সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে সরকারি চাকরি পাওয়া যায় না। অথচ নির্বাচনে লড়াই করা সাংসদ বা বিধায়ক হতে বাধা নেই। ফলে গণতন্ত্রের গলিঘুঁজি ধরে সংসদে দিব্বি পৌঁছে যাচ্ছে দাগী অপরাধীরা। মঙ্গলবার ফের বিষয়টি তুলে ধরল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এই বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘রাজনীতির অপরাধীকরণ রুখতে পদক্ষেপ করছে না আইনসভা।’
[আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের অভাবে কোনও কোনও মৃত্যু হয়নি দেশে, জানাল কেন্দ্র]
অপরাধীদের রাজনীতিতে প্রবেশ করা নিয়ে ২০১৮ সালের একটি মামলায় শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল যে রাজনীতিতে অপরাধীদের প্রবেশ দুর্ভাগ্যজনক। অপরাধীরা যদি ভোটে জিতে বিধায়ক, সাংসদ হয়ে যায়, তাহলে সমূহ বিপদ। কারণ সাংবিধানিক ক্ষমতার বলে সেই অপরাধীরাই আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এর জেরে দেশের সাংবিধানিক স্বার্থ বিপর্যস্ত হতে পারে। সাংবিধানিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে দেশবাসীও নিরাপদে থাকবে না। তাই রাজনীতিতে অপরাধীদের প্রবেশ আটকাতে সংসদের উচিত যথাযথ আইন প্রণয়ন করা। সেই আইনই একমাত্র অপরাধীদের রুখতে পারে। তাছাড়া অপরাধীরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেই কেউ না কেউ জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার বিচার চলে দীর্ঘদিন ধরে। এমনিতেই শীর্ষ আদালতের বকেয়া মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারসঙ্গে যদি এই অপরাধীদের রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ সংক্রান্ত মামলা জুড়ে যায়, তাহলে আদালতের সময় নষ্ট হবে। যেটা এতদিন হয়ে এসেছে। তাই এই ধরনের বিড়ম্বনা এবার সংসদকেই মেটাতে হবে। কিন্তু খাতায়কলমে আদালতের কথায় আমল দেয়নি আইনসভা। এই বিষয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি আর এস নরিমান এবং বি আর গাভাইয়ের ডিভিশিন বেঞ্চ বলে, “রাজনীতির অপরাধীকরণ রুখতে কোনও পদক্ষেপ করবে না আইনসভা। নিকট বা সুদূর ভবিষ্যতেও এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না তা স্পষ্ট।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে এক নির্দেশে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে থাকা ফৌজদারি মামলার বিবরণ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন এমন প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হল এবং স্বচ্ছ ছবির প্রার্থীদের কেন জায়গা দেওয়া হল না, সেই কারণগুলিও উল্লেখ করতে বলেছিল আদালত। বলে রাখা ভাল, ২০১৯ সালে লোকসভায় জয়ীদের কেরিয়ার খতিয়ে দেখে বিশ্লেষকরা জানিয়েছিলেন, ৫৩৯ জন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে ২৩৩ জনের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও অপরাধের মামলা চলছে৷ তাঁরা নিজেরাই প্রার্থীপদে মনোনয়নের সময় তা প্রকাশ করেছেন৷ যেমন, কেরলের ইদুক্কিতে কংগ্রেসের সাংসদ ডিন কুরিয়াকোসের বিরুদ্ধে অন্তত ২০০টি মামলা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ তার মধ্যে অন্যতম অনুপ্রবেশ, ডাকাতি, খুনের মতো গুরুতর মামলা৷ ১৯ জন মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত৷ হয় ধর্ষণ, নয়তো অপহরণ কিংবা খুন৷ সবমিলিয়ে রাজনীতিতে দগীদের রমরমা যে বেড়েই চলেছে তা স্পষ্ট।