সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবীণ সৌদি সাংবাদিক জামাল আহমেদ খাশোগ্গিকে হত্যার গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে চলেছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ (CIA)। আর সেখানে উঠে এসেছে সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের নাম।
[আরও পড়ুন: গালওয়ানে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ভিডিও প্রকাশ করল চিন, ভারতকেই দোষারোপ বেজিংয়ের]
জনপ্রিয় মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ সিআইএ-র একাধিক গোপন সূত্র উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে খাশোগ্গি হত্যার রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে সিআইএ। সেই গোপন রিপোর্টের বেশ কিছু অংশ আগাম হাতে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় বিভাগের হাতে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স তথা যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের (Mohammed bin Salman) নির্দেশে পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছিল ৬০ বছরের খাশোগ্গিকে। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে ডেকে পাঠিয়ে রীতিমতো ফাঁদ পেতে খাশোগ্গিকে হত্যা করে সৌদি গুপ্তচর সংস্থার কিলিং টিমের সিক্রেট এজেন্টরা। তখন খাশোগ্গি ওয়াশিংটন পোস্টের পে রোলে থাকা সাংবাদিক ও কলামিস্ট ছিলেন।
ভিডিও কলের মাধ্যমে নৃশংস খুনের প্রক্রিয়াটি নিজে তদারক করেন যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। পরবর্তীকালে সলমনকে দায়ী করে তোলপাড় হয় গোটা বিশ্ব। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সর্বশক্তিমান যুবরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস দেখায়নি কেউই। তাছাড়া, ব্যাপক শাসন সংস্কারের নামে সৌদি রাজ পরিবারের বহু প্রভাবশালী সদস্যকে জেলবন্দি করেছেন বা দেশছাড়া করেছেন সলমন নিজে। ফলে দেশের ভিতরে তাঁকে এখন চ্যালেঞ্জ করার কেউ নেই। এই অবস্থায় তিনি নিজেকে অজাতশত্রু প্রমাণ করার চেষ্টাও চালিয়েছেন।
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খাশোগ্গি হত্যায় পুরো ক্লিনচিট দিয়েছেন নিজেদের পরম বন্ধু যুবরাজ সলমনকে। পুতিন ও ট্রাম্প দু’জনেই আর্থিক লাভ, অস্ত্র বিক্রি ও পেট্রো বাণিজ্যের স্বার্থে সলমনকে ক্ষমতায় রাখতে তৎপর হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটে জেতার আগেই জো বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন তিনি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করবেন এবং খাশোগ্গি হত্যার পিছনে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টেই ভরসা করবেন। সলমনের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক বা ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্ক ভাল নয়। ফলে খাশোগ্গি (Jamal Khashoggi) হত্যা নিয়ে যখন আসল সত্যি বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে তখনই আশঙ্কা করা হচ্ছে সিআইএ-র গোপন রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলেই চরম অবনতি হতে পারে আমেরিকার সঙ্গে তাদের সামরিক জোটসঙ্গী সৌদি আরবের সম্পর্কের। কারণ সলমন বরাবরই খাশোগ্গি হত্যায় নিজের জড়িত থাকার খবরকে ভুয়ো ও হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ খাশোগ্গি হত্যার পর তুরস্কের গুপ্তচর সংস্থা ও পুলিশ টানা তদন্ত চালিয়ে অনেক অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছিল। তাতে যুবরাজ সলমন ও সৌদি কিলিং টিমের সিক্রেট এজেন্টদের জড়িত থাকার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়েছে।
সিআইএ-র ওই রিপোর্টের দাবি, সাংবাদিক খাশোগ্গিকে ঠান্ডা মাথায় গলায় ছুরি চালিয়ে খুন করা হয়েছিল। তারপর মাথা কেটে ফেলা হয়। পরে দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে টুকরো করা হয়। সব কাটা দেহাংশ সালফিউরিক অ্যাসিড ভরতি ড্রামে চুবিয়ে গলিয়ে ফেলে কিলিং টিম। খুনের সব চিহ্ন মুছে ফেলতে দূতাবাসের ভিতরেই খাশোগ্গির শরীরের যে অংশ অ্যাসিডে গলেনি সেটি এবং কোট প্যান্ট, অন্তর্বাস সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এভাবেই আশি কেজি ওজনের একজন মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার চেষ্টা হয়েছিল। প্রক্রিয়াটি ভিডিও কলের মাধ্যমে ঠান্ডা মাথায় তদারক করেছিলেন যুবরাজ সলমন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই ভয়ংকর সত্য ঘটনাটি নিয়ে একাধিক ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে।