নির্মল ধর: সৌরভ পালোধি (Saurav Palodhi) এখন সিনেমার চাইতে বেশি মন দিয়েছেন নাটক ও ডিজিটাল মাধ্যমে। তারঁ ব্লগগুলিও গতানুগতিকতার বাইরে। এমন মানুষের নির্দেশনায় তৈরি নাটক যে প্রতিবাদী ও প্রতিস্পর্ধী হবে তা জানাই ছিল। পোলিশ নাট্যকার স্লাভোমির মোরজাকের অ্যাবসার্ড ঘরানার নাটক ‘ম্যাডি’ (Maddy)। তাই-ই মঞ্চস্থ হল বিশ্ব নাট্য দিবসে।
স্লাভোমির ‘Dialogue’ সিরিজ নামে অনেকগুলি নাটক লিখেছিলেন। এই ‘ম্যাডি’ তারই একটি। ‘ম্যাডি’ শব্দটাই জানিয়ে দিচ্ছে নিশ্চিত কোনও পাগলের কাণ্ড কারখানা! হ্যাঁ, খানিকটা তাই-ই! এক বয়স্ক ‘খুড়ো'(বুদ্ধদেব দাশ) হাতে একটা বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনাগত এক শত্রুকে গুলি করে মারবে বলে। অথচ সে প্রায় দৃষ্টিহীন। ভাইপো (শান্তনু মণ্ডল) তাঁকে নিয়ে এসেছে এক চোখের ডাক্তারের (রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে। এঁদের তিনজনের সংলাপ বিনিময়ের মধ্যেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে তাঁদের পারস্পরিক সামাজিক স্রোত।
বৃদ্ধ চাইছেন ‘অদেখা’ শত্রুকে পেলেই গুলি করতে। ভাইপো তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হয়ে সেই শত্রুকে খুঁজতে সাহায্য করে। আর ডাক্তারের ত্রিশঙ্কু অবস্থা এই দু’জনের মাঝে পড়ে। একনায়কতন্ত্র, যুদ্ধবিরোধী এবং বিপ্লবী ভাবনার এই নাটক কখনও ‘অ্যাবসার্ড’ লাগেনি। বরং নাটকের মূল বার্তাটি খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট লেগেছে। স্টেজের এক পাশে টাঙিয়ে রাখা পর্দায় বারবার ফুটে উঠেছে হিটলার, মুসোলিনি থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন আগ্রাসী একনায়কতন্ত্রী শাসকের জান্তব হিংসার কিছু ছবি। তাঁদের কৃত দুষ্কর্মের ফুটেজ।
[আরও পড়ুন: ছবি বিকৃত করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি! প্রযোজকের বিরুদ্ধে ইম্পার দ্বারস্থ স্বস্তিকা]
দর্শকের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ একাধিকবার বন্দুক উঁচিয়ে অদৃশ্য শত্রুকে শাসিয়ে গিয়েছেন। সৌরভ পালোধী “গোলি মারো সালো গদ্দারোকো” বা মারবার আগে তার আধার কার্ড দেখে নেবার কথা বলে নাটকটিকে শুধু আজকের নয়, আমাদের দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষিতে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তা পুরো সফল নয়, কারণ নাটকের প্রকরণশৈলী তো বিদেশি।
তবুও সাধারণ দর্শকের কাছে বক্তব্য নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা থাকে না। তার আরও একটি বড় কারণ ডাক্তারের ভূমিকায় রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rahul Banerjee) বাস্তব ঘেঁষা স্বাভাবিক অভিনয়। অদ্ভুত চরিত্রের রোগীটি নিয়ে তিনি খানিকটা বিব্রত হলেও তাঁর প্রতি সহমর্মিতা দেখান। এবং ভাইপোটি যে নব্য যুবসমাজের প্রতিনিধি – সেটা বুঝতেও কোনও অসুবিধে হয় না। বৃদ্ধের চরিত্রে বুদ্ধদেব দাশ এবং ভাইপোর ভূমিকায় শান্তনু মণ্ডলও ছিলেন যোগ্য সহযোগী।
‘ইচ্ছেমতো’ দলের ব্যানারে সৌরভের এই নতুন নাটক এমন কিছু অভিনব কথা জানাতে পারল না। শুধুমাত্র ক্যালকাটা সেন্টার অফ ক্রিয়েটিভিটির স্পেসটি ব্যবহার করা ছাড়া। প্রসেনিয়াম ছেড়ে নাটককে মুক্ত অঙ্গনে নিয়ে আসার ব্যাপারটায় আর তেমন নতুনত্ব এখন আর নেই।