রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: প্রবল চাপের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হল বঙ্গ বিজেপির (BJP) ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। শেষমেশ দিল্লির চাপে দলের রাজ্য কর্মসমিতিতে বাদ পড়া অধিকাংশ পুরনো নেতাদের রাখতে বাধ্য হল তারা। তবে কর্মসমিতিতে নাম নেই রূপা গঙ্গোপাধ্যায় (Rupa Ganguly), সায়ন্তন বসুদের (Sayantan Basu)।
বিদ্রোহী শিবিরের ক্ষোভ-বিক্ষোভের আঁচ গিয়ে পৌঁছেছিল দিল্লিতে। পুরনোদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও (Locket Chatterjee)। গত সপ্তাহে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছেও বাংলায় দলের বেহাল অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন লকেট। কমিটিতে পুরনো নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি করেছিলেন তিনি। বিক্ষুব্ধ শিবিরের দাবিকে মান্যতা ও লকেটের বক্তব্যকে শীর্ষ নেতৃত্ব গুরুত্ব দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তার ফলস্বরূপ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপেই সোমবার রাতে দলের রাজ্য কর্মসমিতি ও বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে বঙ্গ বিজেপি, তাতে স্থান পেয়েছেন বাদ পড়া রাজ্য ও জেলার বহু পুরনো নেতা।
[আরও পড়ুন: হেফাজতে না নিয়েই চলবে CBI জেরা, আপাতত স্বস্তিতে SSC’র প্রাক্তন দুই কর্তা]
যদিও সেই তালিকায় রাখা হয়নি বিক্ষুব্ধ শিবিরের অন্যতম দুই নেতা সায়ন্তন বসু ও সাময়িক বরখাস্ত রীতেশ তেওয়ারিকে। স্বাভাবিকভাবেই সাময়িক বহিষ্কৃত হওয়ায় রীতেশের নাম নেই। কিন্তু সায়ন্তনের মতো বর্ষীয়ান নেতা তথা এক সময়ে দলের মুখ, তাঁকে কেন কর্মসমিতিতে নেওয়া হল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
আবার কলকাতা পুরভোটের সময় টাকা নিয়ে প্রার্থী করার অভিযোগ তুলে দলের বিরুদ্ধে সরব হওয়া রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কেও কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। রাজ্য কর্মসমিতিতে পুরনোদের রাখার ফলে দলের মধ্যে ক্ষোভ কতটা প্রশমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। কারণ, যাঁরা রাজ্যে দলের বিভিন্ন পদে ছিলেন তাঁরা কি আদৌ কর্মসমিতির সাধারণ সদস্য হয়ে খুশি হবেন। এই প্রশ্ন থাকছেই।
কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ চলে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পদহীন ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। তাঁকে কর্মসমিতির সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া, পদাধিকারী থেকে বাদ পড়া প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি, শমীক ভট্টাচার্য, রাজকমল পাঠক, দুই কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত ও বিজয় ওঝারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আবার প্রাক্তন জেলা সভাপতি শিবাজি সিংহরায়, কিশোর কর, অভিজিৎ দাস (ববি), দেবাঞ্জল চট্টোপাধ্যায়—সহ দেবতনু ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা ভট্টাচার্য, দুধকুমার মণ্ডলের মতো পুরনো নেতারা কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
দিলীপ ঘোষের জমানার সময় থাকা যুবনেতা দেবজিৎ সরকার, প্রকাশ দাসরা কমিটিতে এসেছেন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা শঙ্কুদেব পন্ডা, দশরথ তিরকে, দুলাল বর, ডা. রথীন চক্রবর্তী কমিটিতে রয়েছেন। পদাধিকারবলে কমিটিতে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গা। এছাড়া, আলি হোসেন, কিষান ঝাওয়ার, স্বপন পাল, শিশির বাজোরিয়া, বীথিকা মণ্ডল, অসীম সরকারের মতো পুরনো নেতাদেরও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষও।
[আরও পড়ুন: এপ্রিলেই হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ঋণের অঙ্ক, উপকৃত বহু পড়ুয়া]
আবার বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যের তালিকায় জে্যাতির্ময়ী শিকদার, অঞ্জনা বসু, দেবিকা মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম হালদার, পাপিয়া অধিকারী প্রমুখ সেলিব্রিটিরা রয়েছেন। দলের সব সাংসদ ও বিধায়করা আমন্ত্রিত সদস্য বলে উল্লেখ থাকলেও আলাদা করে কোনও বিধায়কের নাম লেখা হয়নি। এদিকে, সায়ন্তনের নাম না থাকা নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ওঁকে অন্যত্র বা কেন্দ্রীয় স্তরেও কাজে লাগানো হতে পারে।