আগের দিন পথযাত্রায় উর্মিলা মাতন্ডকর বলেছিলেন, পরের দিন মুম্বইয়ের কান্দিভলির কংগ্রেস অফিসে আসতে। কোনও গ্রুপ ইন্টারভিউ নয়। বলেছিলেন, তিনি একা বসবেন সংবাদ প্রতিদিন-এর সঙ্গে। হলও তাই। তপন বকসি-র প্রশ্নের সব উত্তর যথাযথভাবেই দিলেন কংগ্রেস প্রার্থী।
ভোটের মাত্র একমাস আগে আপনি রাজনীতিতে আসার ডাক পেলেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে তৈরি করলেন নিজেকে?
– দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রথমে আমি আমার কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি অংশ, অর্থাৎ অত্যন্ত গরিব শ্রেণির মানুষের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁদের কথা জানার চেষ্টা করেছি। তাঁদের বোঝাতে চেয়েছি তাঁরা আমায় বিশ্বাস করতে পারেন, ভরসা করতে পারেন যে, তাঁদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। এটাই আমার প্রথম কাজ ছিল।
কংগ্রেস থেকে প্রথম ডাক পেয়ে প্রাথমিক অনুভূতি কেমন ছিল?
– আমি প্রথমে ‘না’ বলে দিতে যাচ্ছিলাম। পরে ঠিক করলাম, ইট’স ওকে। কংগ্রেসে যোগ দেব কিন্তু প্রার্থী হব না। তার চেয়ে যিনি প্রার্থী হবেন, তাঁর হয়ে প্রচার করব। আর কংগ্রেস পার্টির নীতি-আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরব। কিন্তু যখন বুঝলাম পার্টি আমাকে প্রার্থীই করতে চাইছে, তখন নিজেকে বোঝালাম যে, আমার সেরাটা আমাকে দিতে হবে।
এর আগে আপনার মধ্যে কোনও রাজনৈতিক চেতনা বা বোধ কাজ করত, যখন আপনি কলেজের ছাত্রী ছিলেন?
– কলেজ লাইফ থেকে নয়, স্কুল লাইফ থেকেই। আমি নিজে ভাল ছাত্রী ছিলাম। অনেক রকমের বই পড়েছি। এমন একটা ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি যেখানে তুমি বড় হয়ে কেমন মানুষ হয়ে উঠবে, সমাজের প্রতি তোমার কর্তব্য কী হওয়া উচিত, তার একটা পরিকল্পনা সবসময়েই ছিল। বাবার কাছ থেকে এ ব্যাপারে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। এই ভাবনাটা আমাকে সবসময়ে উদ্যম জুগিয়েছে কিছু করার। আমি নিজে আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল পরিবারের। আমার জীবনে কোনও আর্থিক সমস্যা ছিল না। বরং স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক পদে এসে, সমাজের হয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখছি, এটা ভীষণ কঠিন একটা জীবন। আমি সেই জীবনকেই বেছে নিলাম। তার কারণ আমি এই বাস্তবতাকে ভীষণভাবে বিশ্বাস করি। এছাড়া কাউকে না কাউকে তো এই দায়িত্বটা নিতেই হবে এবং নিজের সেরাটা দিতে হবে।
[আরও পড়ুন: নতুন ছবির অভিজ্ঞতা থেকে রোজকার জীবনে খুঁটিনাটি, অকপট আলিয়া ]
কিন্তু কংগ্রেসেই কেন, অন্য দল নয় কেন?
– কারণ ছোটবেলা থেকে যে আদর্শে বড় হয়েছি সেটা কংগ্রেসের আদর্শের সঙ্গে মেলে। উদার ভারত, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সঙ্গে মেলে। আর কংগ্রেস এমন একটা দল যেটা সমাজকে আলাদা আলাদা গোষ্ঠীতে ভাগ করে দেয় না।
আপনার কেন্দ্রে ১৮ লক্ষেরও বেশি ভোটদাতা রয়েছে। যদি আপনি জিতে আসেন, তাহলে তাদের জন্য আপনার কর্মসূচি কী?
– অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য ঘর, ব্যবহারের জন্য জল, আমার কেন্দ্রের অন্যতম সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে। আমি জানি আমার কেন্দ্রের গোরাই-মাহাড়া অঞ্চলের অনেক মানুষ রাত দেড়টা কিংবা দু’টোর সময় না ঘুমিয়ে ঘরের জন্য জল ধরেন । তাঁদেরকেই আবার ভোর সাতটায় ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেন ধরতে হয় চার্চগেট বা মেরিন লাইন্সে অফিসে যাওয়ার জন্য। এছাড়া আরেকটা বিষয় ভীষণ ভাবে দরকারি মনে হয়েছে আমার, সেটা হল বস্তিবাড়ির দিকটা। রাস্তা থেকে ভিতরে যেভাবে গায়ে গায়ে লাগোয়া বস্তিঘরগুলি বেড়ে উঠেছে, সেখানে সভ্যতার কোনও আলো এসে পৌঁছতে পারে না। তার সঙ্গে রয়েছে মেয়েদের স্বাস্থ্যের দিকটাও।
আজ সকালেই আপনি শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ চেয়েছেন। কী বললেন তিনি?
– হুম। উনি আমাকে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। শরদজি আমাকে অনেক ছোটবেলা থেকে চেনেন। যখন আমি অভিনয়ে আসিনি তখন থেকে।
কংগ্রেসে যোগ দিতে যখন দিল্লি গেলেন, রাহুল গান্ধী কী বলেছিলেন?
– উনি জানেন, যে কেন্দ্রের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে, সেটা বেশ বড় একটা কেন্দ্র। সেই দায়িত্ব প্রসঙ্গেই কথা হয়েছে।
আপনার কেন্দ্র আপনার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়? এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির রাম নায়েকের মতো নেতা টানা পাঁঁচবার জিতেছেন, এমনকী, শেষ লোকসভা ভোটেও বিজেপি প্রার্থী সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়েছেন?
– প্রথম কথা আমি রাম নায়েকের বিরুদ্ধে লড়ছি না। দ্বিতীয়ত, আমার বিরুদ্ধে যিনি লড়ছেন (বিজেপির গোপাল শেট্টি) তাঁর আসল ভাবমূর্তির চেয়েও মিডিয়ার কিছু অংশ তাঁকে বড় করে তুলেছে । আমি আমার শক্তিশালী বিরোধী তাঁকেই মনে করব, যিনি সত্যিকারের কোনও ‘ট্রিমেন্ডাস বডি অফ ওয়ার্ক’ দেখিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি শুরুতে তেমন কাজের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা করেননি। সুতরাং তাঁকে আমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হয়ত এটা
ততটা সহজ হবে না, কিন্তু আমি আমার যুদ্ধ নিজের মতো লড়ে জিতেও যেতে পারি।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করছেন নওয়াজ]
২০০৪-তে অভিনেতা গোবিন্দা এই কেন্দ্র থেকে রাম নায়েকের মতো হেভিওয়েট নেতাকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছিলেন। আপনার কি মনে হচ্ছে এবার আবার সিনেমা জগৎ থেকে এসে আপনিও সেরকম আশ্চর্য কিছু ঘটিয়ে দিতে পারেন?
– যেটা নিয়ে আমি কিছু ভাবিনি, সেটা নিয়ে কিছু বলব না।
সিনেমা থেকে রাজনীতিতে আসার এই ঘটনায় আপনার সিনেমা জগতের সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
– প্রথমদিকে ওঁরা জানতেন না। কিন্তু পরে আমাকে কয়েকজন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
কতজন?
– বেশ কয়েকজন।
রামগোপাল ভার্মা কী বললেন?
– (এই প্রথম হোঁচট খেলেন মনে হল। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে) আমি…আমি ওঁর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কোনও কথাই বলিনি।
The post ভোটের আগে রাজনীতি থেকে রামগোপাল ভার্মা, খোলা আড্ডায় উর্মিলা appeared first on Sangbad Pratidin.