সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রিকেট নয়! দেশের শুল্ক নীতির জগতে প্রবল চর্চার কেন্দ্রে শচীন তেণ্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। ভারতীয় ক্রিকেটের লিটল মাস্টারকে নিয়ে দেশের শুল্ক জগতে চর্চা শুরু প্রায় দু’বছর আগে। যখন জানা যায় বার্ষিক আয়কর রিটার্নে নিজেকে ‘ক্রিকেটার’ না বলে একজন পেশাদার ‘অভিনেতা’ বলে ঘোষণা করেছেন শচীন। মূলত বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপের জন্য পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের উপর আয়কর ছাড় পেতেই তাঁর এই বিস্ময়কর ঘোষণা। যে ঘটনায় আয়কর বিভাগের সঙ্গে দীর্ঘদিন মামলাও লড়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আয়কর আইনের (Inocme Tax Document) ‘৮০ আরআর’ ধারায় ১.৭৭ কোটি টাকা ছাড়ের আওতায় নিয়ে আসেন।
বিতর্কের সূত্রপাত ২০১১ সালে। যে বছর তাঁর দুরন্ত ব্যটিংয়ের জোরে বিশ্বকাপ জেতে ভারত। সেই বছর থেকেই আয়কর রিটার্নে নিজেকে ‘পেশাদার ক্রিকেটার’ না বলে ‘অভিনেতা’ বলে ঘোষণা করেন শচীন। যার পিছনে ইএসপিএন, স্টার স্পোর্টস, ভিসা ও পেপসির থেকে বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ বাবদ বিদেশি মুদ্রায় ৫ কোটি ৯২ লক্ষ ৩১,২১১ টাকা উপার্জন।
[আরও পড়ুন: বিশ্বজয়ের উৎসবে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা আর্জেন্টিনায়, মৃত এক, হেলিকপ্টারে বাড়ি ফিরলেন মেসি]
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, আয়কর আইন মোতাবেক বিদেশি মুদ্রায় উপার্জিত এই অর্থের জন্য বিপুল পরিমাণ আয়কর দিতে হত। কিন্তু নিজেকে ‘অভিনেতা’ ঘোষণা করে এই উপার্জনের মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬৯,৩৬৩ টাকার উপর ছাড় দাবি করেন। যে দাবি নিয়ে আপত্তি তোলেন মুম্বইয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত আয়কর কমিশনার। জানা যাচ্ছে, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শচীন দাবি করেন, তিনি একজন ‘অপেশাদার ক্রিকেটার। ফলে ক্রিকেট থেকে তাঁর উপার্জন ‘অন্যান্য সূত্র বাবদ উপার্জন’ তালিকাভুক্ত। তাঁর আইনজীবীদের এই সাওয়ালের সামনে আয়কর কর্তারা অক্সফোর্ড অভিধানে বর্ণিত ‘পেশাদার ক্রিকেটার’ শব্দার্থের উল্লেখ করে পাল্টা প্রশ্ন তোলে নোট দেন, ‘শচীন তেণ্ডুলকর ক্রিকেটার না হন, তবে ক্রিকেটারটা কে?’
শচীনের আইনজীবীদের দাবি ছিল, তেণ্ডুলকরকে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলি মোটেই ক্রিকেটার হিসাবে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করছে না। বরং পারিশ্রমিক দিচ্ছে তাঁর অভিনয় ক্ষমতার জন্য। মুম্বই আয়কর কর্তাদের দাবি, স্ক্রিনে শচীনের উপস্থিতি দর্শকদের নজর টানছে ক্রিকেটার হিসাবে তাঁর খ্যাতির জন্যই। কারণ তাঁর ‘অভিনয় দক্ষতা অতীব সাধারণ মানের।’ শচীনের দাবি ছিল, একজন ব্যক্তি অভিনেতা ও ক্রিকেটার, দুটি পরিচয়ই থাকতে পারে। জবাবে মুম্বই আয়কর কর্তাদের কটাক্ষ, তাহলে মানতে হবে শচীন আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে জেতেন শচীন। ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইবুনাল রায় দেয়, শচীন একজন ক্রিকেটার। আবার অভিনেতাও বটে! কারণ যখন শ্যুটিংয়ের সেটে লাইট ও ক্যামেরার সামনে তিনি অবতীর্ণ হচ্ছেন, তখন তাঁকে সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হচ্ছে। এই রায়েই ১.৭৭ কোটি টাকার বেশি অর্থের উপর আয়কর ছাড় পান শচীন।