সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অতীত কেমন ছিল, ভবিষ্যৎই বা কেমন হতে চলেছে? এই প্রশ্ন নিরন্তর তাড়িত করে তোলে উৎসুক মানুষজনকে। সেই জিজ্ঞাসা থেকে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা চলে। তার সূত্র ধরে অতীতের একটা ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে আমাদের চোখের সামনে। এবার প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বদলে যাওয়ার কাহিনি তুলে ধরলেন গবেষকরা। নীল নদের 'খামখেয়ালি' প্রবাহের কারণে সভ্যতা ধীরে ধীরে বদলেছে। সম্প্রতি পলিমাটি এবং কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক নমুনার বিশদে পরীক্ষা করে অনেক অজানা তথ্যই প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁরা। সেসব আবিষ্কারের সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে 'অ্যান্টিকুইটি' জার্নালে।
মিশরের পর্যটনে অত্যন্ত বিখ্যাত কার্নাক। নীল এবং থিবিস নদীর ধারে লুক্সর এলাকায় মন্দির, মসজিদের মিলিত স্থাপত্যে যে উপাসনালয়গুলি গড়ে উঠেছিল প্রাচীনকালে, প্রায় ৩ হাজার বছর আগে সেসব তৈরি হয়েছিল। কার্নাকের ভগ্নাংশ এখনও ভালোভাবে সংরক্ষিত। ভূতাত্ত্বিক পর্যটনস্থল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ইতিহাসে মোড়া এই খোলামেলা কার্নাক। মরুদেশের বুকে এই অংশ পুরাণের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, ঠিক কেন এই জায়গাটিকেই বেছে নেওয়া হল কার্নাক তৈরির জন্য।
মিশরের ঐতিহাসিক কার্নাক।
উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. অ্যাঙ্গাস গ্রাহাম এবং সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. বেন পেনিংটন জানিয়েছেন, ৬১ টি পলিস্তর এবং হাজারের বেশি মাটি থেকে উত্তোলন করা নমুনা পরীক্ষায় কার্নাকের সময়কাল চিহ্নিত করা গিয়েছে। ২৫৯১ থেকে ২৫১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এসব গড়ে উঠেছিল। নদীর জলে ধুয়ে যাওয়ার দ্বীপাঞ্চল তখন বসবাসের যোগ্য ছিল না। পরবর্তীতে নীল নদের প্রবাহ বদলে যায়। যদিও মিশরবাসীর বিশ্বাস, এই কার্নাক গড়ে ওঠার নেপথ্যে প্রাচীন মিশরের কোনও পুরাণের ভূমিকা আছে। কিন্তু এখনকার অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, যাঁরা কার্নাক তৈরি করেছেন, তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবেই এই জায়গায় পছন্দ করেছেন। আর নদীর প্রবাহের 'কাহিনি' ঘিরে তাকে পবিত্র স্মৃতিসৌধের তকমা দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, নদীতীরের সভ্যতা গড়ার বিষয়টি অনেক পরে শিখেছেন মিশরবাসী। প্রথমদিকে মরু এলাকার যেখানে খাল রয়েছে, তার তীরবর্তী স্থানে বসতি স্থাপন করা হয়। ইতিহাসের এই সাক্ষ্যই বলে দেয়, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা কীভাবে পুরাণ, পরিবেশের সঙ্গে গভীরতর সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে অবশ্য লুক্সর শহরটি একেবারে সমতল এবং পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তবে বিস্তর গবেষণার পরও ইতিহাসবিদরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটাই প্রাচীন মিশরের হৃৎপিণ্ড।
