একটা বিরাট বটগাছ ছিল। যার আশ্রয়ে বাস করতো অনেক পশু, পাখী। ছায়ায় বিশ্রাম নিত ক্লান্ত পথিক। অজস্র তার ঝুরি, আর ফুল, ফল পাতার তো ইয়ত্তা নেই। সেভাবেই সে ছিল। তারপর একদিন মহাকালের ঝড়ে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে পড়ল সে।
তারপর?
ডিসেম্বর মাস, মানে অফিস কাছারিতে বছরের শেষ হিসেব মেলাতে সবাই ব্যস্ত। সকলের টার্গেট ছোঁবার শেষ চেষ্টা। বড়দিনের আগেই কাজকর্ম গুছিয়ে ফেলতে হবে। তার মধ্যেই এক মঙ্গলবার হঠাৎ সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে গেল। ভয়ে নয়, শ্রদ্ধায়। শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় বাস, অটো তো দূর, নেহাত দু-একটা ছিটেফোঁটা গাড়ি ছাড়া কিছুই চলছে না। দোকান-পাট গতকাল সন্ধ্যে থেকেই বন্ধ। কারফিউ? ১৪৪ ধারা? না, কোনওটাই নয়। মাঝেমধ্যে পুলিশ মোতায়েন করা থাকলেও, জনজীবন আশ্চর্যরকম শান্ত। তারই মধ্যে নতুন সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং-এর সামনে জনস্রোত, তাদের প্রিয় নেত্রীকে একবার শেষ দেখা দেখার জন্য।
এখনও অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি কী ঘটে গেল। রাজ্য চালনার এবং দল পরিচালনার ভার নিয়েছেন আম্মার প্রিয়পাত্র এবং একনিষ্ঠ ভক্ত শ্রী পন্নিরসেলভম। তিনি সামনে দাঁড়িয়ে সকল দর্শনার্থীদের সুবিধা করে দিচ্ছেন যাতায়াতের। পাশে শোকস্তব্ধা শশীকলা, যিনি একদা ছিলেন আম্মার ছায়াসঙ্গিনী। চলচিত্র এবং রাজনীতির জগতের সমস্ত বড় বড় মানুষ একে একে আসছেন মাথা নীচু করে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। স্বয়ং রজনীকান্তও এলেন স্ত্রী কন্যা ও জামাতাসমেত। অপেক্ষারত জনতার দিকে তাকিয়ে প্রণাম জানালেন তিনি, কিন্তু জনতার খুব হেলদোল হল না আজ। জনপ্রিয়তার পাল্লা নেত্রীর দিকেই ভারি। বিকেল সাড়ে চারটের সময় তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে শেষকৃত্যের জন্য। রাজ্যের গর্ব আন্নাদুরাই এবং এম জি রামচন্দ্রনের সমাধি যেখানে আছে, মেরিনা বিচের পাশে সেই আন্না সমাধিতেই তাঁরও সমাধি হবে।
টিভিতে দেখতে দেখতে হঠাতই ডুকরে কেঁদে উঠলেন আমার এক প্রতিবেশী।
সত্যি, এমনটি আর হবে না। চলচ্চিত্র জগত থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন অনেকেই। রূপোলি পর্দার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ভোটে জেতা হয়তো যায়, কিন্তু একভাবে, একা হাতে একটা রাজনৈতিক দল চালিয়ে রাজ্যে শাসকের আসনে বসা যায় না। এই বিষয়ে অনেক বড় বড় অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিঃসন্দেহে পিছনে ফেলে এসেছেন আম্মা। ছোটবেলা থেকেই কোনওদিন হারতে শেখেননি, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত হার মানলেন না তিনি। রাজনীতির গুরু শ্রী এম জি রামচন্দ্রনের ভঙ্গিতে, দলের প্রতীক দু’টি পাতা দেখাতে দুই আঙ্গুল তুলে ঠিক যেভাবে দেখাতেন ‘নালৈ নমদৈ’ (আগামীকাল আমাদের) ঠিক যেন সেইভাবেই আগামী সুদিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় জানালেন রাজ্যবাসীদের!
মহাকালের ঝড়ে উপড়ে যাওয়া বটগাছটিকে ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলা হবে। সময়ের সাথে হয়তো তার আশ্রিত পশুপাখী বা লালিত পথিকেরাও ক্রমে অন্য আশ্রয় খুঁজে নেবে। কিন্তু সেই শূন্যস্থানটা আর পূর্ণ করা যাবে না। কোনওদিনই না।
The post শূন্যতা হৃদয়ে, রাজনীতিতেও… appeared first on Sangbad Pratidin.