দীপঙ্কর মণ্ডল এবং কলহার মুখোপাধ্যায়: আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সরগর হতে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে রাজ্যের প্রতিটি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে ট্যাব (Tab) কিংবা স্মার্ট ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এই শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়ার পর্যায় শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপর মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রত্যেককে একই খাতে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এই কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষাদপ্তর। তবে এখনও পর্যন্ত যা তথ্য উঠে আসছে তাতে দেখা গিয়েছে, প্রায় তিন লক্ষের মত ছাত্র-ছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য জমা পড়েনি। সেগুলি চলতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে স্কুলগুলির কাছে।
প্রতিটি জেলার স্কুলগুলির কাছে এই নির্দেশিকা শিক্ষাদপ্তরের তরফে পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষের পথে। শিক্ষাদপ্তর সূত্রে পাওয়া একটি হিসাব অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, মাদ্রাসা ছাড়া রাজ্যের ৬৪০৭টি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ট্যাব কেনার অনুদান পাবেন। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সর্বমোট ৮ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৮৭। এরমধ্যে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি স্কুলগুলি ইতিমধ্যেই জমা দিয়ে দিয়েছে। সেই সংখ্যাটা ৫ লক্ষ ২০ হাজার ৩৮৯। আর নথি জমা পড়েনি ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৯৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর। এরমধ্যে সবথেকে পিছিয়ে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এখানকার প্রায় ৩৩ হাজার পড়ুয়ার নথি এখনও জমা পড়েনি। তারপর পশ্চিম মেদিনীপুর। এই জেলার প্রায় সাড়ে আট হাজার নথি জমা পরেনি। মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হুগলি, বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অধিকাংশ স্কুল নথি জমা না পড়ার তালিকায় অনেকটাই পিছনের স্থানে অবস্থান করছে বলে শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবারের মধ্যে ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্ত নথি জমা দেওয়ার জন্য ‘অতীব জরুরী’ মর্মে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে স্কুলগুলির কাছে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধান শিক্ষকদের।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত অফিসে চড়াও-বিক্ষোভ, আরাবুলপুত্রর গাড়ি ভাঙচুর, রণক্ষেত্র ভাঙড়]
প্রসঙ্গত, ১৯ জুন শিক্ষা দফতর নোটিশ জারি করে ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরেও কাজ কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। পুনরায় নির্দেশিকা পাঠানো হচ্ছে স্কুলগুলির কাছে। একই সঙ্গে ফাজিল পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ট্যাব দেওয়ার জন্য ব্যাংকের নথি জমা দিতেও বলা হয়েছে। শিক্ষা দপ্তরের বাংলার শিক্ষা পোর্টালে তথ্য আপলোড করে তা পাকাপাকিভাবে সেরে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্কুলগুলি। তবে এরই মধ্যে একাধিক শিক্ষক সংগঠন স্কুল বন্ধ থাকার অসুবিধার কথা তুলে ধরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাস্তব সমস্যাগুলির দিকে ইঙ্গিত করেছে।
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি জানিয়েছেন, দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করতে হবে ১৫ জুলাই-এর মধ্যে বলে ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। অনেক বিদ্যালয় পরের সপ্তাহে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ ভরতির তারিখ রেখেছে। এমতবস্থায় কীভাবে সাত জুলায়ের মধ্যে ব্যাংকের নথি জমা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এখন স্কুল বন্ধ। স্পেশ্যাল ট্রেনের ছাড়পত্র নেই। অথচ জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশিকা জারি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা মানসিক উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি। অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চন্দন গরাই জানিয়েছেন, স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্র ছাত্রী অ্যাকাউন্ট ডিটেলস জমা না দেওয়ায় তথ্য পাঠাতে সমস্যায় পড়ছে। আবার স্কুল বন্ধ থাকায় এই কাজে শিক্ষকদের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অনেক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেছেন। ছাত্র ছাত্রীদের একাউন্ট না থাকায় অনেকে তা জমা দিতে পারছে না।