চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: জীববৈচিত্র্যের সন্ধানে নেমে বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়সার খোঁজ পাওয়া গেল হলদি নদীর বুকে জেগে ওঠা ‘হলদি’ দ্বীপে। হেরিটেজ তকমা পাওয়া মহিষাদল ব্লকের অন্তর্গত এই দ্বীপে সম্প্রতি প্রাণী বিজ্ঞানী গবেষকদের চোখে ৪২ প্রজাতির মাকড়সা ধরা পড়েছে। বর্ষার মরশুম চলছে। স্বাভাবিকভাবে পরিবেশে পোকামাকড়ের উৎপাত থাকেই। হলদি দ্বীপেও তার ব্যতিক্রম নেই। যাকে আমরা পোকামাকড় বলি, সবুজে মোড়া এই দ্বীপটিতে তেমন বেশ কিছু নতুন অতিথির সন্ধান পেলেন জীব বিজ্ঞানের গবেষক থেকে অধ্যাপকদের দল।
মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শুভময় দাস বলেন, “যদি সন্ধিপদী জীবটার বুক থেকে তিন জোড়া পা বের হয়, তাহলে সে পোকা। আর চার জোড়া পা বের হলে তবে সে মাকড়।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদি মাকড়সা বৈচিত্র্য নিয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক কাজ হয়ে গেল মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। এই দ্বীপভূমিতে বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী, মাছ, পাখি, জোনাকিদের নিয়ে গবেষকরা মেতে আছেন দিনরাত। গবেষণা করছেন অধ্যাপক শুভময় দাস এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীরা।
গত পাঁচ বছর ধরে নিরন্তর গবেষণা করে এই ছোট্ট দ্বীপে মাকড়সার অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র তাঁরা উদ্ধার করেছেন। মোট ১৩ টি গোত্রের ২৪ টি গণের এবং ৪২টি প্রজাতির মাকড়সা উদ্ধার করা হয়েছে। হলদি চর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।
[আরও পড়ুন: আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে সেক্সটরশনের নতুন ছক! ফাঁদে পা দিলেই ফাঁকা হচ্ছে অ্যাকাউন্ট]
কীভাবে এল এই সমস্ত প্রজাতি? সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয়টি হল ধীরে ধীরে এই বৈচিত্র্য বাড়ছে। তাদের আচার-ব্যবহার, বাসার বৈচিত্র্য এবং এই বিচ্ছিন্ন ছোট্ট দ্বীপে এদের ভিন্ন খাদ্যাভাস চিহ্নিত করছেন গবেষক দলের সদস্যরা। সারা ভারতে যেখানে ৬০টি গোত্রের মাকড়সা পাওয়া যায়। সেখানে এই এলাকায় ১৩টি গোত্রের হদিশ মেলায় আশার কথা শোনায়। গবেষকের দল তাদের খোঁজ পেয়েছেন গাছে, মাটিতে, পাতায়, জলে, গর্তে, গাছের কোটরে এমনকি পাখির বাসায়।
‘আর্টেমা আলানটা’ অলংকার প্রজাতির মাকড়শা বেশি এখানে। রয়েছে ‘অরানেদি’, ‘সিলভার আর্জিওপস’ এবং ‘সলটিসাইড’ গোত্রের প্রচুর মাকড়সা। চোখের বিশেষ গঠনের ওপর ভিত্তি করে এই ধরনের মাকড়সা শনাক্তকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। মাকড়সা যেহেতু অন্যান্য জীবদের পোকামাকড়দের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাই অন্যান্য পোকামাকড় দমনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এদের ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া বা এদের টিকে থাকা প্রমাণ করে ধীরে ধীরে এই বাস্তুতন্ত্র এখানে কতটা দ্রুত মজবুত হচ্ছে। এই মাকড়সা শনাক্তকরণের কাজে সহযোগী হিসেবে রয়েছে জুলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া। বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থাও শনাক্ত করে দিচ্ছে এই ভিন্ন প্রজাতির মাকড়সা। এরপর অন্যান্য কীটপতঙ্গ, পাখি, সরীসৃপ, কাঁকড়া ইত্যাদি শনাক্তকরণের কাজ চলবে বলেও জানা গিয়েছে।