রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: কাঁথিতে সারদার বহুতল নির্মাণের অনুমতি সংক্রান্ত ফাইল লোপাট হওয়ায় এফআইআর করে তদন্ত শুরু করল পুলিশ। উল্লেখ্য, জেল থেকে নিয়ম মেনে আদালতের কাছে যে দু’টি চিঠি লিখেছিলেন সারদা কর্তা তার প্রত্যেকটিতেই কাঁথির যে বহুতল প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছিলেন তা ওই লোপাট হওয়া ফাইলেই বন্দি ছিল বলে দাবি। এমনকী, সিবিআই (CBI) ও ইডি’র (ED) তদন্তেও পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীর সময়ে বহুতল নির্মাণ এবং নগদ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেনের উল্লেখ রয়েছে বলে অভিযোগ।
২০১১ সালের ২৯ মে কাঁথি পুরসভার ২০ নং ওয়ার্ডের ধর্মদাসবাড়ে কাঁথি-দিঘা ১১৬বি জাতীয় সড়কের পাশে সারদার (Saradha) বহুতল নির্মাণের অনুমতি দেয় পুরসভা। কিন্তু সেই অনুমতিও আবেদন সংক্রান্ত গোটা ফাইলটাই উধাও। মঙ্গলবার কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা জানান, “সারদার বহুতল নির্মাণ সংক্রান্ত ফাইলটি কাঁথি পুরসভায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ফাইল লোপাটের তদন্তে নেমে তৎকালীন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী ও পুরসভার আধিকারিকদের জেরা করবে পুলিশ। এক আইনজীবীর আরটিআই থেকে সারদার বহুতল নির্মাণ সংক্রান্ত ফাইল লোপাটের বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসতেই বর্তমান পুরপ্রধান সুবল মান্না এফআইআর করেন।
[আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ে স্বমেজাজে মুখ্যমন্ত্রী, ঘুরে দেখলেন বাজার, গুরু পূর্ণিমায় খুদেদের দিলেন চকোলেট]
তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, দু’টি চিঠিতেই সারদা কর্তা যে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ও পুরসভাকে বিপুল অর্থ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার যোগসূত্র রয়েছে ওই লোপাট হওয়া ফাইলেই। সারদা তদন্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই ফাইলটি কাঁথি পুরসভা থেকে লোপাট হওয়ায় উদ্বিগ্ন সিবিআই ও ইডি’র গোয়েন্দারাও। কাঁথির রাঙামাটি শ্মশানকাণ্ডের তদন্তে নেমে এদিনই গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দুর গাড়ির চালক গোপাল সিংকে। একই সঙ্গে আলোক সাউ নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত শ্মশানকাণ্ডে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কাঁথি থানার পুলিশ। গোপাল সিংকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। আলোক সাউকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অন্যদিকে, পুলিশ হেফাজতে থাকা পুরসভার তৎকালীন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরাকে ছ’দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। কাঁথির আঠিলাগড়ির বাসিন্দা প্রাক্তন পুরকর্মী গোপাল সিং দীর্ঘদিন ধরেই অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু অলোক সাউ ছিলেন ঠিকাদার সংস্থার ম্যানেজার। কাঁথির রাঙামাটি শ্মশান সংলগ্ন স্টল নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীর (Soumendu Adhikari) বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে বর্তমান পুরপ্রধান সুবলকুমার মান্না এফআইআর করতেই তদন্তে নেমে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারি এড়াতে ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন সৌমেন্দু। গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিলেও তদন্তে সহযোগিতা করার কথা বলেছে।
এদিকে, গ্রিন সিটি মিশনে পথবাতি দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তের জন্যে অধিকারী পরিবারের দুই সদস্য অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারীর দাদা কৃষ্ণেন্দু ও সেজ ভাই সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর (Dibyendu Adhikari) স্ত্রী সুতপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নোটিস পাঠায় কাঁথি থানার পুলিশ। মঙ্গলবারই উপস্থিত হওয়ার জন্যে নোটিস দেওয়া হয়। তবে কেউই উপস্থিত হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ফের নোটিস পাঠানো হবে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনায় পুরসভার প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ চুয়ানকে আটক করেছে কাঁথি থানার পুলিশ।