শংকরলাল চক্রবর্তী: আজ থেকে আমার বন্ধু কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey) ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি (AIFF President)। বন্ধুর গর্বে আমি গর্বিত। ওর সাফল্যে আমি আজ আত্মহারা। হোয়াটসঅ্যাপ, ফোনে বন্ধুরা আমাকেও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাচ্ছে। ওরা বলছে, ”কী রে, বন্ধু তো জিতে গেল।” আমার তো মনে হচ্ছে এটা আমারই সাফল্য।
ফেডারেশনের নির্বাচনের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই কল্যাণের সঙ্গে আমার আলোচনা চলছিল। নিরন্তর কথা হচ্ছিল। কল্যাণ যে জিতবে, এ ব্যাপারে আমার মনে কোনও সংশয় ছিল না। আমি জানতাম কল্যাণ বেশ ভাল মতোই জিতবে নির্বাচন। সত্যি বলতে কী, ওর জয় নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। কিন্তু বাইচুং ভুটিয়ার (Bhaichung Bhutia) মতো দেশের একনম্বর ফুটবল আইকনকে একেবারে গো হারা হারিয়ে প্রেসিডেন্টের মসনদে বসবে কল্যাণ, এটা ভাবিনি।
[আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরিবর্তের নাম ঘোষণা করল BCCI]
সেই টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে আমার আর কল্যাণের সম্পর্ক। ছেলেবেলা থেকে ওকে ভাল করে জানি। দেশ ও সমাজের প্রতি ওর চিন্তাভাবনা, পড়াশোনা আমাকে মুগ্ধ করে। কিছু একটা করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে, এই গুণগুলো কল্যাণের মধ্যে রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামিদিনে ভারতের অন্যতম সেরা ফুটবল-প্রেসিডেন্ট হয়ে উঠবে কল্যাণ।
কল্যাণের অনেক গুণ। ও কোনওদিনই নিজেকে একটা গ্রুপের মধ্যে ধরেবেঁধে রাখেনি। কল্যাণ সবার সঙ্গে চলতে জানে। আর এখানেই কল্যাণ বাইচুংকে বলে বলে গোল দিয়েছে। বহু পিছনে ফেলে দিয়েছে দেশের ফুটবলের সেরা নামকে। নির্বাচনের আগে বাইচুংকে বারংবার বোঝাতে হয়েছে, ও দেশকে ক’টা ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছে, দেশের হয়ে কতগুলো ম্যাচ খেলেছে। নিজের রাজ্য সংস্থার কাছ থেকেও ভোট পায়নি বাইচুং। এর কারণ বাইচুং নিজেকে একটা ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিল। কল্যাণ যেভাবে বাইচুংকে হারিয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট হয়েছে, তাতে প্রমাণিত হয়, দেশের সেরা খেলোয়াড় আসলে কে। কল্যাণের চিন্তাভাবনা সংকীর্ণ নয়। ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখে না। ও একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রয়েছে। তবে খেলার মধ্যে ও রাজনীতি ঢোকাবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি।
কল্যাণের সাফল্যের দিনে পুরনো অনেক ঘটনা চোখে ভিড় করে আসছে। আমরা ট্রেনের আনরিজার্ভড কামরার বাথরুমে শুয়ে এসেছি। এটা কল্যাণ ওর বক্তব্যে পেশও করেছে। আবার রাজার হালেও থেকেছি। ছোটবেলার সেই টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির দৌলতে জার্মানি, লাতিন আমেরিকায় গিয়েছি। মনে পড়ছে কোরিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের হয়ে খেলার কথা। সেবার আমি জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন। কোরিয়ায় প্রথম ম্যাচে দারুণ খেলল কল্যাণ। ম্যাচের সেরা হল ও। পরের ম্যাচে আমি বেস্ট প্লেয়ার। প্রদীপ স্যর বললেন, ”কী রে, তোরাই কি সব পুরস্কার নিয়ে যাবি!” সেই ছোটবেলা থেকে আমাদের দারুণ তালমিল। উল্টোডাঙায় ওর বাড়িতে গিয়ে কত আড্ডা মেরেছি। কল্যাণের স্ত্রী সোহিনীর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। আমাদের মধ্যে একটা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পরে কল্যাণের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আসলে আমাদের কথা হয় রাতে। মোহনবাগানের কোচ থাকার সময়েও আমার সঙ্গে কল্যাণের কথা রাতেই হত। আজ ভীষণ ব্যস্ত কল্যাণ। কথা বলার সময় অনেক পড়ে রয়েছে। কল্যাণ জানে, শংকর ওর পাশে রয়েছে চিরকাল।
আগামি দিনকয়েক দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হবে কল্যাণকে। পরিস্থিতির বিচার করলে তা ভীষণ কঠিন কল্যাণের জন্য। দীর্ঘদিন পরে নির্বাচন হল ফেডারেশনে। তার উপরে ফিফার নির্বাসন সদ্য উঠেছে। সামনেই রয়েছে মহিলাদের বিশ্বকাপ। ফলে রাস্তা ভীষণ কঠিন। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস কল্যাণ এগিয়ে যাবে। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার সময় থেকেই হাবিব স্যরের কাছ থেকে শিখেছিলাম চ্যালেঞ্জ নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যেত হয়। আর চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেই আমাদের সেরা খেলাটা বেরিয়ে আসত। আমার বিশ্বাস এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেই কল্যাণের সেরা খেলাটা বেরিয়ে আসবে। বেশি করে বলব অঞ্জনদার (মিত্র) কথা। ওঁর আশীর্বাদ সব সমযে রয়েছে কল্যাণের সঙ্গে। অঞ্জনদাকে খুব কাছ থেকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে দেখেছে। এই অভিজ্ঞতা কল্যাণকে আরও সাহায্য করবে। অল দ্য বেস্ট বন্ধু।