কৃষ্ণকুমার দাস: ভারী বর্ষায় মাসখানেক আগে বিপজ্জনক ইউক্যালিপটাস গাছ চাপা পড়ে হাওড়া পুরসভা চত্বরেই প্রাণ হারান দুই নাগরিক। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতার মহানাগরিক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার দু'দিন পরই খাস কলকাতায় কতগুলি এমন বিপজ্জনক-প্রাণঘাতী গাছ দাঁড়িয়ে আছে, তা জানতে গোপন সমীক্ষার নির্দেশ দেন মহানাগরিক।
সোমবার সেই রিপোর্ট পুরভবনে জমা পড়তেই কপালে বিপদের ভাঁজ বেড়েছে পুরকর্তাদের। কারণ, কলকাতার ধর্মতলা স্ট্রিট, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, নিমতলাঘাট স্ট্রিট, এপিসি রোড, হরিশ মুখার্জি, বিবেকানন্দ রোড, চেতলা সেন্ট্রাল রোড, হাজরা রোড, আলিপুর রোড, রাজা এস সি মল্লিক রোড-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ১৭১টি বড় গাছ নুইয়ে পড়ে আছে।
পুরসভার উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন, কার্যত শুয়ে পড়া এই গাছগুলির বেশ কয়েকটির বয়স একশো পেরিয়েছে। কিন্তু হেলে থাকা ভারী গাছগুলি এতটাই বিপজ্জনক যে, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে একাধিক মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই হেলে পড়া ১৭১টি বাদ দিয়েও মৃত অবস্থায় ডালপালা ছড়িয়ে মহানগরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরও ২৮টি গাছ। গুরুতর অসুখে ধুঁকছে ৯টি এবং গুঁড়ি ক্ষয়ে গিয়ে শিকড় আঁকড়ে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ১২টি বৃক্ষ। সব মিলিয়ে শহরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ২২০টি বিপজ্জনক গাছ এখন পুরসভার মাথাব্যথার অন্যতম কারণ বলে স্বীকার করেছেন পুরকর্তারা।
তবে পুরসভার বিরোধী দলের কাউন্সিলররা অভিযোগ করেছেন, বাস্তবে কলকাতায় হেলে পড়া ও বিপজ্জনক গাছের সংখ্যা সমীক্ষা রিপোর্টের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। পুরসভা মৃত গাছের সংখ্যাও গোপন করতে চাইছে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুরকর্তারা পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, গাছ নিয়ে কোনও তথ্য ও ছবি থাকলে বিভাগীয় মেয়র পারিষদের ঘরে জমা দিন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা হবে।
দূষণমুক্ত পরিবেশের লক্ষ্যে পুরসভার বিভাগীয় মেয়র পারিষদ তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “চলতি আর্থিক বছরে মহানগরে অক্সিজেনের জোগান আরও বাড়াতে ৫০ হাজার নতুন গাছ লাগানো হবে। সঙ্গে বড় রাস্তা ও পার্কে যে সমস্ত পুরনো গাছ আছে, সেগুলির ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করবেন পুরসভার উদ্ভিদবিদরা।”
বিপজ্জনক এই গাছগুলির তালিকায় মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কদম, বট-অশ্বত্থ, সজনে থেকে শুরু করে বহু প্রাচীন বৃক্ষ রয়েছে। উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি বড় বিপজ্জনক কদম গাছ রয়েছে, যেগুলির মূল কাণ্ড ফাঁপা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ডালপালা স্বাভাবিক থাকায় মাথা ভারী হয়েছে।
মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, "মৃত গাছগুলি সবার আগে কেটে সরিয়ে দেওয়া হবে। হেলে পড়া গাছগুলির মধ্যে কিছু ছাঁটা ও কিছু কেটে ফেলা হবে। তবে যে গাছগুলির গোড়া ক্ষয়ে গিয়েছে, শিকড় আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়েছে, সে বিপজ্জনক গাছগুলি বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে কেটে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের প্রাণ সবার আগে, তাই ধুঁকতে থাকা ‘অসুস্থ গাছ’কে সুস্থ করার চেষ্টা থাকলেও, প্রয়োজনে বড় পুরনো গাছ কাটবে পুরসভা।”
