান নেই। তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির টেলিফোনে আলোচনার কথা উল্লেখ করে সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন, জাতীয় সংহতি ও সার্বভৌমত্বের নীতি মেনে চলার আহ্বান জানান।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় বার সিঙ্গারের রহস্যমৃত্যু, খুনের অভিযোগে সরব বাবা-মা]
বুধবার এই বিতর্কের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের পক্ষে যে বক্তব্য দেওয়া হয়, তা ভারতের অনুরূপ। রাষ্ট্রসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপপ্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবকে আহ্বানের পাশাপাশি যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে সরে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।