সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মনে পড়ে ‘লগান’ ছবির সেই গান? শুষ্ক জমির বুকে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জন্য আকুতি। এমন হাহাকার অদূর ভবিষ্যতেই আমাদের চেনা দৃশ্য হয়ে উঠতে পারে। এমনই আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড তথা WWF। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যেই তীব্র জলকষ্টে (Water risk) ভুগতে হতে পারে সারা পৃথিবীর ১০০টি শহরকে। যার মধ্যে রয়েছে কলকাতা-সহ (Kolkata) দেশের ৩০টি শহরের নাম! প্রসঙ্গত, তালিকায় থাকা প্রায় ৫০ শতাংশ শহরই চিনে অবস্থিত।
সম্প্রতি WWF Water Risk Filter নামে এক সমীক্ষা চালায় ওই সংস্থা। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আগামী দিনে বিশ্বের ১০০টি শহরে জলের সংকট চরমে ওঠায় ভুগতে হবে ৩৫ কোটি মানুষকে। একফোঁটা জলও সেখানে হয়ে উঠতে পারে মহার্ঘ। সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, ভারতের শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, জয়পুর, ইন্দোর, অমৃতসর, পুনে, শ্রীনগর, বেঙ্গালুরু, কোঝিকোড় ও বিশাখাপত্তনম।
[আরও পড়ুন: চাঁদের সূর্যালোকিত অংশেও রয়েছে জল! এতদিনের ধারণা ভেঙে বৈপ্লবিক আবিষ্কার নাসার]
WWF India-র এক কর্তা সেজাল ওয়ারার কথায়, ‘‘ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শহরের উপরে। দ্রুতহারে নগরায়ণ শুরু হয়েছে এখানে। ফলে ভারতের উন্নয়ন ও স্থায়িত্ব তাদের উপরেই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তাই শহরে বেশি করে জলাশয় ও জলাভূমির সংরক্ষণ করা একান্তই প্রয়োজন।’’
জলকষ্ট অবশ্য এই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েই ভালো বেগ দিচ্ছে দেশকে। গত কয়েক বছরে চেন্নাইয়ের মতো শহরে জল সরবরাহের বিরাট সমস্যা দেখা গিয়েছে। যা এই সমীক্ষার দাবিকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলছে। কিন্তু এর থেকে বাঁচার কোনও উপায়ই কি নেই? সেবিষয়ে অবশ্য আশার কথা শোনাচ্ছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, এখন থেকেই যদি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সঠিক ও কঠোর পদক্ষেপ করা যায় তাহলে এই বিপদ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল পরিকল্পনা অনুযায়ী নগর রূপায়ণ এবং জলাশয় সংরক্ষণ। এছাড়াও জল সংরক্ষণ ও জলের খরচ হ্রাসের মতো পদক্ষেপও কার্যকরী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিপদ কেবল ভারতের নয়। ২০১৫ সালেই নাসার উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ঘেঁটে দেখা গিয়েছিল সারা পৃথিবীর ৩৭টি বৃহত্তম জলাজমির মধ্যে ২১টিই ভুগছে জলের সমস্যায়। দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যা কিংবা শিল্প ও কৃষির চাহিদা বৃদ্ধির মতো নানা বিষয়ের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এমন আশঙ্কার কথাও শোনা গিয়েছে যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে জলের জন্য। ফলে সামনের দিনে সাবধানতা অবলম্বন না করলে বিপদ যে আরও বাড়বে তা ধরে নেওয়াই যায়।