সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাধন পাণ্ডে ছিলেন রাজ্য রাজনীতির সেই বিরল ঘরানার নেতা, যাঁরা পার্টিলাইনের তোয়াক্কা না করে সোজা কথা সোজা করে বলতে পারেন। মূলত উত্তর কলকাতা কেন্দ্রিক রাজনীতি করলেও কংগ্রেসের (Congress) অন্দরে তাঁর প্রভাব ছিল ঈর্ষণীয়। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের টিকিটে মোট ৯ বার বিধানসভা ভোটে লড়েছেন সাধনবাবু। একবারও বিধানসভা ভোটে তাঁকে হারের মুখ দেখতে হয়নি।
সাতের দশকের শেষের দিকে উত্তর কলকাতার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা অজিত পাঁজার (Ajit Panja) হাত ধরে কংগ্রেসি রাজনীতিতে প্রবেশ সাধনের। অজিতের হাত ধরেই সর্বভারতীয় স্তরে প্রভাব বাড়ানো শুরু করেন সাধনবাবু। ১৯৮৪ সালে বড়তলার তৎকালীন বিধায়ক অজিত পাঁজা কলকাতা উত্তর-পূর্ব কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়ে যান। অজিতের ছেড়ে যাওয়া আসনে বিধানসভার প্রার্থী হন সাধন। ১৯৮৫ সালের সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত সাধন পাণ্ডের পরিবারকে সমবেদনা রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর, মন্ত্রীর স্মৃতিচারণায় কুণাল-দিলীপ]
২০০৬ পর্যন্ত বড়তলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন সাধনবাবু। ২০০৯ সালে এলাকা পুনর্বিন্যাসের ফলে বড়তলা কেন্দ্রটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত মানিকতলা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন তিনি। এর মধ্যে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছিলেন কংগ্রেসের বিধায়ক। ২০০১ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর থেকে ঘাসফুল প্রতীকেই জিতে এসেছেন। ২০১১ সালে সাধনবাবুকে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী করেন। আমৃত্যু রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সাধন পাণ্ডে জীবনে একবারই ভোটে হেরেছেন। সেটা ১৯৯৮ সালে অজিত পাঁজার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। অজিতবাবু সেবার তৃণমূলের টিকিটে লোকসভায় লড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন সাধনবাবু।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে হার, প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, টুইটে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর]
ঘনিষ্ঠরা বলেন, সাধনবাবুর সবচেয়ে বড় গুণ হল তিনি পার্টিলাইনের তোয়াক্কা করতেন না। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলতেন। সেজন্য বারবার দলের হাইকম্যান্ডের বিরাগভাজনও হতে হয়েছে তাঁকে। তবে, কখনও দলের স্বার্থে আঘাত করেননি। নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ অজিত পাঁজার সঙ্গেও নয়ের দশকের শেষের দিকে তাঁর বিবাদ চরমে ওঠে। ১৯৯৮ সালে অজিতের বিরুদ্ধে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর কারণও সেটাই ছিল। আবার ২০০৫-০৬ সাল নাগাদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর মতানৈক্য চরমে উঠেছিল। কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সব মতানৈক্য দূরে সরিয়ে রেখে মমতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়েছিলেন সাধনবাবু। প্রশাসক হিসাবে সাধনবাবুর সবচেয়ে বড় অবদান হল, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরকে জনপ্রিয় করা। সাধনবাবু মন্ত্রী হওয়ার পরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে এই দপ্তর পরিচিতি পায়।